করিমগঞ্জে মাতৃভাষা শহীদ দিবস পালন ডিএসও”র

করিমগঞ্জ (অসম), ২১ জুলাই (হি.স.) : করিমগঞ্জে মাতৃভাষা শহিদ দিবস দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করলো ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া ডিএসও”র করিমগঞ্জ জেলা কমিটি। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় সংগঠনের জেলা কার্যালয়ের মুখস্থ প্রাঙ্গনে অস্থায়ী শহীদ স্থাপন করা হয়। শহীদ বেদীতে ডিএসওর কর্মীরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে।

এসইউসিআই কমিউনিস্ট দলের করিমগঞ্জ জেলা কমিটির প্রবীণ সদস্য কমরেড পরিমল চক্রবর্তী প্রথমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন, তারপরে দলের আরেক প্রবীণ সদস্য কমরেড অজয় চৌধুরী শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র সংগঠনের করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি সুজিৎ কুমার পাল, সম্পাদিকা সঞ্চিতা শুক্ল সহ সংগঠনের অন্যান্য কর্মীরা।
জেলা সভাপতি সুজিৎ কুমার পাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন যে, প্রতিবছরই শহীদের রক্ত মাখা স্মৃতি নিয়ে “একুশে জুলাই” মাতৃভাষা শহীদ দিবস আসে। মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে সেই ১৯৮৬ সালের একুশে জুলাই তারিখের শহীদ জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস এর রক্তঝরা পবিত্র দিনটির কথা। ঐদিন করিমগঞ্জে ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র যুবকদের উপর উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী প্রফুল্ল মহন্ত সরকার অত্যন্ত নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছিল ফলে মাতৃভাষার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার্থে করিমগঞ্জের দুই সন্তান জগন্ময় দেব ও দিব্যেন্দু দাস নৃশংসভাবে পুলিশের গুলিতে শহীদের মৃত্যু বরণ করে। তাদের এই বলিদান বৃথা যায়নি। সরকার ভাষা সার্কুলার স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়। তাই উনিশে মে এবং একুশে জুলাই এর আন্দোলন বরাক উপত্যকার অত্যন্ত গৌরবের এবং আত্মমর্যাদার ইতিহাস।
জেলা সম্পাদিকা সঞ্চিতা শুক্ল বলেন যে অসমে উগ্র প্রাদেশিকতা বাদী শক্তির মদতে সরকার জোর করে বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষা বাধ্যতামূলক করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জোর করে কোন ভাষা কাউকে শেখানো যায় না বরং তার ফল হয় বিপরীত। মানুষ তার আপন গতিতে অন্যের ভাষাকে শিখে এবং ঠিক সেইভাবেই অসমীয়া ভাষাকেও মানুষ শিখেছে কিন্তু জোর করে অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং অসমীয়া ভাষা শেখা বিলম্বিত হচ্ছে। তাই উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে সরকার যেন বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষাকে বাধ্যতামূলক করা থেকে বিরত থাকে, না হলে ফল হবে তার ঠিক উল্টো আর এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। বেশ কয়েক বছর ধরে আসামে উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে আসাম সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে এবং সুচতুরভাবে বরাক উপত্যকায় প্রচারিত সরকারি। নির্দেশাবলী, বিজ্ঞাপন, প্রচার পত্র প্রভৃতিতে অসমীয়া ভাষা ব্যবহার করে অসম রাজ্য ভাষা আইন অমান্য করছে। এছাড়াও অসম সর্বশিক্ষা অভিযান মিশন কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা পাঠ্য পুস্তকের নামাকরণে অসমীয়া শব্দ প্রয়োগ, পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত শব্দ ভান্ডারে অসমীয়া শব্দ সংকলন, অসমীয়া বাক্য ব্যবহার, বাংলা বানান পদ্ধতি যথাযথ অনুসরণ না করে বাংলা শব্দকে বিকৃত করে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হচ্ছিল। এইভাবে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ভাষার প্রশ্নে মৌলিক অধিকার হরণ করার গভীর চক্রান্ত চলছে।
বলেন যে, বরাক উপত্যকার সংগ্রামী ছাত্র যুব সমাজ তথা সমস্ত স্তরের জনসাধারণকে বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলার উপর নিরবচ্ছিন্ন আগ্রাসনের মত জঘন্যতম নগ্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর গত্যন্তর নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *