কলকাতা, ১৪ এপ্রিল (হি. স.) : পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস এবং সমমতাবলম্বী হিন্দু গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপের উপর নজরদারি করতে কোমড় বাঁধল সিপিএম। হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর মোকাবিলার জন্য কৌশল তৈরি করবে দলের একদল তরুণ তূর্কি।
কলকাতায় সদ্য শেষ হওয়া পার্টির দুই দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে তার সমাপনী বক্তব্যের সময় সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম হিন্দুত্ব নজরদারি গোষ্ঠীর ঘোষণা করেন।
সেলিম বলেছেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে আমরা জাতীয় স্তরের পাশাপাশি সমস্ত রাজ্যে এই জাতীয় সংস্থা তৈরি করব। বাংলায় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি নিজ নিজ যোগ্যতায় এই কাজটি করছেন। এখন, আমরা এটি একটি আরও গুছিয়ে নিয়ে কাজ করব।”
আরএসএস-এর সূত্র জানিয়েছে, গত এক দশকে বাংলায় সংঘের দ্রুত প্রসার ঘটেছে। এই বছরের মার্চ মাসে, সংগঠনটি সারা বাংলায় ১,৬৬৪টি দৈনিক সভা বা ‘শাখা’ পরিচালনা করেছে। এক বছর আগে, এটি ১,৫৪৯ ,‘শাখা’-র আয়োজন করত। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিপিএম বাংলায় সঙ্ঘ পরিবার বৃদ্ধির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনীতির পদ্ধতিকে দায়ী করে আসছে।
সেলিম বলেন, বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি যে মমতা যখন ২০১১ সালে রাজ্যের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বাংলায় আরএসএসের প্রায় ৭০০ ‘শাখা’ ছিল। “আরএসএস এবং এর সহযোগীরা ঘৃণা ছড়ানো এবং সাম্প্রদায়িক হিংসাকে সহজতর করার উপায় তৈরি করছে। এটা আমাদের দল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবিলা করবে।”
গত ১২-১৪ মার্চ হরিয়াণা প্রান্তে পট্টিকল্যাণ, সমলেখায় অখিল ভারতীয় প্রতিনিধিসভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আরএসএস-এর প্রাসরের রূপরেখা নিয়েও আলোচনা হয়। তার ভিত্তিতে ১৮ মার্চ কলকাতায় সঙ্ঘের প্রধান দফতর কেশব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সঙ্ঘের প্রান্ত কার্যবাহ ডঃ জিষ্ণু বসু, ক্ষেত্র সঙ্ঘচালক অজয় কুমার নন্দী প্রমুখ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সঙ্ঘে আরও একদফা আলোচনা হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে সংগঠনের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত। এই অংশে ২০২২-এর মার্চ মোট শাখাসংখ্যা ছিল ১,১৮৯। ’২৩-এর মার্চ মাসে তা বেড়ে হয় ১,২৭৫। ‘২২-এর মার্চে ‘শাখা’ (দৈনিক), ‘মিলন’ (সাপ্তাহিক) ও ‘মণ্ডলী’ (মাসিক) ছিল যথাক্রমে ৬৮৪, ৪৩৬ ও ৬৯। এক বছরে সংখ্যাগুলো বদলে হয়েছে যথাক্রমে ৬৮৮, ৫৬৪ ও ২৩।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ নদীয়া— পশ্চিমবঙ্গের এই অংশগুলো নিয়ে ২০২০-র মার্চ মাসে তৈরি হয় সংগঠনের ‘মধ্যবঙ্গ শাখা’। এই অংশে ২০২২-এর মার্চ মোট শাখাসংখ্যা ছিল ৮৭০। ‘২৩-এর মার্চ মাসে তা বেড়ে হয়েছে ১,১৯৩। ‘২২-এর মার্চে ‘শাখা’ (দৈনিক), ‘মিলন’ (সাপ্তাহিক) ও ‘মণ্ডলী’ (মাসিক) ছিল যথাক্রমে ৪০৩, ৪১১ ও ৫৬। এক বছরে সংখ্যাগুলো বদলে হয় যথাক্রমে ৪৮৩, ৬০০ ও ২১০
মালদা, দিনাজপুর, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও সিকিম নিয়ে সংগঠনের উত্তরবঙ্গ প্রান্ত। ২০২২-এর মার্চ মোট শাখাসংখ্যা ছিল ৮৬০। ‘২৩-এর মার্চ মাসে তা বেড়ে হয় ১,০৩৪। ২০২২-এর মার্চে শাখা (দৈনিক), মিলন (সাপ্তাহিক) ও মণ্ডলী (মাসিক) ছিল যথাক্রমে ৪৬২, ৩৪৬ ও ৫২। এক বছরে সংখ্যাগুলো বদলে হয় যথাক্রমে ৪৯৩, ২৯১ ও ২৫০৷
সূত্রের খবর, সিপিএম-এর চার তরুণ তূর্কি কলতান দাশগুপ্ত, সোমনাথ ভট্টাচার্য, সত্যজিৎ ব্যানার্জি আর মধুজা সেনরায়কে দলের তরফে আরএসএস-সহ হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপ ও প্রসারের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে বলেন, ”সিপিএম এখন অস্তিত্বের সংকটে। কিভাবে ওরা বেঁচে থাকবে তার জন্য বরং ওরা চিন্তা ভাবনা করুক। পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীরা যথেষ্ট শক্তিশালী। এদের পিছনে লাগতে যাওয়া মানে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনা- এটা সিপিএমের বোঝা উচিত। আর শুধু হিন্দুত্ব ওয়াচ গ্রুপ কেন? ইসলামিক জেহাদ ওয়াচ গ্রুপ নয় কেন? মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে দল চলছে বলে?“
অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি (পশ্চিমবঙ্গ) চন্দ্রচূড় গোস্বামী এই প্রতিবেদককে বলেন, “সিপিএম বরাবরই অন্যদের কাছ থেকে ধার করা বা উচ্ছিষ্টভোজী স্ট্র্যাটেজি সংগ্রহ করতে তৎপর কারণ ওরা জেনে গেছে ওদের স্ট্র্যাটেজির নামে বস্তাপঁচা ভাওতাবাজিতে মানুষের মন আর গলবে না। সেই জন্য ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা ওরা উঠেও দাঁড়াতে পারবে না বলে আমার বিশ্বাস। তবে সিপিএম পার্টি শুধু হিন্দুত্বকে কাউন্টার করতে চায় কেনো বুঝিনা, অন্যান্য ধর্মীয় মৌলবাদকে ও কাউন্টার করার সৎ সাহস দেখাক। কারণ ওরা ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে সুবোধ সরকারকে গরুর মাংস খাওয়াতে পারলেও মোহাম্মদ সেলিমকে শুয়োরের মাংস খাওয়াতে পারেনি। তাই মানুষ আর ওদের বিশ্বাস করে না। সব শেষে একটা কথাই বলবো আরএসএস হিন্দুত্বের একমাত্র প্রতিনিধি এটাই বা সেলিম বাবুকে কে বললো ? একটু খোঁজ নিয়ে জানুন আরএসএস এর জন্ম কিন্তু অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা থেকেই। আমরা যেমন “বসুধৈব কুটুম্বকম” বিশ্বাস করি আবার আমরাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছি “গান্ধী জাতির জনক নয়।” কাজেই শুধু আরএসএস নয়, সিপিএম এরও সনাতনী জাতীয়তাবাদী স্ট্র্যাটেজি শেখা উচিৎ আমাদের কাছ থেকেই। তাহলে দেশ আর দশ উভয়েরই ভালো হবে।“