(আপডেট) ওডিশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ২৬১; আহত ৯০০ জন, উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী


বালেশ্বর, ৩ জুন (হি.স.): ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২৬১-তে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯০০ জন যাত্রী। উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। ওডিশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জানা জানিয়েছেন, এনডিআরএফ, ওডিআরএএফ, সেনাবাহিনী ও দমকল কর্মীরা সর্বশেষে বগিটি কেটে উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন।

শনিবার সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি বলেছেন, “এটা একটি বড় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রেল, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং রাজ্য সরকার উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। সম্ভাব্য সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। গতকাল ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।” এদিন দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, “উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এই দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে এবং আমরা নিশ্চিত করব ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে।”
শুক্রবার নির্ধারিত সময়েই হাওড়ার শালিমার স্টেশন থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বাংলা থেকে দক্ষিণ ভারত যাওয়ার জনপ্রিয়তম ট্রেনগুলির মধ্যে অন্যতম করমণ্ডল এক্সপ্রেস। বহু মানুষ প্রতিদিন ওই ট্রেনে চড়ে দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান চিকিৎসা করাতে। ঘড়ির কাঁটা তখন ৭টা পেরিয়েছে সদ্য। ওডিশার বালেশ্বর স্টেশন পেরনোর পর আচমকাই বিকট শব্দ। ক্রমশ গতি কমতে থাকে করমণ্ডলের। একাধিক কামরা ডান দিকে হেলে পড়তে থাকে বিপজ্জনক ভাবে। করমণ্ডলের বেলাইন হওয়া কামরা গিয়ে পড়ে পাশের ডাউন লাইনের উপর। ডাউন লাইনের উপর আড়াআড়ি গিয়ে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরা। তত ক্ষণে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে পড়েছে। কোনও ভাবে করমণ্ডল এক্সপ্রেস সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ির পিছনে। মালগাড়ির পিছনে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ধাক্কার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়ির কামরার উপরে উঠে যায়। পিছনে বেলাইন হয়ে পড়ে এক্সপ্রেস ট্রেনটির বেশির ভাগ কামরা। সেই সময়ই উল্টো দিক থেকে আসছিল বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেন। যা লাইনের উপর আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকা করমণ্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি কামরার উপর দিয়ে চলে যায়। ডাউন লাইনে পড়ে থাকা করমণ্ডলের কামরার সঙ্গে সংঘর্ষে বেলাইন হয়ে যায় হাওড়াগামী এক্সপ্রেস ট্রেনের একাধিক কামরা। ছিটকে পড়েন ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীরা।

শনিবার সকালে ওডিশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জানা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় বহু যাত্রী আহত হয়েছেন এবং বালেশ্বর, ময়ূরভঞ্জ, ভদ্রক, জাজপুর এবং কটক জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাঁরা। এ পর্যন্ত ২৬১টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ওডিশার তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, বালেশ্বরের বাহানাগাতে মর্মান্তিক রেল দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক এক দিনের জন্য রাষ্ট্রীয় শোক পালনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ৩ জুন রাজ্য জুড়ে কোনও উদযাপন করা হবে না। এদিন সকালে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীণ পট্টনায়েকও।

মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় শোকস্তব্ধ গোটা দেশ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রেল দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন এদিন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা। প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, রেলের পক্ষ থেকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জে পি নাড্ডা : বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা শোকবার্তায় জানিয়েছেন, ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহতম ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শনিবার সারা দেশে সমস্ত কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

জগনমোহন রেড্ডি : অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডি শোকবার্তায় জানিয়েছেন, ওডিশায় ট্রেন দুর্ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলছি এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে নিহতদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা। আমি ঈশ্বরের কাছে শান্তি কামনা করছি।

পুষ্কর সিং ধামি : উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, ওডিশায় ট্রেন দুর্ঘটনা হৃদয় বিদারক। আমি ঈশ্বরের কাছে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা।

অজিত পওয়ার : এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার বলেছেন, “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা, রেল বিভাগের উচিত এটি তদন্ত করা, এবং যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রেলের উচিত যাত্রীদের জীবনের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। আগে এই ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করতেন, এখন কেউ কথা বলতে রাজি নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *