করিমগঞ্জ (অসম), ৯ মার্চ (হি.স.) : করিমগঞ্জে বৃহস্পতিবার নেহরু যুব কেন্দ্র সংগঠনের উদ্যোগে জেলাভিত্তিক যুব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পঞ্চপ্ৰাণ অ্যান্ড ইন্ডিয়া@২০৪৭-এর থিম নিয়ে দেশের ১৫০টি জেলার সাথে করিমগঞ্জেও এই যুব উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের মহান আদর্শ ও ভাবনাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এবং দেশের জনগণের মধ্যে সহিষ্ণুতার ভাবধারা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে আত্মনির্ভর ভারত গড়তে এই যুব উৎসব আয়োজন করা হয়। উৎসব উপলক্ষ্যে এদিন করিমগঞ্জের জেলা গ্রন্থাগার ভবনে স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মুখ্য অতিথি হিসেবে করিমগঞ্জের সংসদ কৃপানাথ মালা উপস্থিত ছিলেন।
সাংসদ তাঁর ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ২০৪৭ সালে যখন দেশের স্বাধীনতার একশ বছর পূর্তি হবে তখন দেশকে পুরোপুরি আত্মনির্ভর করে তুলতে যুব প্রজন্মকে এর দায়িত্বভার এখন থেকে নিতে হবে। এর জন্য তিনি শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলা, বিজ্ঞান চর্চা, স্বাস্থ্য, সাহিত্য, অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী হয়ে আত্মনির্ভরতা গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। কেননা ২০৪৭ সাল পর্যন্ত যুব প্রজন্মই এই স্বপ্নকে পূরণ করতে সক্ষম হবে এবং তাঁদের প্রচেষ্টায় ভারতকে বিশ্বগুরু হতে সহায়তা করবে। তাই তিনি প্রত্যেক যুবক-যুবতীকে যে ক্ষেত্রে তাঁদের কাজ করে যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল, সে ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে করিমগঞ্জের জেলাশাসক মৃদুলকুমার যাদব বলেন, পঞ্চপ্রাণের বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে যুব প্রজন্মকে আত্মনির্ভর হতে হবে। এর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তাঁদেরকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে যুবাদের মধ্যে উৎসাহ বাড়বে এবং যে সব যুবা বিপথগামী হয়ে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িয়ে গেছে তাদেরকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে আত্মনির্ভর করতে হবে। তাই তিনি যুবাদের প্রচেষ্টা জারি রাখতে পরামর্শ দেন।
আজকের অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে নেহরু যুব কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর মেহবুব আলম জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের আত্মনির্ভরশীল ভারত গঠন এবং পরম্পরাগতভাবে চলমান দাসত্বের মনোভাবকে সরিয়ে আত্মনির্ভরতা গড়তে তথা বিশ্বগুরু হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করতে যুব প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ প্রদানের উদ্দেশ্যে দেশের বাকি ১৫০টি জেলার সাথে করিমগঞ্জেও এই যুব উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর আগে এদিন জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যুবক-যুবতীরা এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে এবং তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন সকাল ১০ টায় করিমগঞ্জের ডিএসএ ইনডোর স্টেডিয়ামে পেন্টিং, কবিতা লেখা, মোবাইল ফটোগ্রাফি, আবৃত্তি বা ডিক্লামেশন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজয়ী প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদেরকে পুরস্কৃত করা হয়। পেন্টিং এ প্রথম সায়ন দত্ত, দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত পাল এবং তৃতীয় বিমান শুক্লবৈদ্য। পাশাপাশি কবিতা লেখায় প্রথম রাজলক্ষ্মী দাস, দ্বিতীয় সুস্মিতা দাস পুরকায়স্থ এবং তৃতীয় সনি বেগম।
এদিকে মোবাইল ফটোগ্রাফিতে প্রথম হয়েছে সুমন রায়, দ্বিতীয় বন্দনা দাস এবং তৃতীয় সঞ্জু রবিদাস। আবৃত্তি বা ডিক্লামেশনে প্রথম হয়েছে দ্বীপায়ন দে, দ্বিতীয় নাজমিন সুলতানা চৌধুরী এবং তৃতীয় অধিরাজ দাস। বিজয়ীদেরকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা মানপত্র ও নগদ অর্থ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত যুবতী কাবাডি দলের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বমূলক কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি মহিলা আত্মসহায়ক গোষ্ঠীর হস্তনির্মিত সামগ্রীর প্রদর্শনী, লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্কের পক্ষে অর্থনৈতিক ও ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রদর্শনী তথা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাছ চাষের বিভিন্ন কলা কৌশল ও ঋণ গ্রহণের সুবিধার সচেতনতামূলক স্টল প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংস্কৃতি গোষ্ঠীর পরম্পরাগত সম্মিলিত লোকনৃত্য প্রদর্শন ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যুব উৎসবে করিমগঞ্জের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রিয়াঙ্কা ইয়ামনাম, রূপক মজুমদার, রাংবামন টেরন ও মানস প্রতিম দাস সহ জেলার বিভিন্ন সংস্থা, ক্রীড়া সংগঠন, আত্ম সহায়ক গোষ্ঠীর কর্মকর্তা, ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করেন। এদিনের সভা পরিচালনা করেন করিমগঞ্জের নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাবের সম্পাদক দেবাশিসচন্দ্র দেব।

