গুয়াহাটি, ২০ মার্চ (হি.স.) : সমগ্ৰ অসমে ২০২৬ সালের মধ্যে বন্ধ করা হবে বাল্যবিবাহ প্রথা বা প্রবণতা। কেবল তা-ই নয়, ১৪ বছর বয়সে যদি কোনও স্ত্রী মা হন, তা-হলে সংশ্লিষ্ট স্বামীর ১৪ বছরের জেল অবশ্যম্ভাবী। আজ সোমবার বিধানসভায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব শৰ্মা। কংগ্ৰেসের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত এক প্ৰশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব।
করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের উত্তর দিতে গিয়ে গৃহ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, ২০০৬ সাল থেকে চলতি ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্ৰুয়ারি পর্যন্ত বাল্যবিবাহের অভিযোগে অসমে মোট ৪,৫১০ জনকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ভারতীয় দণ্ডবিধির আর/ডব্লিউ ৩৭৬, প্ৰহিবিশন অব চাইল্ড ম্যারিয়েজ অ্যাক্ট-২০০৬-এর ৯/১০/১১ এবং দ্য প্রটেকশন অব চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেনসেস অ্যাক্ট (পকসো)-২০১২-এর ৬/১৭ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্ৰী সঙ্গে বলেন, বাল্যবিবাহের অপরাধে গ্ৰেফতার বা আটককৃত কারোর মৃত্যু হয়েছে বলে কোনও তথ্য নেই। তাছাড়া পকসো অ্যাক্ট-২০১২-এর অধীনে ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্ৰুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৯,৯৩২ জনকে গ্ৰেফতার করা হয়েছে, বিধায়ক কমলাক্ষের প্রশ্নের উত্তরে জানান মুখ্যমন্ত্ৰী।
বাল্যবিবাহ রোধ করতে কেবল গ্রেফতার করেই সরকার ক্ষান্ত থাকেনি, এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে। বাল্যবিবাহের ফলে ভুক্তভোগীদের যথোচিত পুনসংস্থাপন দেওয়ার জন্যও সরকার বিশেষ গুরুত্ব প্ৰদান করেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে একটি ক্যাবিনেট সাব-কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্ৰচেষ্টাকে আরও অধিক শক্তিশালী করতে অসম পুলিশ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নিয়মিত অভিযান এবং সাডেন ভিজিটও চালাচ্ছে। বাল্যবিবাহের শিকার ভুক্তভোগীদের শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্ৰশিক্ষণের সুবিধা প্ৰদান এবং তাঁদের জীবনশৈলি পুনর্নিৰ্মাণ করতেও সরকার ব্যবস্থা গ্ৰহণ করছে, জানান মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি জানান, অসম সরকার গ্রাম পঞ্চায়তের সচিবদের সিএমপিও (চাইল্ড ম্যারিয়েজ প্ৰহিবিশন অফিসার) হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। একইভাবে গৃহ বিভাগের অধিসূচনা অনুযায়ী দ্যা প্ৰহিবিশন অব চাইল্ড ম্যারিয়েজ অ্যাক্ট-২০০৬-এর ধারা ১৬-এর অধীন ষষ্ঠ তফশিলির অন্তৰ্গত এলাকাগুলির সংশ্লিষ্ট লাট মণ্ডল এবং ডিমা হাসাও জেলার পাটোয়ারিদের সিএমপিও হিসেবে নিযুক্তির নিৰ্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও বিধানসভাকে জানান মুখ্যমন্ত্ৰী। ড. শর্মা আরও জানান, মহিলা ও শিশুর যৌন নিৰ্যাতন প্ৰতিরোধ ও অভিযোগ দাখিলের জন্য পৃথক দুটি হেল্পলাইন ১৮১ এবং ১০৯৮ ২৪ ঘণ্টা খোলা আছে।
বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের আরেক প্ৰশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্ৰী জানান, কাছাড় জেলায় ‘বাল পঞ্চায়েত’-এর মাধ্যমে বাল্যবিবাহের অশুভ ফলের বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলছে।
মুখ্যমন্ত্ৰী স্পষ্ট করেছেন, ‘পকসো মামলা সম্পর্কে হাইকোৰ্ট সরকারের কোনও সমালোচনা করেনি৷ বাল্যবিবাহের অভিযোগে ৯০ শতাংশই শাস্তি পাবেন বলে আমি মনে করি৷’ মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, ‘২০২৬-এর মধ্যে অসমে বাল্যবিবাহ আমরা বন্ধ করবই৷ এ জন্য বাজেটে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করব৷ প্ৰত্যেকটি বাল্যবিবাহ মামলার জন্য আইনজীবী আমরা দেব৷ প্ৰতি তিন মাস অন্তর অভিযান চালানো হবে৷ এক কথায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করবই৷ স্কুলের একই বেঞ্চে যে মেয়ে সব সময় বসে, সে যদি হঠাৎ স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়, তা-হলে আমরা বুঝে ফেলি, গোপনে তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে, অর্থাৎ আচমকা স্কুলে যদি কোনও বালিকা-ছাত্রী আসা বন্ধ করে দেয়, তা-হলে তার সহপাঠিনী আমাদের ফোন করে ঘটনাটি জানাতে পারবে৷’
প্রসঙ্গক্রমে মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন, চেঙা, বাঘবর প্রভৃতি এলাকায় ২৩ বছরের একটি মেয়ে কোলে দুটি বাচ্চা, সামনে দুটি বাচ্চা নিয়ে মিটিঙে আসে৷ অথচ হ্যান্ডিক কলেজে (গুয়াহাটিতে অবস্থিত অন্যতম প্রথমসারির মহিলা কলেজ) ২৩ বছরের একটি মেয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করে৷ এভাবেই আজ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের সপ্তম দিন বিরোধী বিধায়কের উত্থাপিত প্ৰশ্নের উত্তর দিয়েছেন গৃহ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখ্যমন্ত্ৰী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা।

