আগরতলা, ৬ জানুয়ারি (হি. স.) : আজ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ৬৮৯ জন দিব্যাঙ্গজনদের মধ্যে ১,২৫৩টি সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৫৮ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক বলেন, একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র নির্মাণে আমাদের মতো স্বাভাবিক মানুষদের যতটা ভূমিকা রয়েছে দিব্যাঙ্গজনদেরও ততটাই সমান ভূমিকা রয়েছে। তাদের ছাড়া দেশের উন্নয়ন পরিপূর্ণতা পেতে পারে না।
তাঁর দাবি, এই কথাটি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই প্রথম বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের দিব্যাঙ্গজন নামে সমাজে একটি সম্মানজনক পরিচিত দিয়ে বলেছিলেন, দিব্যাঙ্গজনরা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের অবহেলা করলে কোনও সমাজের সঠিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তিনি তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেগুলিকে বাস্তবায়িতও করছেন। প্রসঙ্গত, আজ আগরতলা টাউনহলে আর্টিফিসিয়াল লিঙ্কস ম্যানুফেকচারিং কর্পোরেশন এবং পশ্চিম জেলা সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা কার্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত দিব্যাঙ্গজনদের মধ্যে বিভিন্ন চলন সামগ্রী বিতরণমূলক সামাজিক আধিকারিতা শিবিরের আয়োজন হয়েছে।
এদিন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ এখানে সামাজিক আধিকারিতা শিবিরে পশ্চিম জেলার ৬৮৯ জন দিব্যাঙ্গজনদের মধ্যে চলন সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এই সামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে পারার মধ্যে একটি বিশেষ আনন্দ রয়েছে। তিনি বলেন, দিব্যাঙ্গজনদের জীবনযাত্রার মান আরও কি করে সহজ ও সরল করা যায় আমাদের সরকার সে বিষয়ে আরও উন্নত চিন্তা ভাবনা করছেন এবং সেগুলি বাস্তবায়িতও করছেন।
তাঁর কথায়, দিব্যাঙ্গজনদের উন্নয়নে এবং তাদের মেধার বিকাশের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন। তাদের সুবিধার্থে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের সমস্ত রাজ্যগুলির সরকারি কার্যালয়গুলিতে র্যাম্প ও লিফটের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমাদের রাজ্য সহ দেশের সকল রাজ্যেই তা কার্যকরও হয়েছে। সারা দেশে দিব্যাঙ্গজনেরা যাতে বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারেন সেজন্য তাদের ইউনিক সার্টিফিকেটের ব্যবস্থাও করেছেন, বলেন তিনি।
সাথে তিনি যোগ করেন, আমাদের সরকার নানা প্রকল্প চালুর মধ্য দিয়ে দিব্যাঙ্গজনদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আগামীদিনেও দিব্যাঙ্গজনেরা যাতে আরও উন্নতভাবে চলতে ফিরতে পারেন সেজন্যও উন্নত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। দিব্যাঙ্গজনদের চলন সামগ্রী যত বেশি আধুনিক করে বিভিন্ন কোম্পানি তৈরি করবে, সেসব কোম্পানিকে সরকার থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও তিনি বক্তব্যে বলেন।
তাঁর দাবি, আমাদের সরকার সমাজের বয়স্ক ব্যক্তি তথা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কথা ভেবে তাদের নিয়ে স্বসহায়ক দল গঠন করার জন্যও উৎসাহ দিচ্ছে। বিভিন্ন হস্তশিল্প কর্মসূচির উপর ভিত্তি করে বয়স্ক ব্যক্তিগণ ঘরে বসে যাতে উপার্জন করতে পারেন সেজন্য তাদের ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত এককালীন আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যেও মাতাবাড়ি ব্লকে অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে একটি স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। তারা মাটির ভাঁড় তৈরি করে বর্তমানে ভালো উপার্জন করছেন। তিনি বলেন, রাজ্যে দিব্যাঙ্গজনদের উন্নয়নে আরও ৪টি ডিডিআরসি (জেলা ডিজাবিলিটি রিহাবিলিটেশন সেন্টার) খোলা হবে। সেন্টারগুলি হবে দক্ষিণ ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা, খোয়াই ও সিপাহীজলা জেলায়।তিনি জানান, আজাদি কা অমৃত মহোৎসবের অঙ্গ হিসেবে আগামী ১৪ জানুয়ারি সারা দেশের ৭৫টি স্থানে সামাজিক আধিকারিতা শিবির অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ত্রিপুরায়ও ঊনকোটি, খোয়াই ও ধলাই জেলা নিয়ে ১টি এই ধরনের শিবির অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ উপলক্ষে ২৫ জানুয়ারি বিনামূল্যে শারীরিক দিব্যাঙ্গজনদের মধ্যে মোটরচালিত ট্রাইসাইকেল বিতরণ করা হবে। এজন্য শারীরিক দিব্যাঙ্গজনদের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে স্থানীয় জেলাশাসক কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সহ নাম জমা দিতে হবে। তিনি সমস্ত শারীরিক দিব্যাঙ্গজনদের এই সুবিধা গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সরকার দিব্যাঙ্গজনদের সার্বিক উন্নয়নে বদ্ধপরিকর। এজন্য সরকার তাদের জন্য সব পরিষেবা দিতে প্রস্তুত।

