BRAKING NEWS

জি-২০ থেকে কৃষিক্ষেত্রে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান : ভারতের জন্য একটি সুযোগ

হায়দ্রাবাদে গত ১৬ ও ১৭ জুুন (২০২৩) জি-২০ কৃষি মন্ত্রীদের বৈঠকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিতে একমত হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়েছে । হায়দ্রাবাদের বৈঠকে বিশেষত আকর্ষণীয় ও লক্ষ্য করার মতো বিষয় যেটি ছিল, তা হল অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক, এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থা রূপায়ন করা। যা খাদ্য ব্যবস্থার বিকাশের মাধ্যমে “সকলের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং পুষ্টিকর খাদ্যের প্রতিশ্রুতি” অব্যাহত রাখার জন্য অন্যান্য বিভিন্ন উদ্দেশ্য অর্জনের মূল উপকরণ হিসাবে ডিজিটাল কৌশলগুলির উপর জোর দেওয়া। “এ বিষয়টি বিশেষ করে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যার প্রয়োজনীয়তা এবং সুযোগ দুটোই রয়েছে।

বৈঠকে “ডেকান হাই লেভেল প্রিন্সিপলস ” নামে সাতটি বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সুরক্ষার ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন চালু কর্মকান্ডের পরিপূরক হিসাবে কাজ করবে । এর মধ্যে, ৬ নম্বর নীতিতে উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিচ্ছে । ৭ নম্বর নীতিতে, ডিজিটাল পরিকাঠামোতে বিনিয়োগ সহ কৃষিতে দায়িত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয় ।

কৃষি ক্ষেত্রে সক্রিয় হওয়ার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাতে, আজকের বিশ্বে, ডিজিটাল কারিগরির প্রয়োগ এবং কৃষি ক্ষেত্রকে সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী ক্ষেত্রে রূপান্তরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। এর ফলে উপযুক্ত ডিজিটাল পরিকাঠামো, সর্বজনীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধার ব্যবহার, ডিজিটাল অধিকার এবং এই ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ডেটা পাওয়ার সুবিধা, ব্যবহার এবং গোপনীয়তার নিয়মগুলি জানা প্রয়োজন। ডিজিটাল সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তির প্রচার প্রসার এবং কৃষকরা যেন এটি গ্রহণ করে সে বিষয়ে প্রচার করা দরকার। কৃষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে সমস্ত সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সহযোগিতা করারও কথা বলে। এর মাধ্যমে কৃষকদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং তাদের পারস্পরিক ভাবনার বিনিময়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্ষেতেও সহযোগিতা বৃদ্ধি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষি ক্ষেত্রে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষিতে নয়া উদ্ভাবনে সাহায্য করার জন্য ডিজিটাল পরিকাঠামোয় পর্যাপ্ত পরিমান সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও স্বীকার করে। এতে স্টার্ট-আপ, ইনকিউবেটর এবং অ্যাক্সিলারেটর সংস্থাগুলোকে দায়িত্বশীল বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপরও গুরুত্ব দিয়েছে। কৃষিতে এবং কৃষি-খাদ্য মূল্য শৃঙ্খলে উদ্যোক্তাদের সক্ষম করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে এই আহবান মূলক প্রতিবেদনে । “আমি এই ইভেন্টে “ডিজিটালি সংযোগ নেই এমন কৃষি ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার” বিষয়ক প্যানেল আলোচনা পর্বে সঞ্চালক হওয়ার বিশেষ অধিকার পেয়েছিলাম । প্যানেলে ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্টের গ্রামীণ বিকাশ এর যুগ্ম সচিব, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মহা নির্দেশক, যুক্তরাষ্টের বি এম জি এফ এর প্রতিনিধি, ভারতের কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিধি এবং ভারতের কৃষি-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তিন জন স্টার্টআপ প্রতিনিধি ।

কৃত্রিম বিদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এ আই)-এর বিশাল শক্তি ও প্রভাবকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা কৃষি খাতেই সবচেয়ে বেশি। কারন কৃষিতে সুযোগ ও সম্ভাবনা বিস্তৃত । যেমন, এর মধ্যে রয়েছে কৃষিকাজে প্রতিটি সরঞ্জামের যথাযত ব্যবহার, কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রতিটি জলবিন্দুর উপযেগিতা সুনিশ্চিত করা ৷ এছাড়া রয়েছে ,কৃষি চর্চার উন্নতি ঘটানো, বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানো, পরিষেবা উন্নত করা, খাদ্য অপচয় হ্রাস করা
জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় সক্ষম করে তোলা, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয় ।

বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা, ডেটা সেট এবং প্রযুক্তি সমন্বিত অনেকগুলি বিন্দুকে এই খাতের রূপান্তরের জন্য সংযুক্ত করতে হবে। অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত এবং সম্ভাবনাও আছে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে আছে, যেমন- জমির ধারণ ক্ষমতা এবং তার উৎপাদনশীলতা , শস্য বাছাই , শষ্যের চাহিদা এবং সরবরাহকারী, জলসম্পদ, মাটি এবং কৃষি-জলবায়ু সংক্রান্ত তথ্য, ব্যাংক এবং ঋণ দান প্রতিষ্ঠান, শস্য বীমা, উপগ্রহ ডেটার ব্যবহার , বাজার পরিসর এবং বাজারের তথ্য, কীটপতঙ্গের আক্রমণের প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য এআই সরঞ্জাম, ভয়েস, ভিডিও এবং মূল বিষয়ে যোগাযোগ সহ স্থানীয় ভাষার প্রয়োগ এআই-সক্ষম উপদেষ্টা পরিষেবা, মোবাইল টেলিফোনিক সুবিধা ইত্যাদি।
জীব- বৈচিত্র্যের স্তর, পর্যলোচনা করে কৃষকদের সহায়ক হয় এমন কৌশলগত চিন্তাভাবনায় ডিজিটাল রূপান্তরকে জোরালো করতে হবে। এর জন্য, আদানপ্রদান মূলক, সার্বিক উপযোগি এবং উন্মুক্ত ডিজিটাল ইকোসিস্টেম অপরিহার্য। ভারত ভাগ্যবান যে এই রূপান্তরের জন্য দেশে প্রয়োজনীয় তিনটি উপাদানই রয়েছে:
প্রথমত, এ আই এবং নতুন ও উদীয়মান প্রযুক্তি যেমন ইন্টারনেট অফ থিংস আই ও টি) , বিগ ডেটা, ড্রোন, ব্লকচেইন, ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম, রোবোটিক্স ইত্যাদিতে উন্নত দেশগুলোর সক্ষমতার মতই আমাদের দেশ সমৃদ্ধ। ভারতের তথ্য প্রযুক্তি শিল্প তো বিশ্বব্যাপী।
দ্বিতীয়ত, ভারতের কাছে আছে একটি প্রাণবন্ত স্টার্টআপ ইকো-সিস্টেম যা তরুন প্রজন্ম ও নতুন যুগের উদ্যোক্তাদের দ্বারা পরিপূর্ণ। যারা কৃষি এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সামাজিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদ্ভাবনী, অত্যন্ত উপকারী, লাভজনক নানা সমাধান ক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম। এবং তৃতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং অন্যান্য খাতের প্রাথমিক পর্যায়ে, একটি বৃহৎ জনসংখ্যার চাহিদার সাথে সমতুল আধার, ইউপিআই, ওএনডিসি-এর মতো ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই) স্থাপনের একটি বিশ্বব্যাপী অতুলনীয় ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে ভারতের, যেখানে অন্য দেশগুলো এই ক্ষেত্রে এখনও কৈশোরাবস্থায় আছে।

প্যানেলে থাকা তিনটি চিত্তাকর্ষক এগ্রি-টেক স্টার্টআপ ভারতেই রয়েছে। ভারতে নবজাগরন বিপ্লব ঘটেছে এবং বেসরকারি খাতের জন্য সুযোগ, সুবিধা এবং সুযোগের সদ্ব্যবহারে ভারত সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান । প্রকৃতির উদ্ভাবনী সমস্যা-সমাধান এবং কোটি কোটি বছরের বিবর্তনের দ্বারা সমাদৃত জটিল যোগাযোগ ক্ষমতা অর্জন করতে এবং প্রয়োগ করতে AI ব্যবহার করাই পরম লক্ষ্য। ওয়েকুল একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে – যা কৃষকদের তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করার জন্য সঠিক সময় এবং স্থান বেছে নিয়ে তাদের আর্থিক আয় সর্বাধিক করতে সক্ষম করে তুলবে ।

ফলাফল অনুযায়ী ডিজিটাল কৌশলগুলির প্রাধান্যের পরিপ্রেক্ষিতে, এটা লক্ষ্য করা গেছে যে এটি ডিজিটাল অবকাঠামোকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ভারতের উদ্দেশ্যগুলো স্বীকার করে যাতে এটি কৃষি বাস্তুতন্ত্রের আর্থ-সামাজিক রূপান্তরের জন্য কৃষক কেন্দ্রিক সরকারি ও বেসরকারি ডিজিটাল অনুঘটকের কাজ করে।

ভারত কৃষি খাতে পরিবর্তনের জন্য নতুন এবং উদীয়মান প্রযুক্তিগুলিকে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বেই নেতৃত্ব স্থানীয় ভিমিকা নিতে সক্ষম। একহেটরে বিভিন্ন সমস্যা উঠে এলে, সরকারকে ক্রমান্বয়ে কিন্তু সহায়কের ভূমিকা পালন করতে হবে: যেমন, সঠিক মান প্রতিষ্ঠা করা, প্রয়োজনীয় নীতি প্রবর্তন করা এবং সমালোচনামূলক ডিপিআইগুলিকে সহজতর করা। কৃষিতে ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য, বেসরকারি খাতের শক্তি প্রয়োগ করার সময় সুসংহত, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও বিষয়ের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তা এবং সমতা নিশ্চিত করা দিকে অবশ্যই লক্ষ্য দিতে হবে।

(লেখক পরিচিতি : শ্রী আর চন্দ্রশেখর

চেয়ারম্যান ডিজিটাল ফিউচার সেন্টার,  

অবসরপ্রাপ্ত সচিব, বৈদ্যুতিন, তথ্যপ্রযুক্তি টেলিকম বিভাগ  

এবং প্রাক্তন সভাপতি, নেসকম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *