‘আজাদি কা অমৃতকাল’-এ মাতাল অসম, কড়া নিরাপত্তা বলয়ে গুয়াহাটি সহ গোটা রাজ্যআলফা (স্বাধীন)-এর স্বাধীনতা দিবস বৰ্জনের আহ্বানে সায় নেই অসমবাসীর

গুয়াহাটি, ১৪ আগস্ট (হি.স.) : অসমের উগ্রপন্থী সংগঠন আলফা (স্বাধীন)-এর স্বাধীনতা দিবস বৰ্জনের আহ্বানে সায় নেই অসমবাসীর। ইতিমধ্যে আগামীকাল ৭৭-তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন তথা ‘আজাদি কা অমৃতকাল’কে কেন্দ্র করে মাতাল হয়ে পড়েছে গোটা অসম। তবে প্রতিবারের মতো স্বাধীনতা দিবসকে নিষ্কণ্টক করতে রাজ্যে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে রাজ্যের পুলিশ-প্রধান জানিয়েছেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস যাতে নির্ঝঞ্ঝাটে কাটতে পারে তার প্রতি তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে পুলিশ প্রশাসনের। এছাড়া অসমে সব আন্তর্জাতিক সীমান্তে কড়া নজরদারি রেখেছে বিএসএফ জানিয়েছেন তিনি।

উজান অসমে এনএসসিএন-এর সঙ্গে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে আলফা স্বাধীন। তাই স্পর্শকাতর ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, শিবসাগর ইত্যাদি জেলায় আধা-সেনা ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে অসম পুলিশের ব্ল্যাকপ্যান্থার। কোথাও কোথাও ভারতীয় সেনাকে প্রস্তুত থাকতেও বলা হয়েছে। আলফা, এনএসসিএন-এর কষ়েকটি দল তিনসুকিয়া জেলার অরুণাচল প্রদেশ সীমান্তে প্রবেশ করার খবর পেয়ে সম্ভাব্য ঘন জঙ্গলে আধা-সেনা ও ব্ল্যাকপ্যান্থার অভিযান চালিয়েছে, জানিয়েছিলেন ডিজিপি।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসে যে কোনও নাশকতা ঠেকাতে রাজধানী গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের প্রায় সব প্রান্তে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থান বিশেষে জারি করা হয়েছে হাই অ্যালার্ট। নিরাপত্তার খাতিরে স্বাধীনতা দিবসের রাজ্য-ভিত্তিক কেন্দ্রীয় কার্যক্রমস্থল গুয়াহাটির খানাপাড়া ময়দানে প্রবেশের জন্য তৈরি করা হয়েছে চারটি গেট৷ খানাপাড়া ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ভাষণ দেবেন। অন্যান্য মন্ত্রী, শীর্ষ আধিকারিক এবং বিশিষ্ট আমন্ত্রিত নাগরিকরা এসে অংশগ্রহণ করবেন। তাই বিশেষ ওই স্থানের নিরাপত্তার প্রতি লক্ষ্য রেখে সংস্থাপন করা হয়েছে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা৷
এছাড়া রাজ্যের সদর পুলিশ দফতর থেকে প্রতিটি জেলা ও থানাকে নিরাপত্তার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে অতি সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রাজধানী গুয়াহাটিতে যাতে কোনও সন্দেহজনক সন্ত্রাসী বা দুষ্কৃতী প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জলপথ, সড়কপথ, রেলপথের ওপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। গত প্রায় সপ্তাহখানেক থেকে অসম পুলিশের বিভিন্ন দল ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর শরাইঘাটের পুরনো ও নতুন সেতুতে নজরদারি রেখেছে। এছাড়া বিভিন্ন ঘাট যেমন উত্তর গুয়াহাটির পারাপার ঘাট, পাণ্ডুঘাট, শুক্লেশ্বরঘাটে পুলিশ ও আধাসেনারা টহল দিচ্ছেন। পুলিশের পৃথক দল ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা সহযোগে টহল দিয়ে চলেছেন। নদীতে জল পুলিশ, ট্রেন ও রেলওয়ে স্টেশনে আরপিএফ-জিআরপিএস, ভূতল সড়কে আধাসেনা ও সাধারণ পুলিশ প্রতিটি যানবাহনে তল্লাশি করছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের প্রতি লক্ষ্য রেখে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল গুয়াহাটি রেলস্টেশনে অতিরিক্তভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। স্টেশনে সর্বক্ষণ কুইক রেসপন্স টিমের নিরাপত্তারক্ষী পালা করে মোতায়েন করা হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন সশস্ত্র আরপিএসএফ জওয়ানদের সাথে আরপিএফ-কর্মীরা। স্টেশনের প্রত্যেকটি শিফটে প্রায় ৩০ জন জিআরপিএস জওয়ান নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন। সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে কামাখ্যা স্টেশন ও আশপাশ এলাকায়ও। কামাখ্যা স্টেশনে নিয়মিত তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে। নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে এ ধরনের রেলস্টেশন চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী। রয়েছে পেট্রোলিঙের ব্যবস্থা। রেলস্টেশন, ট্রেন, প্ল্যাটফর্ম চত্বরে স্নিফার ডগ দিয়ে নাশকতাবিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। কর্মক্ষম করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলিকে।
সমস্ত বড় স্টেশন ও ইয়ার্ডগুলোতে আগাম সাবধানতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাতে স্টেশন আর ইয়ার্ডে গিয়ে গ্যাজেটেড অফিসাররা নজরদারি করেন। এছাড়া গুয়াহাটি মহানগরের দিশপুর, খানাপাড়া-সহ সব ব্যস্ত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সোদা পোশাকের পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *