বালুরঘাটকান্ডে সমর্থন করায় অপরূপা পোদ্দারের বাড়ি ঘেরাওয়ের নিদান, তৃণমূল জাতীয় দল সেজে ছিল- সুকান্ত মজুমদার

দুর্গাপুর, ১১ এপ্রিল (হি. স.) ‘তৃণমূল জাতীয় দল হলে, কাঁঠালের আমসত্ব হবে। সোনার পাথরবাটি হবে। তৃণমূল কখনই জাতীয় দল ছিল না, জাতীয় দল সেজে ছিল।’ মঙ্গলবার দুর্গাপুরে দলের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। একই সঙ্গে বালুরঘাটকান্ডে সমর্থন করায় তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের মন্তব্যকে কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, অপরূপা পোদ্দারের বাড়ী ঘেরাও করুক আদিবাসীরা।

প্রসঙ্গত, প্রায় এক বছর হতে চলল, দুর্গাপুর পুরসভার নির্বাচন থমকে। নির্বাচনের দাবীতে সরব হয়েছে বিজেপি। মঙ্গলবার নির্বাচনের দুর্গাপুরে প্রতিবাদ সভা করে বিজেপি। তাতে যোগ দিয়েছিলপন বিজেপি সাংসদ তথা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি রাজ্যের তৃণমূলকে কড়া ভাষায় আক্রমন করেন তিনি। গোয়ায় নতুন সকাল গড়তে তৃণমূল কংগ্রেস ভরসা রেখেছিল লুইজিনহো ফেলেইরো’‌র ওপর। তাঁকে ক্ষমতা দিয়েছিল ঘাসফুল শিবির। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়কে রাজ্যসভার সাংসদ না করে গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লুইজিনহো ফেলেইরোকে সেই পদ দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যখন তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সর্বভারতীয়’ তকমা নির্বাচন কমিশন কেড়ে নিল ঠিক তার পরের দিন মঙ্গলবার রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন লুইজিনহো ফেলেইরো। এদিন তিনি তৃণমূলের জাতীয়দলের তকমা হারানো প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন,” কাক পেখম লাগালেই ময়ূর হয় না। তৃণমূল জাতীয় দল হলে, কাঁঠালের আমসত্ব হবে। সোনার পাথরবাটি হবে। তৃণমূল কখনই জাতীয় দল ছিল না, জাতীয় দল সেজে ছিল। কাঁঠালের আমসত্ব হবে না। সোনার পাথর বাটি সম্ভব নয়। তৃণমূল জাতীয় দল হবে না।”
তিনি বলেন,” ভোটের বাংলার মেয়ে বলে ভোট নিয়েছিলেন। ভোটের পর রাজ্যসভায় বাংলার আসন কেড়ে, বাঙ্গালীদের বঞ্চনা করে অসমে একজন অহমিয়া আর গোয়ার একজন গোয়ালিক্সকে মাথার ওপর বসিয়েছিলেন। এখন সেই নেতারা লাথি মেরে চলে যাচ্ছে। কারন তারা বুঝে গেছে, রাষ্ট্রীয়স্তরে তৃণমূল কিছু করতে পারবে না। তাই ফেলেইরো মমতাকে ফেলে দিয়ে চলে গেল। আর অভিষেক ভাইপো আগে বুঝতে পেরে রাজ্যে চলে এসেছিল। তিনি এখন সর্বভারতীয় নয়, শুধু বাংলার ভাইপো।” এদিন তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষের সুরে বলেন,” খোকন খোকন বলে ডাক পাড়ি, খোকন গেছে কার বাড়ী। আইরে খোকন ঘরে আই। ডাকছে তোকে সিবিআই।” কয়েকদিন আগে বালুঘাটে আদিবাসী পরিবারকে প্রকাশ্যে দন্ডি কাটার সাজা দেওয়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। সেই প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার বলেন,” আদিবাসীরা তাদের প্রায়শ্চিত্ত করছে।” এদিন তার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সুকান্ত মজুমদার বলেন,” অপরাধমুলক কথাবার্তা। তীব্র বিরোধিতা করছি। সঠিক সময় সঠিক শিক্ষা দেবেন আদিবাসীরা। ” তিনি আরও বলেন,” অপরূপা পোদ্দার নিজেকে তপশীলিজাতি সম্প্রদায় বলে দাবী করেন। যদিও এখন আর তপশীলিজাতি নন। জাল তপশীলিজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত তিনি। আদিবাসী সম্প্রদায়কে বলব অপরূপা পোদ্দারের বাড়ী ঘেরাও করুক।” মঙ্গলবার সোনামুখি থানার আইসিকে ‘তুই তোকারি’ দিয়ে তির্যক কথা বলায় সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হয়। যদিও সৌমিত্রের বক্তব্যে কার্যত সমর্থন করে সুকান্ত মজুমদার বলেন,” আইসিদের আবার মানসম্মান। রাজ্যের আইসিরা তৃণমূলের দলদাস। মমতা ব্যানার্জীর আমলে আইসিদের কোন মানসম্মান নেই। তাদেরকে কিছু কাজ করাতে বাধ্য করে তৃণমূল। অনেক আইসি ওই কাজ মন থেকে করতে চায় না, তাদের সম্মান করি।” সম্প্রতি সাংসদ অর্জুন সিং তৃণমূলের কিছু বৈঠকে না যাওয়ায় ও বেসুরো মন্তব্যে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। এমনকি কোন পথে হাটছে তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়েছে। সে প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন,” অর্জুন সিং মহাভারতের পথে হাটছে।” রাজ্যপাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের তলব করার পরও গরহাজির হওয়ায়, তিনি নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছেন। রাজ্যপালের ভুমিকায় সুকান্ত মজুমদার বলেন,” রাজ্যপালের নতুন রূপ দেখে খুশী।” রাজু ঝাঁ খুনে অধরা আততায়ীরা। সে প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেন,” বড় মাথার হাত আছে। রাজু ঝাঁ র হাতে থাকা তথ্য সিবিআইয়ের কাছে গেলে অনেক রাঘব বোয়াল ধরা পড়ত। আন্দাজ করছি, ঘটনায় বড়সড় চক্রান্ত আছে।”