ফের অনুপ মাজি ওরফে লালাকে কয়লা পাচার মামলায় তলব সিবিআইয়ের

কলকাতা, ১৫ মে (হি. স.) : অনুপ মাজি ওরফে লালাকে কয়লা পাচার কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফের তলব করল সিবিআই৷ আগামী বুধবার তাঁকে ডাকা হয়েছে৷ আনতে বলা হয়েছে একাধিক নথিপত্র।

এর আগে গত শনিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, এবার পলাতক বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্রের বয়ান নিয়েই পালটা লালাকে প্রশ্ন করতে চায় সিবিআই ৷

আগের দিন লালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরই সিবিআই আধিকারিকরা ইসিএলের এক কর্তা ও সিআইএসএফের একজন ইন্সপেক্টরকে গ্রেফতার করেন। অভিযোগ, এই ইসিএল কর্তা ও সিআইএসএফের ইন্সপেক্টর টাকার বিনিময় কয়লা পাচারে সাহায্য করতেন। রক্ষাকর্তা হিসেবে তাঁরা ওই টাকা নিতেন।

সিবিআইয়ের অনুমান, অনুপ মাজি ও অন্যান্য কয়লা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুধুমাত্র সিআইএসএফ বা ইসিএলের কর্তারা নন, আরও অনেকেই এই ‘বাঁচানোর টাকা’ নিতেন। তাই আর কারা কারা এই ধরনের এভাবে অর্থ নিতেন, তা জানা জরুরি বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা৷ বুধবার সেই প্রসঙ্গেও অনুপ মাজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রে খবর৷

ইতিমধ্যেই সিবিআই বিকাশ মিশ্রকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এই বিকাশ মিশ্র লালার কাছ থেকে কয়লা পাচারের জন্য রক্ষাকর্তা হিসেবে টাকা

নিতেন বলে অভিযোগ৷ সেই টাকার পরিমাণ কত ছিল, সেটাও লালাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে চায় সিবিআই৷ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী ব্যুরো সূত্রের খবর, প্রয়োজন পড়লে বিকাশ ও লালার দেওয়া উত্তর মিলিয়ে দেখে পরবর্তী সময়ে বিকাশ এবং লালাকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করতে পারেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার যখন অনুপ মাজি ওরফে লালা সিবিআইয়ের কাছে হাজিরা দেন, তখন তাঁর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছিল ৷ এর আগেও তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসবাদ করেছে সিবিআই ৷ বয়ানও রেকর্ড করেছে ৷ সূত্রের খবর, সেই বয়ানগুলির সঙ্গে অনুপ মাজির এখনকার বক্তব্যে কতটা মিল রয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন তদন্তকারীরা ৷ সেই কারণে বুধবার তাঁকে ডাকা হয়েছে৷
হিন্দুস্থান সমাচার/ অশোক

দুৰ্নীতির ভূঃস্বর্গে পরিণত উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ, অভিযোগ এপিসিসির সাধারণ সম্পাদক অপূর্বের
হাফলং (অসম), ১৫ মে (হি.স.) : উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ দুৰ্নীতির ভূঃস্বর্গে পরিণত হয়েছে, গুরুতর অভিযোগ অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (এপিসিসি)-র সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব ভট্টাচার্যের।

আজ সোমবার ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের বর্ধিত কার্যনির্বাহী সভায় যোগদান করে হাফলং রাজীব ভবনে আয়োজতি সাংবাদিক সম্মেলনে এপিসিসর সম্পাদক নির্মল লাংথাসা ও ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সমরজিৎ হাফলংবারকে পাশে বসিয়ে বিজেপিকে আক্রমণের লক্ষ্য করেন অপূর্ব ভট্টাচার্য। অপূর্ব বলেন, এই দুর্নীতির সর্বাধিনায়ক হচ্ছেন উত্তর কাছাড় পার্বত্য পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য দেবোলাল গারলোসা।

তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২৯ জানুয়ারি হাফলঙে রাজ্য সরকারের ক্যাবিনেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আর ওই ক্যাবিনেট বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা ডিমা হাসাও জেলা তথা হাফলঙের জ্বলন্ত সমস্যা জলের সমস্যা নিরসনে ১১০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। কিন্তু তার পরও জলের সমস্যা সমাধানে কোনও অগ্রগতি হয়নি। এই অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পাহাড়ি জেলার বিভিন্ন নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর তুলে নদী সম্পূর্ণ সাফ করে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় পাহাড়ি নদীগুলিতে পাথর না থাকায় জল ধরে রাখতে না পারছে না। ফলে হাফলং শহরে ভয়ংকর জলের সংকট দেখা দিয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ডিমা হাসাও জেলায় ‘অসম মালা’র অধীনে রাস্তা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষতিপূরণের টাকা কারা পেয়েছেন? এই প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি বলেন, উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্যের ডান ও বামে অবস্থানকারীরাই এই ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। কিন্তু আসলে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ওই সব মানুষ তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, অভিযোগ অপূর্ব ভট্টাচার্যের।

সাংবাদিক সম্মেলনে অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, প্রকৃতির অনুপম সৃষ্টি ডিমা হাসাও এখন আর প্রকৃতির জন্য পরিচিত নয়। সমগ্র দেশবাসী জানেন ইডি-র মামলায় চিহ্নিতকারী এক ব্যক্তির নেতৃত্বে বিজেপি শাসন চলছে এই পাহাড়ি জেলায়। এখানে যেভাবে দুর্নীতি চলছে, তাতে এই পাহাড়ি জেলার উন্নতি ও উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব? এই প্রশ্ন করে তিনি বলেন, সরকারি আবাসন, স্কুল ও জমি যেভাবে বনদস্যুর মতো বেদখল হচ্ছে, এতে মনে হচ্ছে এখানে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু নেই।

এই পাহাড়ি জেলায় এক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বিজেপির ভাগ রয়েছে, মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্যের নেতৃত্বে রয়েছে আরেকটি ভাগ ও দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটি ভাগ রয়েছে। তাছাড়া না খায়ুঙ্গা না খানে দুঙ্গা-র নেতৃত্ব নিয়েছেন এক আরএসএস নেতা। এই অভিযোগ উত্থাপন করে অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, সরকারি কর্মচারী, আমলা বদলি চাকরির জন্য ও ঠিকা প্রদানের জন্য সুপারিশ করেন এই আরএসএস নেতা। তিনি আরও বলেন, ডিমা হাসাও জেলায় অবাধে চলছে কয়লার সিন্ডিকেট। সরকারিভাবে কয়লার চালান কাটা হয় ১০ টন। কিন্তু এখন ট্রাক প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টন কয়লা পাচার করা হচ্ছে। তাঁর প্রশ্ন, ১০ টনের চালান নিয়ে কীভাবে নিয়ম ভঙ্গ করে ট্রাক প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টন কয়লা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? এতে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। তা-হলে এই টাকা কার পকেটে যাচ্ছে? তাই এনআইএ-কে দিয়ে এর তদন্ত করানোর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন অপূর্ব ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, তা-হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে এর সঙ্গে কারা জড়িত। এ থেকেই পরিষ্কার, গণতান্ত্রিকভাবে এখানে শাসন চলছে না। অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইডি-র মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি কীভাবে রেহাই পান? অথচ এক কলেজ ছাত্রীকে ফেসবুকে কবিতা লেখার জন্য গ্রেফতার করা হয়! কিন্তু ইডি-র অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ার পর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য সরকারি নিরাপত্তা নিয়ে মুক্ত হয়ে চলাফেরা করছেন। কারণ ওই ব্যক্তির মাথায় দিশপুরের হাত রয়েছে, মন্তব্য করে অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেস এই পাহাড়ি জেলায় বসবাসরত জাতি-জনগোষ্ঠীর জীবন-সম্পত্তি ও প্রাপ্য অধিকার আদায়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেছে। আমরা ভয় করি না, নেতা রাহুল গান্ধীর নীতির ওপর চলবে দল।

সাংবাদিক সম্মেলনে অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, রবিবার যোরহাটে অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ভূপেন বরার সঙ্গে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদ মাধ্যম মতামত নিতে গিয়েছিল। কিন্তু সে সময় যোরহাটের জেলাশাসক যে আচরণ করেছেন তার আমি ধিক্কার জানাচ্ছি আমি। মতামত নেওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু জেলাশাসকের এমন আচরণ স্পষ্ট, সরকার ও সরকারের প্রতিনিধিরা এখন ভীতিগ্রস্ত।

তিনি কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয়লাভ প্রসঙ্গে বলেন, কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয়ে অবহেলিত নিষ্পেষিত ও উপেক্ষিত জনগণ উৎফুল্লিত। তাই আজ ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেসের বর্ধিত কার্যনির্বাহী সভায় তিনটি মণ্ডলের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জড়িত বেশ কয়কজন কংগ্রেসের সদস্য পদ গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী জুন মাসের মাঝামাঝি ডিমা হাসাও জেলায় বুথ পর্যায়ে সভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিন ডিমা হাসাও জেলায় বর্ধিত কার্যনির্বাহ সভায় ৩ নম্বর তফশিলি উপজাতি সংরক্ষিত ডিফু লোকসভা আসনে প্রার্থিত্বের জন্য নির্মল লাংথাসা ও সমরজিৎ হাফলংবারের নাম অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ভূপেন বরার কাছে প্রেরণ করেছে ডিমা হাসাও জেলা কংগ্রেস।