গুয়াহাটি, ৮ মে (হি.স.) : আসন্ন বর্ষাকালে যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে মোকাবিলা করার জন্য উত্তরপূর্ব সীমান্ত (এনএফ) রেলওয়ে একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অধিক্ষেত্রের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের অংশ ও অসম, ত্রিপুরা, মণিপুর ইত্যাদির মতো উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলিতে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৬,৪০০ কিলোমিটারেরও অধিক বিস্তৃত রেলওয়ে ট্র্যাকের উপর বিগত কয়েক মাস ধরে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই রেলপথে বর্ষাকাল বিশাল এক প্রত্যাহ্বান। প্রতি বছর ৭,০০০ এমএম প্রবল বৃষ্টিপাতে আক্রান্ত তথা নিম্ন হিমালয়ান রেঞ্জের পাদদেশের কাছে জটিল ভূখণ্ডের মধ্যে অশান্ত জলপ্রবাহের ধারায় গঠিত অঞ্চলে এই রেলওয়ে পরিষেবা দিয়ে চলেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষার স্বাভাবিক সময় হলো প্রত্যেক বছর মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। অন্যদিকে লামডিং ডিভিশনে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় বর্ষা। প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত ও ভূমি ধসের জন্য বাঁধ খণ্ড বিখণ্ড হওয়া, ব্রিজের উপর দিয়ে জলের প্রবাহ বয়ে যাওয়া ইত্যাদি ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ট্র্যাকের সুরক্ষিত ও ভালো অবস্থা নিশ্চিত করতে একটি বিস্তারিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস না করা হয়, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
তিনি জানান, এজন্য, রেলওয়ে ট্র্যাকের নিরাপত্তার লক্ষ্যে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত কৌশল প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে স্পর্শকাতর স্থানগুলিতে উপকরণের বর্ষাকালীন সংগ্রহের পূর্বে নিষ্কাশন ব্যবস্থা পরিষ্কার করা, ব্রিজের ওয়াটার ওয়ের পরিষ্কার করা, ব্রিজে বিপদস্তর চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি সম্পূর্ণ করা হয়েছে। সমস্ত ধরনের প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে নিজের অধিক্ষেত্রের অধীনে বৃষ্টিপাতের ফলে কোনও ধরনের ত্রুটি যাতে না ঘটে তার জন্য ৬,৪০০ কিমি-এরও অধিক ট্র্যাক নিরবচ্ছিন্ন নিরীক্ষণের জন্য পেট্রোলিং টিম নিয়োজিত করা হয়েছে।
এছাড়া, রেলওয়ে ট্র্যাক নিরাপদ রাখার জন্য টহলদারি মোতায়েন করা হয়েছে। এই টিম আবহাওয়া দফতরের জারিকৃত বৃষ্টিপাতের সতর্কতার উপর ভিত্তি করে টিমটি টহলদারি করে। টহলদারি করার জন্য নিয়োজিত কর্মীরা জিপিএস ট্র্যাকার, লুমিনাস জ্যাকেট, রেনকোট ও পৃথক ওয়াটারপ্রুফ ট্রাউজার, সুরক্ষামূলক হেলমেট, সুরক্ষামূলক জুতো, শক্তিশালী সার্চ/ফ্ল্যাশলাইট ইত্যাদির মতো সর্বশেষ ও অত্যাধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত। এই টিম দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ট্র্যাকে টহলদারি করে। ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে এমন যে কোনও পরিস্থিতি সম্পর্কে নিকটতম স্টেশনে যাতে খবর দেওয়া যায় তার জন্য প্রত্যেকটি টহলদারি দলের জন্য মোবাইল ফোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টহলের পাশাপাশি ভূমিধস প্রবণ অঞ্চল, বিপদসীমার উপর দিয়ে জল প্রবাহিত হওয়া ব্রিজ ইত্যাদিতে স্টেশনারি ওয়াচম্যানও নিয়োগ করা হয়েছে।
মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে আরও জানান, সতর্কতা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে ব্রিজ ভেসে যায়, বাঁধ ভেঙে যায় ও ভূমিধসের ঘটনা ঘটে। এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে এবং সম্ভাব্য ন্যূনতম সময়ের মধ্যে পুনরুদ্ধার করতে বোল্ডার, বালু, বালুর বস্তা, ব্রিজ ইত্যাদির বিভিন্ন প্রি-ফেব্রিকেটেড উপাদান ওয়াগনে লোড করা হয়েছে এবং কৌশলগত স্থানগুলিতে সেগুলি রাখা হয়েছে। যে কোনও প্রয়োজন পূরণ করতে ৭,০০০ সিইউএম-এরও অধিক বোল্ডার, পাথর ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে ওয়াগনের মধ্যে লোড করে রাখা হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ২৭,৩০০ সিইউএম বোল্ডার, ১২,৬০০ সিইউএম কোয়ারি ডাস্চ ও ৩,০০০ সিইউএম সিল্ট বর্ষাকালীন সংরক্ষণ হিসেবে রাখা হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস করা ও উপেক্ষা করা কঠিন। কিন্তু যে কোনও ধরনের আবহাওয়ায় সংযোগ ব্যবস্থা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে বর্ষার সময়ে এই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট প্রত্যাহ্বানের সম্মুখীন হওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে, প্রেসবিবৃতিতে বলেছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে।

