দলীয় কোঁদল তুঙ্গে, প্রকাশ্যে ইস্তফার হুঁশিয়ারি বিধায়ক-প্রাক্তন মন্ত্রীর

উত্তর দিনাজপুর, ৯ মার্চ (হি. স.) : জেলা সভাপতি এবং ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে ২ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তিনি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তৃণমূলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়বেন নির্দল হয়ে। বৃহস্পতিবার এমন হুঁশিয়ারিই দিলেন উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর বিধানসভার বিধায়ক আব্দুল করিম চৌধুরী। দলের এক জন বিধায়ক হয়ে আব্দুল করিমের এ হেন মন্তব্য ‘অপ্রত্যাশিত’ বলেই মনে করছে তৃণমূল।তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।

তৃণমূলের উত্তর দিনাজপুর জেলার সভাপতি কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এবং তৃণমূলের ইসলামপুর ব্লকের সভাপতি জাকির হোসেনের গোষ্ঠীর লোক। ওঁদের বিরোধী আব্দুল করিম। বিতর্কের সূত্রপাত, বুধবার রাতে ইসলামপুর থানার দক্ষিণ মাটিকুণ্ডা গ্রামে শাকিব আখতার (৩০) নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে বোমা মেরে খুন করার অভিযোগ ঘিরে। শকিব করিম-অনুগামী। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা। এই ঘটনাকে ঘিরে বৃহস্পতিবার এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। হাসপাতালে পৌঁছে ক্ষোভ উগরে দেন আব্দুল করিম। কানহাইয়ালাল এবং জাকিরকে বেঁধেন ‘চ্যালেঞ্জ’ করেন আব্দুল করিম।

ইসলামপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতির সঙ্গে আব্দুল করিমের বিরোধ নতুন নয়। গত বছরের অগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে জাকির ব্লক সভাপতি হওয়ার পর একই সুরে ফুঁসে উঠেছিলেন ইসলামপুরের তৃণমূল বিধায়ক। জাকির ‘দুষ্কৃতী’ বলে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। এমনকি সেই সময় তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘মমতাদিকে বলছি, আপনি অনুগ্রহ করে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করুন। না হলে ইসলামপুরে আন্দোলন চলবে।’’

ওই ঘটনার বছর খানেক আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে এই আব্দুল করিমকেই প্রশাসনিক বৈঠকে ধমক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রায়গঞ্জে হওয়া ওই প্রশাসনিক বৈঠকে পৃথক জেলা চেয়ে বসেছিলেন ইসলামপুরের বিধায়ক। সেই সময় আব্দুল করিমকে ধমক দিয়েছিলেন ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী।

নিহত শাকিবের দাদা শাহনওয়াজ আলম স্থানীয় তৃণমূল নেতা। তিনি আব্দুল করিমের গোষ্ঠীর লোক হিসাবেই পরিচিত। কানহাইয়ালাল এবং জাকিরকে নিশানা করে বৃহস্পতিবার করিম মন্তব্য করেন, ‘‘আমাদের সংগ্রামী নেত্রী আমাকে ভালবাসেন। তাঁকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে এরাই। আমি ক্ষমা করব না। বিধানসভায় আমাকে হারানোর চেষ্টা করেছিল। করিম চৌধুরীকে দমাতে হবে এই সন্ত্রাসবাদী নেতাদের হাত দিয়ে? সংগঠনের সভাপতিকে রাখার জন্য আমাকে ইস্তফা দিতে বলা হচ্ছে। ঠিক আছে, যদি এই ক্ষেত্রে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তা হলে আমি ইস্তফা দিয়ে দেব।’’

আব্দুল করিমের অভিযোগ, ‘‘জেলা সভাপতি কানহাইয়া আগরওয়াল নিজের লোক জাকির হোসেনকে ব্লক সভাপতি রেখেছে সন্ত্রাস করার জন্য। খুনখারাপি করছে। আইসি কিছু করতে পারছে না। প্রশাসন বলছে, আপনারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করবেন আমরা কী ব্যবস্থা নেব?’’ করিমের সংযোজন, ‘‘মমতা’দি চুপচাপ বসে আছেন কেন? এটা করিম চৌধুরীর এলাকা বলে? আপনি আমাকে শেষ করে দিন। আমার কোনও কথা শুনতেই চান না আপনি। আমার ভাল লাগছে না মমতা’দি। এটা সরাসরি আপনাকে বলছি সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে। এটা বন্ধ করুন। এটা ঠিক নয়। সারা পশ্চিমবাংলায় আপনার দলের বিরুদ্ধে ঘৃণা চলে আসবে। আপনি সন্ত্রাসবাদী লোকগুলিকে রেখেছেন। আমি আপনাকে বলছি মমতা’দি। আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও।’’

চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ক্ষিপ্ত আব্দুল করিমের মন্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলছি, আপনি যদি ২ দিনের মধ্যে কানহাইয়ালাল আগরওয়াল এবং জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেন তা হলে আমি বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেব। আবার লড়ব আমি নির্দল প্রার্থী হিসাবে। চ্যালেঞ্জ থাকল আমার।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *