কলকাতা, ১৭ জুন (হি.স.) : পঞ্চায়েতের আগেই উত্তপ্ত রাজ্য-রাজনীতি! মনোনয়ন পর্বে হিংসা, অশান্তি , বোমাবাজি! সব মিলিয়ে রীতিমত রণক্ষেত্রে বাংলা। রাজ্যের একাধিক প্রান্ত থেকে উঠে আসছে একের পর এক খুনের ঘটনা। এহেন পরিস্থিতিতে শুক্রবার বিধ্বস্ত ভাঙড় পরিদর্শনে গেছিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মনোনয়নকে ঘিরে উত্তপ্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছিল ক্যানিংয়ে । শনিবার সেই ক্যানিংযে গেলেন রাজ্যপাল । এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে ভয়ের কোনও জায়গা নেই।”
রাজভবন সূত্রে শনিবার বিকেল ৩টে নাগাদ জানা গিয়েছিল যে, যাবতীয় কর্মসূচি বাতিল করে ক্যানিং যাচ্ছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সেই মতোই বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ক্যানিং পৌঁছন তিনি। ক্যানিংয়ে পৌঁছেই সেচ দফতরের একটি ভবনে প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। ওই বৈঠকে পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকেরা ছিলেন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, বৈঠকের পর বিডিও অফিসে যাবেন রাজ্যপাল। যাবেন বুধবার হিংসা ছড়িয়ে পড়া এলাকাগুলোতেও। ক্যানিংয়ে দাঁড়িয়েই শান্তির বার্তা দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “গণতন্ত্রে ভয়ের কোনও জায়গা নেই।” তিনি হিংসা বরদাস্ত করবেন না বলেও জানিয়ে দেন বোস। আক্ষেপের সুরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজনীতিতে বাহুবলের অপব্যবহার হচ্ছে।”
বুধবার ক্যানিংয়ের যে সব এলাকা সব চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়েছিল, সেগুলির একটি হল হাসপাতাল মোড়। রাজ্যপাল সেখানেও যান। রাজ্যপাল সেখানে যাওয়ার আগে বিরোধী দলগুলির প্রতিনিধিরা জড়ো হয়েছিলেন। রাজ্যপাল পৌঁছতেই তাঁরা এই মর্মে অভিযোগ জানান যে, বিডিও অফিস তৃণমূলের গুন্ডারা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই বিরোধী দলগুলি মনোনয়ন পেশ করতে পারেননি। তাঁরা মনোনয়ন পেশের জন্য অতিরিক্ত সময় চান। রাজ্যপাল সকলের কথা শোনেন। পুলিশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। তারপর গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি।
রাজভবন সূত্রে খবর, শনিবারই তাঁর রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করে ক্যানিংয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শনিবার দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন বিজেপি সভাপতি তথা বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। পরে রাজভবনের বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিজেপি সভাপতি। সেখানে তিনি বলেন “পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ করতে বদ্ধপরিকর রাজ্যপাল। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, যে ভাবে সন্ত্রাস আটকানো সম্ভব, তা তিনি করবেন। নিজেই কাল ভাঙড়ে গিয়ে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি দেখে এসেছেন।”
গত বুধবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং। বাসন্তী হাইওয়েতে তৃণমূলের দু’পক্ষের মধ্যে বোমাবাজি এবং গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে সুনীল হালদার নামে এক তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হন বলে ক্যানিংয়ের জোড়াফুল শিবিরের একটি অংশের তরফে দাবি করা হয়। তবে পুলিশ জানায়, দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সংঘর্ষে। ক্যানিংয়ের এসডিপিও-সহ কয়েক জন পুলিশ কর্মীও ওই সংঘর্ষে জখম হন। এর প্রতিবাদে বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করা হয়। ক্যানিং তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যায়, এলাকার ব্লক সভাপতি এবং স্থানীয় বিধায়কের গোষ্ঠীর মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিবাদের জেরে বুধবার ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এই আবহে ক্যানিং শহরে সিপিএমের একটা অফিসেও হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ।
উল্লেখ্য যে, শুক্রবার রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত ভাঙড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। সেখানকার বিজয়গঞ্জ বাজার ঘুরে দেখেন তিনি। তার পর যান ভাঙড় ১ এবং ২ নম্বর ব্লক অফিসে। সেখানে কথা বলেন আধিকারিকদের সঙ্গে। তার আগে স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। ভাঙড়ে দাঁড়িয়েই হিংসার বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “গণতন্ত্রের স্বার্থে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। সাংবিধানিক ভাবে হিংসাকে নির্মূল করতে হবে। হিংসা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’