নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ মে৷৷১৯৬১ সালের ১৯শে মে এই দিনে শিলচর রেল স্টেশনে ১১ জন বাঙালিকে বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হতে হয়েছিলেন৷ শুক্রবার আমরা বাঙালি ত্রিপুরা প্রদেশের উদ্যোগে এই দিনটি উনিশের ভাষা আন্দোলনের শহীদ দিবস হিসাবে উদযাপন করা হয়৷ দলীয় কার্যালয়ে ভাষা আন্দোলের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন দলীয় কার্যকর্তারা৷ ২১ ফেব্রুয়ারী এই ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশে যেমন শহীদ হয়েছিলেন একদল মানুষ, ঠিক তেমনি ভাবে শিলচরেও ১৯৬১ সালে শহীদ হন ১১ জন৷ আমরা বাঙালি ত্রিপুরা প্রদেশের সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল এই দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন৷ সারা রাজ্যে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি৷ অসমের বুকে আসমিয়া ভাষাকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল বলে জানান তিনি৷ এই ১১ জন শহীদের মধ্যে দুজন রাজ্যের মানুষ রয়েছে বলে জানান গৌরাঙ্গ রুদ্রপাল৷ জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে ভাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন৷১৯৬১ সালের ১৯ মে আসামের বরাক উপত্যকায় ১১ টি তরুণ প্রাণ মাতৃভাষার জন্য শহীদ হয়েছিল, ভারত রাষ্ট্রে৷ ১৯৭২ ও ১৯৮৬ সালে আরও তিন তরুণ প্রাণ আত্মবলিদান দেয় সেখানে৷ তারও আগে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন মানুষ৷ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রের বাইরে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে৷ দুটো ক্ষেত্রেই মাতৃভাষার নাম বাংলা৷ চাপিয়ে দেওয়া ভাষা যথাক্রমে অসমিয়া ও উর্দু৷ এ লড়াই দুটো ভাষার লড়াই নয়, বরং আধিপত্যবাদের লড়াই৷
স্বাধীনতার পর পরই বাংলা ভাষা আসামের আধিপত্যবাদের শিকার হয়৷ ১৯৪৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলই, রাজ্যপাল আকবর হায়দারি, সাংসদ নীলমণি ফুকনরা চেষ্টা করতে লাগলেন, কীভাবে বাংলা ভাষাকে সরিয়ে দিয়ে অসমিয়াকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা করা যায়৷ তারই জেরে ১৯৬০ সালে অসমিয়া ভাষাকে একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসাবে ঘোষণা করার প্রস্তাব নেওয়া হয়৷ ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে৷ বাঙালিরা আক্রান্ত হন৷ প্রায় এক থেকে দেড় লক্ষ বাঙালি আসাম ছাড়তে বাধ্য হন৷ নয় জন বাঙালি নিহত হন৷ আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রসাদ চলিহা পুনরায় প্রস্তাব আনেন, অসমিয়া হবে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা৷ এ সবের বিরোধিতা চলতে থাকে, মূলত বাঙালিরাই করেন৷ এসবের ফলে শিলচরে ১৯৬১ সালের ১৯ মে ১১ জনকে আসাম সরকারের পুলিশ গুলি করে হত্যা করে৷ সে সব ইতিহাস৷বরাক উপত্যকা ভারতের আসাম রাজ্যের দক্ষিণাংশে অবস্থিত৷ বরাক উপত্যকার মোট আয়তন ৬৯২২ বর্গকিলোমিটার৷ এই উপত্যকার প্রধান শহর হল শিলচর৷ বরাক নদীর নাম থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়েছে৷ বরাক উপত্যকা আসামের তিনটি প্রশাসনিক জেলা নিয়ে গঠিত – কাছাড়, করিমগঞ্জ, এবং হাইলাকান্দি৷ এই তিন জেলার মধ্যে, ব্রিটিশ ভারত হওয়ার আগে, কাছাড় ছিল কাছাড়ি রাজ্যের মধ্যে, এবং করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি আসাম প্রদেশের সিলেট জেলার মধ্যে ছিল৷ ১৯৪৭ সালের বিতর্কিত গণভোটের পর, উভয় অঞ্চলকে সিলেট থেকে আলাদা করা হয় সিলেটের বাকি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের (এখন বাংলাদেশ) এবং ভারতের করিমগঞ্জের মধ্যে ভাগ হয়ে গেছে৷
2023-05-19

