BRAKING NEWS

শীঘ্র অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করা উচিত, বলেছেন ভিএইচপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি

– প্রাথমিক অগ্রাধিকারের বলে মণিপুরে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান

– মণিপুরে দ্রুত বাড়ছে খ্রিষ্টানদের জনসংখ্যা, ধর্মান্তরণ রোধে কড়া আইন প্রণয়নের দাবি
– আগরতলায় অনুষ্ঠিত বিশ্বহিন্দু পরিষদের দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত যোজনা বৈঠকে

– ৩১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশ ব্যাপী শৌৰ্য যাত্রার সিদ্ধান্ত
আগরতলা, ১৬ জুলাই (হি.স.) : শীঘ্র দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফৰ্ম সিভিল কোড – ইউসিসি) কার্যকর করা উচিত, বলেছেন বিশ্বহিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমার। এছাড়া তিনি মণিপুরে প্রাথমিক অগ্রাধিকারের বলে শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, মণিপুরে দ্রুত বাড়ছে খ্রিষ্টানদের জনসংখ্যা। তাই ধর্মান্তরণ রোধে কড়া আইন প্রণয়নের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
গতকাল শনি ও আজ রবিবার দুদিন ব্যাপী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত যোজনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আগরতলার খয়েরপুরে অবস্থিত সেবাধামে। বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ভিএইচপি-র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি আইনজীবী অলোক কুমার। যোজনা বৈঠক শেষে রবিবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নানা বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেছেন।

অলোক কুমার বলেন, সংবিধানের ৪৪ ধারা অনুচ্ছেদে সমস্ত ভারত জুড়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কর্তৃক নাগরিকদের জন্য সমান নাগরিক সমতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় সরকারের সুপারিশে লো কমিশন এ জন্য ভাবনাচিন্তা করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই তা যেন শীঘ্র সম্পন্ন হয়। তব অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রবর্তন করার আগে সকলের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।’

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমার আরও বলেন, ভিএইচপি ইউনিফর্ম সিভিল কোড নিয়ে আইন কমিশনের গৃহীত রেফারেন্স স্বাগত জানিয়েছে। সংবিধানের কয়েকটি ধারার বিষয়েও ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বলেন, এসটি সম্প্রদায়ের সাথে কিছু বাধ্যবাধকতা ধার্য করে দেওয়া হয়েছে। তাই এ সব কথা মাথায় রেখেই ইউসিসি লাগু করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ নাগাল্যান্ডে কখনও কেন্দ্রীয় আইন চালু করা যাবে না, যতক্ষণ সেখানকার বিধানসভা সমর্থন করবে না। এ ধরনের সকল বাধ্যবাধকতা মেনে যে সকল বিষয়ে সহমত হওয়া যাবে সম্মানপূর্বক সেই সব বিষয় নিয়ে ইউসিসি তৈরি করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অলোক কুমার।

বিশ্বহিন্দু পরিষদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ক্ষেত্র সংগঠনমন্ত্রী দীনেশ তেওয়ারি, দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েককে পাশে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অলোক কুমার জানান, দুদিবসীয় যোজনা বৈঠকে মণিপুরে সংঘটিত হিংসাত্মক ঘটনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। প্রথম প্রায়োরিটি হলো সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনা। আজও তিনশোর বেশি শিবিরে রয়েছেন ওই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা। সে সব বাসিন্দারা রোজগার করতে পারছেন না, তাঁদের সন্তানরাও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই সেখানে শান্তির পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করতে হবে যাতে তাঁরা নিজেদের গৃহ তৈরি করে স্বাচ্ছ্ন্দ্য জীবনযাপন করতে পারেন।

তিনি জানান, বিশ্বহিন্দু পরিষদের কর্মকর্তারা মণিপুরের ত্রাণ শিবিরগুলোতে গিয়ে সেবা প্রদান করছেন। তাছাড়া যে সকল মন্দির ভাঙা হয়েছে, দেশের সমগ্র হিন্দু সংগঠনকে নিয়ে সেই সব মন্দির পুনঃনির্মাণ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। আফিঙের চাষাবাদ বন্ধ করা এবং মাদক ব্যবসা বন্ধ করার দাবি উঠেছে যোজনা বৈঠকে, জানান অলোক কুমার।

অলোক কুমার বলেন, ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জনসংখ্যা ছিল ৫ শতাংশের কম। ২০০১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। এভাবে দিন দিন বেড়ে চলেছে খ্রিষ্টানদের জনসংখ্যা। খেদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আদতে তাঁরা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকই নন। ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান হয়েছেন। খ্রিষ্টান মিশনারিরা বিনামূল্যে পড়াশোনা, চাকরি সহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করছে। তাই ধর্মান্তরণ রোধ করতে কড়া আইন প্রণয়ন করার পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বী ছেলেমেয়েদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান অলোক কুমার।

তিনি জানান, হিন্দু সমাজে বিশ্বাস জাগানোর জন্য বজরং দল আগামী ৩১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশ ব্যাপী শৌর্য রথ যাত্রা বের করবে। এতে হিন্দু যুবকরা জেগে উঠবে। সাথে সমাজে বার্তা যাবে যে হিন্দু সমাজ সংগঠিত ও শক্তিশালী রয়েছে। যারা হিন্দুদের প্রলোভন দেখিয়ে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত করেন, তাদের কাছেও একটা বার্তা যাবে যে, ধর্মান্তরণ করা আর সহজ ব্যাপার নয়। তাছাড়া ওই সময়কালে সাধুসন্তরা পদযাত্রা করবেন বলে জানান তিনি।

অলোক কুমার জানান, ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভগবান শ্রীরাম জন্মভূমি অযোধ্যায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে সমগ্র এলাকার কুয়ো, পুকুর ইত্যাদি থেকে ২০০ মিলিলিটার পরিমাণ করে জল পাঠানো হবে। সেই জল সহ দেশের অন্যান্য স্থানের জল দিয়ে ভগবান রামের অভিষেক করা হবে।

রবিবার বিকেল চারটায় গুজরাট বটদ্রবা জ্ঞান আশ্রমের মঠাধ্যক্ষ ১০৮-তম বিবেকানন্দ সরস্বতী মহারাজ এবং চিত্ত মহারাজ বৌদ্ধিক প্রদান করেন। দুদিন ব্যাপী দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত যোজনা বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের দক্ষিণ অসম প্রান্ত সংঘচালক জ্যোৎস্নাময় চক্রবর্তী, মাতৃশক্তি কেন্দ্রীয় সংযোজিকা মীনাক্ষী তাই, দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত সংগঠন মন্ত্রী পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল, সম্পাদক স্বপন শুক্লবৈদ্য, ত্রিপুরা উপ-প্রান্ত সংগঠনমন্ত্রী মহেন্দ্র পাল সিং, উপ-প্রান্ত সম্পাদক শঙ্কর রায় প্রমুখ। যোজনা বৈঠকে দক্ষিণপূর্ব প্রান্তের অন্তর্গত ত্রিপুরা উপ-প্রান্ত, মণিপুর উপ-প্রান্ত, মিজোরাম উপ-প্রান্ত, দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত প্রচার ও প্রসার প্রমুখ শমীন্দ্র পাল এবং অসমের বরাক উপত্যকার তিন সহ ডিমা হাসাও জেলার কার্যকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *