নব জোয়ারের টাকা কোন ফান্ডের, কয়লা না শিক্ষা দুর্নীতির, খোঁচা ডাঃ সুভাষের

দুর্গাপুর, ২৩ মে (হি. স.) ‘নব জোয়ারের টাকা কোন ফান্ডের? কয়লা না শিক্ষা দুর্নীতির? সেটা আগে খোলসা করে বলুক। মিটিং করে উন্নয়ন হয় না। বাস্তবের মাটিতে পা রেখে উন্নয়ন হয়। তার জন্য সদিচ্ছা থাকতে হয়।” অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পাল্টা জবাবে এভাবে খোঁচা দিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষমন্ত্রী (রাষ্ট্র) ডাঃ সুভাষ সরকার।

প্রসঙ্গত, দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোট যতই এগিয়ে আসছে ততই সরগরম রাজ্যের লালমাটির জেলা বাঁকুড়া। গত লোকসভা ভোটে বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুরে কার্যত পদ্মফুল ফুটেছে। এমন কি গত পঞ্চায়েত ভোট ও বিধানসভা ভোটেও গেরুয়া শিবির ভাল ফল করেছে বিষ্ণুপুরে। আর সেটাই যেন অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের। এছাড়াও রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্র সহ নানান দিকে আষ্টেপিষ্টে দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূল। তার ওপর কয়লা, গরু পাচারে বিদ্ধ শাসকদলের একাধিক নেতা। আর ওই ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিকে ইস্যু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বামশিবির। তারওপর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। দলীয় কর্মসূচীতে বারংবার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠনকে মজবুত রাখতে আসরে নেমেছে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলে সেকেন্ড ইন্ কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় নব জোয়ার কর্মসূচী শুরু হয়েছে। বাতানুকুল বিশেষ গাড়ীতে চলছে তাঁর জেলা সফর। জেলা সফরের মধ্যেই কোথায় জনসভা, কোথায় শোভাযাত্রা আবার কোথায় অধিবেশন করছেন। তার সঙ্গে এলাকায় নিশিযাপনও করছেন। আর এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমুর্তির প্রার্থী বাছাই কাজ চলছে। তার জন্য শিবির করে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন চলছে। সোমাবার বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রে ছিল নব জোয়ারের অধিবেশন। সেখানে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারন সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলে বলেন,” শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা। তৃণমূল কংগ্রেসই ভরসা। গত চার বছর ধরে বিজেপির সাংসদরা বাঁকুড়া জেলায় কোন কাজ করতে পারেনি। উচ্চপদস্থ কোন মন্ত্রী এনে মিটিং করেছে?” তিনি আরও খোঁচা দিয়ে বলেন,” বাঁকুড়ার মানুষ খাল কেটে কুমীর নিয়ে এসেছে। সেই খাল দিয়ে কুমীরকে বিদায় দেবে বাঁকুড়ার মানুষ।”
বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষমন্ত্রী (রাষ্ট্র) ডাঃ সুভাষ সরকার তীব্র আক্রমণ করে বলেন,” অবান্তর বলছে অভিষেক। মিটিং করে উন্নয়ন হয় না। বাস্তবের মাটিতে পা রেখে উন্নয়ন হয়। তার জন্য মানসিকতা থাকতে হয়।” উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে সুভাষবাবু সাংসদ হওয়ার আগে উদ্যোগী হয়ে কেন্দ্র সরকারের অনুদানে বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর হাসপাতালের পাশে কয়েক একর জমির ওপর তৈরী হয় আধুনিকমানের সুপারস্পেশলিটি হাসপাতাল তৈরী করেছিলেন। জানা গেছে, চিকিৎসার যন্ত্রপাতিও এসে গেছে। হাসপাতালটিতে হার্টের চিকিৎসা, ওপেন হার্ট সার্জারি, ফুসফুস, কিডনির অপারেশেন, প্লাস্টিক সার্জারি, প্রেডিয়টিক সার্জারি, নিউরো সার্জারি, ব্রেনের সার্জারি, শিশু বিভাগ ও ট্রমা কেয়ার পরিষেবা থাকবে। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা চালু হলে কলকাতার হাসপাতালের ওপর যেমন চাপ কমবে। তেমনই জঙ্গলমহলের মানুষকে চেন্নাই, ভেলোর ছুটতে হবে না। কিন্তু, রাজ্যের উদাসীনতায় হাসপাতালের যন্ত্রপাতি আসলেও সেগুলি এখনও চালুই হয়নি। বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী(রাষ্ট্র) ডাঃ সুভাষ সরকার বলেন,” পরিকাঠামোর অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে। তারপরও রাজ্য সরকারের অনীহা ও চরম উদাসীনতায় সুপারস্পেশালিটি চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত বাঁকুড়া সহ চার জেলার মানুষ।” তিনি আরও বলেন,” অমৃতভারত প্রকল্পে বাঁকুড়া, বিষ্ণপুর, পুরুলিয়া স্টেশন সাজানো হবে। বাঁকুড়া স্টেশনে লিফট বসেছে। কাটজুড়ি ডাঙা হল্ট স্টেশন করা হয়েছে। ওভারব্রীজ করা হয়েছে। সর্বোপরি বারনসী এক্সপ্রেসওয়ে তৈরী করা হচ্ছে। যেটা অভিষেকের কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার দিয়ে যাবে। গঙ্গায় আরও একটি সেতু তৈরী হবে। সাংসদ তহবিলের এখনও পর্যন্ত ৫ কোটি ৮ লক্ষ টাকা এলাকার উন্নয়নে খরচ হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন,” হেরে গেলে বাঁকুড়ায় পা রাখবো না বলেছিল অভিষেক। বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর দুটো আসনই বিজেপির জয় হয়েছে। বাঁকুড়ার মানুষ এবার আড়াই লক্ষ ভোটে হারাবে তৃণমূলকে।” তিনি নব জোয়ারের খরচ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে বলেন,” নব জোয়ারের খরচের টাকা কোথা থেকে আসছে? নব জোয়ারের টাকা কোন ফান্ডের? কয়লা না শিক্ষা দুর্নীতির টাকা? নিজের পকেটের টাকা, না রাজ্য সরকারের টাকা? সেটা আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে খোলসা করে বলুক।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *