আগরতলা ২৮ জুন : পিছিয়ে পড়া উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় আমুল পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ অরুনাচল প্রদেশের তাওয়াং এ ২৪ তম উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক পাওয়ার কমিটির বৈঠকে একথা বললেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ।বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত রাজ্য হিসেবে উঠে এসেছে ত্রিপুরা, মিজোরাম ,অসম এবং অরুণাচল প্রদেশ ।এই অঞ্চলকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হাব হিসেবে
গড়ে তোলার উদ্যোগ চলছে বলেও জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ । এই বৈঠকে রাজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সাতটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রতনবাবু জানান, বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৮২ কিলোমিটার ১৩২ কিলো ভোল্ট লাইনের পুরানো পরিবাহী তার পরিবর্তন করার জন্য রাজ্যকে ৭০ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে । এছাড়া আরো ৭৪ কিলোমিটার পিকে বাড়ি থেকে ধর্মনগর এবং ধর্মনগর থেকে দুর্লভছড়া পর্যন্ত ১৩২ কিলো ভোল্ট পরিবাহি তার পরিবর্তন করার সিদান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংক্রান্ত স্মার্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৪৪ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ত্রিপুরা SLDC তে SCADA আপগ্রেডেশন করার বিষয়েও অনুমোদন মিলেছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার এবং বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় NERPSIP প্রজেক্ট এর মাধ্যমে যে সকল নতুন বিদ্যুৎ সাব স্টেশন গঠিত হচ্ছে এবং আগামী দিনে হবে তার জন্য অতিরিক্ত কর্মী আধিকারিকদের বেতন ভাতা সংক্রান্ত সমস্ত খরচ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে বহন করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উল্লেখ্য অরুনাচল প্রদেশের তাওয়াং এ ২৪ তম উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক পাওয়ার কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ মন্ত্রী এদিন ভাষণ দিয়েছেন । এর আগে মঙ্গলবার একই স্থানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৪ তম টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক। উভয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা দেবাশীষ সরকার এবং বিদ্যুৎ পরিবহন বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার TPTL রঞ্জন দেববর্মা।
উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় পাওয়ার কমিটির বৈঠকে এদিন বিদ্যুৎ মন্ত্রী জানান, রাজ্যের ডবল ইঞ্জিন সরকার ত্রিপুরায় বিদ্যুত বিতরণ এবং উত্পাদন দক্ষতা জোরদার ও উন্নত করতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক এর (এডিবি) সাথে ২২৭৫ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সিপাহিজলা জেলার রোখিয়া এবং গোমতি জেলার গুমতি হাইড্রো প্রকল্প – দুটির ব্যাপক সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। বর্তমানে গ্যাসভিত্তিক রোখিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে এবং প্লান্টের আধুনিকায়নের মাধ্যমে এর স্থাপিত ক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে। একইভাবে ডম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ক্ষমতা ৫ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ১০ মেগাওয়াটে করা হবে।এই প্রকল্পের অধীনে বন্টন আধুনিকীকরণ এবং নির্ভরযোগ্যতার উন্নতির মধ্যে রয়েছে কভারড কন্ডাক্টর, হাই-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তির ভোল্টেজ ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (এইচভিডিএস), ফল্ট প্যাসেজ ইন্ডিকেটর (এফপিআই), অটো-রিক্লোজার এবং সেকশানলাইজার, রিং মেইন ইউনিট (আরএমইউ), স্টেট অফ দ্য আর্ট ট্রান্সফরমার টেস্টিং ল্যাব, স্মার্ট মিটারিং ইত্যাদি । উল্লেখ্য, নর্থ ইস্ট রিজিওন পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (এনইআরপিএসআইপি) ভারত সরকার এবং বিশ্বব্যাংক দ্বারা অর্থায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পরিকাঠামোগত ভাবে যে উন্নয়ন হবে এতে গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলই লাভবান হবে।
বিদ্যুৎ মন্ত্রী রতন লাল নাথ আশা প্রকাশ করে বলেন তার বিশ্বাস, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড অবশিষ্ট কাজগুলিকে ত্বরান্বিত করবে এবং খুব শীঘ্রই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করবে৷ প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলী হর ঘর যোজনা (সৌভাগ্য), দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা , সমন্বিত বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প এই অঞ্চলের দরিদ্রতম মানুষের ঘরে আলো জ্বালিয়েছে । বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন উত্তর-পূর্বাঞ্চল আঞ্চলিক পাওয়ার কমিটি হল উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করার এবং কিছু ঐক্যমত্য আনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ফোরাম। উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলির স্বার্থে, ভারত সরকারের কাছে সাধারণ মতামত এবং সমস্যাগুলিকে সম্মিলিতভাবে উপস্থাপন করার জন্যও এই সুযোগটি ব্যবহার করা উচিত। বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইক ২০২৩-এর সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি সবুজ শক্তির বিষয়ে ভারতের প্রতিশ্রুতি এবং প্রচেষ্টাকে কীভাবে সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে তার একটি স্পষ্ট অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন। এই সময়ে সৌরবিদ্যুতের ক্ষমতাও 20 গুণের বেশি বেড়েছে। বায়ু শক্তির ক্ষমতার দিক থেকে আজ ভারত বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ত্রিপুরার গোমতি জেলায় পড়ে থাকা ডুম্বুর হ্রদে 130 মেগাওয়াট ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে, ত্রিপুরা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উন্নয়ন সংস্থা সম্ভাব্যতা অধ্যয়নের এনটিপিসি এর সাথে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে৷ প্রস্তাবিত ১৩০ মেগাওয়াট ভাসমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০৩০ সালের মধ্যে 200 মেগাওয়াট সৌর শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে । এদিকে মঙ্গলবার উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের আধিকারিকদের নিয়ে আঞ্চলিক শক্তি কমিটির (এনইআরপিসি) ২৪ তম কারিগরি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় । অরুণাচলের উপ মুখ্যমন্ত্রী চৌনা মেনের নেতৃত্বে, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে জমা দেওয়ার জন্য বুধবার পাওয়ার কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
মঙ্গলবার এর বৈঠকে জি. লিঙ্গি, প্রধান প্রকৌশলী (পাওয়ার), অরুণাচল প্রদেশের সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক্যাল জোন, যেখানে কেবি জগতাপ, সদস্য সচিব (এনইআরপিসি), কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বিদ্যুৎ কর্পোরেশনের সমস্ত ঊর্ধ্বতন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন৷