করিমগঞ্জ মাতৃভাষা শহীদ দিবস পালন করলো অল ইন্ডিয়া ডি এস ও -এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটি

করিমগঞ্জ (অসম) ১৯ মে (হি.স.) : যথাযোগ্য মর্যাদায় করিমগঞ্জ মাতৃভাষা শহীদ দিবস পালন করলো অল ইন্ডিয়া ডি এস ওর করিমগঞ্জ জেলা কমিটি। শুক্রবার সকাল ৮.৩০ মিনিটে জেলা কার্যালয়ের সম্মুখে অত্যন্ত সুদৃশ্য এক শহীদবেদী স্থাপন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয় এবং সেইসঙ্গে অল ইন্ডিয়া ডি এস ওর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অফ অনার প্রদর্শন করা হয়। এস ইউ সি আই কমিউনিস্ট দলের পক্ষ থেকে অরুণাংশু ভট্টাচার্য পরিমল চক্রবর্তী তুষার দাস অজয় চৌধুরী দেবব্রত শুক্ল সহ অন্যান্যরা পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।

তারপর সেখান থেকে বেনার ফেস্টুন এবং হাতে অল ইন্ডিয়া ডিএসও র লাল পতাকা সহযোগে একটি সুসজ্জিত এবং সুশৃংখল মিছিল বের হয়। মিছলটি শহরের মুখ্য পথ পরিক্রমা করে শম্ভু সাগর পার্কের শহীদ বেদীতে অল ইন্ডিয়া ডিএসও র পক্ষ থেকে মাল্যদান এবং গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে ডি এস ওর জেলা কার্যালয়ে ১৯ মে বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সংগঠনের সভাপতি সুজিত কুমার পাল এর পৌরহিত্যে সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন সংগঠনের জেলা সম্পাদিকা সঞ্চিতা শুক্ল। সকল ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে উনিশ মে শহীদ দিবস নিয়ে আলোচনা করেন ডি এস ওর প্রাক্তন রাজ্য কমিটির সম্পাদক তথা এস ইউ সি আই কমিউনিস্ট এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটির সম্পাদক কমরেড অরুণাংশু ভট্টাচার্য। ১৯৬০ সালে আসামের তদানীন্তন রাজ্য সরকার বহু ভাষিক রাজ্যের জনগণের উপর অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিধানসভায় কুখ্যাত ভাষা আইন সংখ্যাধিক্যের জোরে পাশ করিয়ে নেয়। কিন্তু এই বিতর্কিত সর্বনাশা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয় অবিভক্ত আসামের বরাক উপত্যকা সহ বর্তমান মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ডে। তৎকালীন অবিভক্ত কাছাড় জেলায় জাতি – ধর্ম – ভাষা- বর্ণ নির্বিশেষে গড়ে উঠে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনের সংগ্রামী মঞ্চ ”গণসংগ্রাম পরিষদ”। ”জান দেব, তবুও জবান দেব না”- এই অঙ্গীকার নিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে সামিল হন ছাত্র, যুব, মহিলা সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সংগঠিত হয় একের পর এক আন্দোলন কার্যসূচি। কিন্তু রাজ্য সরকার জনসাধারণের এই আওয়াজ শুনতে রাজি ছিল না তাই ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে পালিত হয় *সত্যাগ্রহ আন্দোলন*। শিলচর রেলস্টেশনে সেদিন আসাম সরকারের নিৰ্দেশে গুলি করে হত্যা করা হয় ১১ জন মাতৃভাষা প্রেমী সত্যাগ্ৰহীকে। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত আমাদের দেশ এবং তার সরকার দেশের নীরিহ নিরপরাধ জনগণকে গুলি চালিয়ে হত্যা করবে তা সেদিন কেউ ভাবতেই পারেননি কিন্তু উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতপুষ্ঠ সরকার তা করতে দ্বিধা করেনি। সরকারের এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সেদিন গর্জে উঠেছিল দেশের ছাত্র যুবক সহ সর্ব স্তরের মানুষ। সান্ধ্যআইন ভেঙ্গে শিলচরের রাস্তায় সেদিন বেরিয়ে এসেছিলেন হাজার হাজার জনতা। অবশেষে কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপে রাজ্য সরকারের ভাষা আইনে পরিবর্তন আনা হয়। ভাষা আইনের ৫ নং ধারা সংযোজন করে বলা হয় যে অবিভক্ত কাছাড় জেলা অর্থাৎ বর্তমান বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা হবে বাংলা।

অরুণাংশু ভট্টাচার্য আরো বলেন যে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিটি সরকারি বিভাগ ভাষা আইনের ৫ নং ধারাকে উলঙ্ঘন করছে। সরকারি বিজ্ঞাপন, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, সরকারি নির্দেশিকা এমনকি পাঠ্যবইয়ে অবাধে বাংলা ভাষার পরিবর্তে অসমীয়া ভাষার প্রয়োগ ঘটানো চলছেই। অথচ দুঃখের বিষয় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে শহীদদের রক্তে রাঙানো বরাক উপত্যকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত শাসক দল সহ বিরোধী দলের বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধিরা এব্যাপারে আশ্চর্যজনক ভাবে নীরব। নিজেদের আখের গোছাতে উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির কু-চক্রান্ত বাস্তবায়নে তারাও সামিল। যদিও ইতিহাস থেকে তারা শিক্ষা নেননি। ১৯৬১ সালের ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনে অর্জিত অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত হয়েছিল ১৯৭২, ১৯৮৬,১৯৯৬ সালেও। কিন্তু মার্তৃভাষা প্রেমী জনগণের তীব্র আন্দোলন ও আত্মবলিদানে পিছু হটতে বাধ্য হয় উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে পরিচালিত আসাম সরকার।

জেলা সম্পাদক ভট্টাচার্য বলেন যে বর্তমানে ভাষিক আগ্রাসনের শিকার জনগণের ঐক্যকে ভেঙ্গে দিতে শুরু করেছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নতুন চক্রান্ত। উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদ ও উগ্র- সাম্প্রদায়িকতাবাদের এই মেলবন্ধন রাজ্যের ভাষিক সংখ্যালঘু জনসাধারণের জন্য অশনি সংকেত। রাজ্যের সাধারণ শোষিত জনসাধারণ কারো ভাষা, সংস্কৃতিকে কেড়ে নিতে চায় না। বিভাজন তৈরি করে ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে।

এই পরিস্থিতিতে তিনি বলেন ছাত্র-যুবক তথা সর্বস্তরের জনসাধারণের ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্ৰিক আন্দোলনই রক্ষা করতে পারবে মাতৃভাষার অধিকার সহ জনগণের সমস্ত ধরনের অধিকারকে। সরকারি বঞ্চনার শিকার বরাক উপত্যকার জনগণের কাছে তাই ১৯ শে মে”র ঐতিহাসিক ঘটনা আজও প্রেরণার উৎস।

বলেন, ছাত্র ছাত্রী, যুবক যুবতীদের উপস্থিতি ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়১৯ শে মে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার্থে আত্মবলিদান করা মাতৃভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের যথা যোগ্য মর্যাদায় স্মরণ করে শপথ নিতে হবে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার।

উল্লেখ্য সকাল ৭.৩০ মিনিটে অল ইন্ডিয়া ডি এস ওর বেতাইল ইউনিটের উদ্যোগে লঙ্গাই রোড বেতাইলে শহীদ বেদী স্থাপন করা হয় এবং অঞ্চলের জনসাধারণ সহ সকল ছাত্র ছাত্রীরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *