কলকাতা, ৭ সেপ্টেম্বর (হি.স.): রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়কদের জন্য বড় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ঢালাও বেতন বাড়ল রাজ্যের বিধায়ক, প্রতিমন্ত্রী ও পূর্ণমন্ত্রীদের। পুজোর আগে একধাক্কায় রাজ্যের বিধায়কদের বেতন বাড়ল ৪ গুন । প্রত্যেক ক্ষেত্রে ৪০ হাজার টাকা করে বেতন বাড়ানো হল। বাংলার বিধায়কদের বেতন আগে ছিল ১০ হাজার টাকা। সেখান থেকে বেড়ে নতুন বেতন হল ৫০ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীদের বেতন ১০ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে হল ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের বেতন ১১ হাজার টাকা থেকে বেড়ে হল ৫১ হাজার টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনকক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করলেন। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় ‘বাংলা দিবস’ এবং রাজ্য সঙ্গীতের প্রস্তাব পাস হয়। সেই ভোটাভুটি মেটার পরই বিধায়কদের বেতনবৃদ্ধির ঘোষণা করেন মমতা। জানান, দেশের মধ্যে বাংলার বিধায়করাই সবচেয়ে কম বেতন পান। মমতা এদিন বলেন, “চলাফেরা, দু’টো খাওয়া, সবই ওই টাকায় করতে হয়। সেটা পর্যবেক্ষণ করেই সিদ্ধান্ত।”
রাজ্যের সব বিধায়ক, প্রতিমন্ত্রী এবং পূর্ণমন্ত্রীদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে। মমতা জানান, প্রতি মাসে এতদিন ১০ হাজার টাকা বেতন পেতেন বিধায়করা, তা বেড়ে ৫০ হাজার টাকা হল। প্রতিমন্ত্রীরা ১০ হাজার ৯০০ টাকা পেতেন, তা হল ৫০ হাজার ৯০০। পূর্ণমন্ত্রীদের বেতন ১১ হাজার থেকে বেড়ে হল ৫১ হাজার টাকা। তবে শুধুমাত্র বেতন পান না বিধায়ক-মন্ত্রীরা। ভাতা এবং কমিটির বৈঠকে যোগদানের জন্যও বাড়তি টাকাও পান। এতদিন বিধায়কদের মোট বেতন ভাতা-সহ ছিল ৮১ হাজার টাকা । এবার থেকে তা বেড়ে দাঁড়াল ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা । ভাতা-সহ রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মোট বেতন ছিল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৯০০ টাকা । এদিন থেকে তা বেড়ে দাঁড়াল ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা । আর পূর্ণমন্ত্রীদের মোট বেতন ভাতা-সহ ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াল ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ।
মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণা করার পরই হাততালিতে ফেটে পরে চারিদিক। সকলে প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রীর। তবে এদিন নিজের বেতনে কোনও সংশোধন ঘটাননি মমতা। সেই নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। জানান, সকলের বেতন বাড়ল, শুধু মুখ্যমন্ত্রী নিজে নিলেন না, এ কেমন করে হয়! তিনি বলেন, “আপনি বেতন নেন না, সেটা আপনার মহানুভবতা। কিন্তু সংশোধনটা আপনার ক্ষেত্রে হলেও ভাল হতো। অন্তত খাতায়-কলমে। নইলে ঠিক দেখায় না।” হাত তুলে নমস্কার করে সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন মমতা।
এর পর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “স্পিকারকে সম্মান জানিয়েই বলছি, সাত বারের সাংসদ আমি। ১ লক্ষ টাকার বেশি পেনশন প্রাপ্য। কিন্তু একটি পয়সাও নিই না। বিধায়ক এবং মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও এক পয়সা নিইনি কখনও। আমি মনে করি, মা-মাটি-মানুষের সরকার, যতটা প্রয়োজন, ততটাই দরকার। বাইয়ের রয়্যালিটিতেই চলে যায় আমার।”
রাজ্য আর্থিক সংকটে রয়েছে বলে একাধিকবার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যার দরুন বকেয়া ডিএ মেটাতে পারেনি রাজ্য সরকার। এর মাঝেই দুর্গাপুজোর জন্য় ক্লাবগুলির বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বিধায়কদের বৃদ্ধি নিয়ে স্বাভাববিকভাবেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে।
একনজরে বেতন বৃদ্ধির হিসাব
পূর্ণমন্ত্রীদের মোট বেতন ভাতা-সহ
ছিল ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা
বর্তমানে দাঁড়াল ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
রাষ্ট্রমন্ত্রীদের মোট বেতন ভাতা-সহ
ছিল ১ লক্ষ ৯ হাজার ৯০০ টাকা
দাঁড়াল ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা
বিধায়কদের মোট বেতন ভাতা-সহ
ছিল ৮১ হাজার টাকা
দাঁড়াল ১ লক্ষ ২১ হাজার টাকা