কেন গুয়াহাটি থেকে একজন ডি-ফ্যাক্টো পিএম গোটা উত্তরপূর্ব চালাবেন? প্রশ্ন তুলে মেঘালয়ে পরিবর্তনের ডাক মমতার

‘পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যেক কৃষককে প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা, অন্তত ৯.৫ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ হাজার শিশুর বিনামূল্যে হৃদযন্ত্রের অপারেশন হয়েছে’

তুরা (মেঘালয়), ১৮ জানুয়ারি (হি.স.) : গুয়াহাটি থেকে একজন ডি-ফ্যাক্টো প্রাইম মিনিস্টার কেন গোটা উত্তরপূর্ব চালাবেন? অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মার নাম না ধরে মমতা বলেন, মেঘালয়ে তৃণমূল সরকার গঠনে মুখ্য ভূমিকা নিন, ভালো সরকার চাইলে এনপিপিকে ছুঁড়ে ফেলুন। এভাবেই আজ মেঘালয়ের উত্তর গারোপাহাড় জেলার মেন্দিপথারে দিলমা আপল খেলার মাঠে আয়োজিত দলের জনসভায় পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস-নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আজ বুধবার দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলীয় আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে উত্তর গারোপাহাড় জেলার মেন্দিপথারে আয়োজিত জনসভায় নির্বাচনী ভাষণ দিয়েছেন তৃণমূল-সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তৃণমূল-সুপ্রিমো তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া গেরুয়া দল সহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে মাথা নত করতে বারণ করেছেন।

বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের নিন্দা করে মমতা বলেন, গুয়াহাটি থেকে কেন একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন, যিনি সমস্ত উত্তরপূর্বীয় রাজ্যগুলি পরিচালনা করবেন? জোরের সঙ্গে মমতা আরও বলেন, মেঘালয়ের জনগণ যদি বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ব্যর্থ সরকারকে পরিবর্তন করতে চান, তা-হলে অবশ্যই টিএমসি (তৃণমূল কংগ্রেস)-কে রাজ্যের একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য দল হিসেবে দেখতে হবে।

কংগ্রেসের ওপর হামলা করে তৃণমূল-নেত্রী বলেন, তিনি যখন শতবর্ষ-প্রাচীন কংগ্রেস দলের অংশ ছিলেন, তখন বামপন্থীদের সাথে লড়াই করেছেন। সে সময় কংগ্রেস তাঁকে কোনও ধরনের সুরক্ষা দেয়নি। জনতার উদ্দেশ্যে মমতা বলেন, ‘আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না, আমি যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তাতে আমি কীভাবে কতটা অত্যাচারিত হয়েছি। আমার মাথা এবং হাত সহ গোটা শরীরে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তবুও নোংরা কংগ্রেস নেতাদের সামনে কখনও মাথা নত করিনি,’ বলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।

মমতার দাবি, রাজনীতি তাঁর পেশা নয়। কেবল ভালোবাসা এবং আবেগ। রাজনীতি করেন কেবল রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মানুষের সেবার জন্য।

তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল-শাসিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৃতিত্বের খতিয়ান তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁর রাজ্যে প্রত্যেক কৃষককে প্রতি বছর ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়, রাজ্যের অন্তত ৯.৫ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন দেয় তাঁর সরকার। দিল্লি এবং অসমের চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনা করে মমতা জোর দিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেক সস্তা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ হাজার শিশুর বিনামূল্যে হৃদযন্ত্রের অপারেশন করা হয়েছে।’ বলেন, টিএমসিই একমাত্র দল যা ভালো শাসন দিতে পারে। টিএমসি-সরকারের আমলে যুবক, ছাত্ররা স্বপ্ন অর্জন করতে পারেন। তাঁর সরকার পশ্চিমবঙ্গের মতো মেঘালয়েও সমস্ত মহিলাকে প্রতি মাসে ১,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে, যোগ করেছেন তিনি।

কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি গেটওয়ে, যা গুয়াহাটি বা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মেঘালয় পর্যন্ত বিমানের মাধ্যমে ভ্রমণ করতে একই পরিমাণ সময় নেবে দাবি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমি গুয়াহাটি হয়ে আসিনি। আলিপুরদুয়ার থেকে হাসিমারা, হাসিমারা থেকে এখানে। তাই দেখুন, যদি আপনারা মেঘালয় থেকে গুয়াহাটি হেলিকপ্টারে যান, তা-হলে ৪৫ মিনিট সময় লাগে, আর যদি আমার রাজ্য থেকে এখানে আসেন তা-হলেও ৪৫ মিনিট লাগে। তাই কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি গেটওয়ের খুব প্রয়োজন, এই দাবি তুলছি আমি,’ বলেন তিনি। একই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘ভুটান, বাংলাদেশ, নেপালে যাতায়াত করতে পশ্চিমবঙ্গেও একটি গেটওয়ে থাকা উচিত।’

মেঘালয়ে এনডিএভুক্ত ক্ষমতাসীন এনপিপিকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার বা গুয়াহাটি থেকে প্রক্সি দেওয়া ছাড়া, কনরাড সাংমার দল তথা সরকার গত পাঁচ বছরে কিছুই করেনি। স্বভাবসুলভ ভাষায় রাজ্য সরকার তথা এনপিপি-প্রধান কনরাড সাংমার উদ্দেশ্যে মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘আপনার রিপোর্ট কার্ড দেখান, গত পাঁচ বছরে আপনি কী করেছেন? তার আগে আপনি মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবেন না।’

এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, টিএমসি যে কথা বলে তা সর্বদা হৃদয় থেকে করে, অন্যরা যারা টেলিপ্রম্পটার ব্যবহার করে তার বিপরীতে, তাই টিএমসির হৃদয় সর্বদা মেঘালয়ের জনসাধারণের প্রতি সমর্পিত। মেঘালয়ের ক্ষমতাসীন এনপিপি এবং অসম সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কেন আজ পর্যন্ত আন্তঃরাজ্য সীমান্তে জমি বিরোধের সমস্যা সমাধান করা হয়নি?কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, বিজেপির দুটি মুখ, নির্বাচনের সময় বলবে ডাবল ইঞ্জিনের সরকার এবং নির্বাচনের পর করবে অন্য কিছু। বলেন, ‘তাই এবার আমি মেঘালয় রাজ্যে তৃণমূল সরকার চাই, রাজ্যের বাইরে থেকে শাসিত নয়। আপনারা নিজেদের ভূমিকে ভালোবাসুন কারণ এটি আপনার মাতৃভূমি। তৃণমূল ক্ষমতায় আসলে এই ভূমির মানুষ মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী হবেন, আপনার ছেলেই আপনাদের সরকার চালাবে, বহিরাগতরা নয়।