বোলপুর, ১১ এপ্রিল (হি. স.) : ঐতিহ্যবাহী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা গৃহে বসে দুর্গাপুজো প্রসঙ্গে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে রিপোর্ট তলব করল প্রধানমন্ত্রীর দফতর।উপাসনা গৃহে আচার্যের আসনে বসে উপাচার্যের লাগাতার বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিল শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
ঐতিহ্যবাহী উপাসনা গৃহে বসে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছিলেন, “দুর্গাপুজো ইংরেজদের পদলেহন করার জন্য শুরু হয়েছিল।” ১৮৯৪ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন উপাসনা গৃহ। যদিও, উপাসনা গৃহের সম্পূর্ণ নির্মাণ তিনি দেখে যেতে পারেননি। নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা ও সর্বধর্মকে সম্মান, আলোচনার জন্য কাঁচ মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয় ৷ এই উপাসনা গৃহ মহর্ষির তৈরি শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের অন্তর্গত। ঐতিহ্য মেনে প্রতি বুধবার সকালে এখানে উপাসনা হয়। এছাড়া,পরোগত আশ্রম বন্ধুর স্মৃতি তে বিশেষ বিশেষ তিথিতে বিশেষ উপাসনাও হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এবছর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বসন্তোৎসব না করে বসন্ত আবাহন অনুষ্ঠান করে। সেই অনুষ্ঠানে বহিরাগত দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। বসন্ত উৎসব না করার জন্য ঘরে বাইরে প্রবল সমালোচিত হয় বিশ্বভারতী। সমালোচনার মুখে পড়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এই উপাসনা মন্দিরে বসে বসন্তোৎসব বন্ধ করার ব্যাখ্যা দেন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। এই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা জানেই আজ দুর্গাপুজো বিশ্বের একটা অন্যতম পুজো হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে। কিন্তু, দুর্গাপুজোর ইতিহাস যদি দেখেন, এই দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল বৃটিশদের পদলেহন করার জন্য। তৎকালীন রাজাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হত কে ইংরেজ সাহেবদের দুর্গাপুজোর মঞ্চে নিয়ে আসবেন। সেই দুর্গা মঞ্চে অনেক ধরনের অনুষ্ঠান হত ও অনেক ধরনের পানীয় পান করারও সুযোগ থাকত। পরবর্তীতে দুর্গাপুজো একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু, শুরু হয়েছিল ইংরেজদের পদলেহন করার জন্য।”
দুর্গা পুজো প্রসঙ্গে নিরাকার ব্রহ্ম মন্দির তথা ঐতিহ্যবাহী উপাসনা গৃহে বসে উপাচার্যের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। ট্রাস্টের যুক্তি শুধু এই মন্তব্যই নয়, উপাসনা গৃহে বসে রাজনৈতিক কথাবার্তা, শান্তিনিকেতন আশ্রমিক দের প্রতি লাগাতার কটুক্তির ভিডিও ডকুমেন্ট আচার্য দপ্তরে পাঠানো হয়। ১০ মার্চ ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন ও প্রতিকার চান৷ পাশাপাশি শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, উপাসনা মন্দিরে বসে বিশ্বভারতীর উপাচার্য আশ্রমিক, পড়ুয়া, প্রাক্তনীদের বারংবার অপমান করছেন৷ মহর্ষি প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতর কাছে রিপোর্ট তলব করল । অর্থাৎ, উপাচার্যের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জবাবদিহি চাইলেন আচার্য প্রধানমন্ত্রী।
এই বিষয়ে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, “১৮৯৪ সালে মহর্ষি উপাসনা গৃহের প্রতিষ্ঠা করেন।এখানে পৌতলিকতার স্থান নেই । বা অন্য কোন রাজনৈতিক বিষয় আলোচনা হয় নি। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব নেবার পর লাগাতার ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন। তাই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আচার্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।এখন প্রধানমন্ত্রী দফতর কারন জানতে চেয়েছে। ” যদিও এই নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি বিশ্বভারতীর জন সংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ।

