আগরতলা, ৪ জানুয়ারি (হি. স.) : স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ সহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ত্রিপুরাকে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বানানোই হচ্ছে বর্তমান রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। তাই ত্রিপুরায় শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রেখেই জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট পৌঁছানো হচ্ছে সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। আজ বুধবার রবীন্দ্রভবনে ত্রিপুরার উন্নয়ন ও সাফল্যের প্রতিবেদন সম্বলিত পুস্তিকা তথা রাজ্য সরকারের রিপোর্ট কার্ডের আবরণ উন্মোচন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন।
তাঁর কথায়, বর্তমান ত্রিপুরা সরকার তার সাফল্যের খতিয়ান সম্বলিত রিপোর্ট জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সরকার আজ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে। বর্তমান ত্রিপুরা সরকার এতো উন্নয়নমূলক কাজ করেছে যে তার বিস্তারিত রিপোর্ট কার্ড তৈরী করা খুব কঠিন কাজ। তাই রাজ্য সরকারের পরিকল্পনা দপ্তর সংক্ষিপ্ত আকারে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের সাফল্যের খতিয়ান রিপোর্ট কার্ডে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর মার্গ দর্শনেই ত্রিপুরা সরকার জনগণের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা সরকার অভাবনীয় সফলতা অর্জন করেছে। সাফল্য স্বরূপ ত্রিপুরা সরকার কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছে।
তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় ত্রিপুরার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। আরও ৭টি জাতীয় সড়ক নির্মাণ সহ আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়ক (এন এইচ-৮) কে চার লেনে রূপান্তরিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০ হাজার ২২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়াও ত্রিপুরায় ৪টি রোপওয়ে স্থাপনেরও অনুমোদন পাওয়া গেছে।
সাথে তিনি যোগ করেন, ইন্টারনেট পরিষেবার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা বর্তমানে তৃতীয় শক্তিশালী রাজ্য হিসেবে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নয়নের ফলেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন তথ্য আজ ত্রিপুরার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলেই বর্তমানে আগরতলা থেকে প্রায় ১১টি এক্সপ্রেস ট্রেন বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চলাচল করছে। পাশাপাশি আগরতলা রেল স্টেশনটিকে দেশের অন্যতম আধুনিক রেলস্টেশনে পরিণত করার কাজ চলছে। বিভিন্ন রাজ্যের মতো আমাদের রাজ্যেও ইন্টারসিটি রেল চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট অনুরোধ জানানো হয়েছে যা নীতিগতভাবে অনুমোদনও দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
তিনি বলেন, বর্তমান ত্রিপুরা সরকার জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে ত্রিপুরার সমস্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে হেলথ্ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টারে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। ত্রিপুরা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের সমস্ত জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।যাতে রাজ্যিক হাসপাতালগুলোতে চাপ কমে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা হাসপাতালগুলোতে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য ট্রমা কেয়ার সেন্টারও চালু করা হচ্ছে।
তাঁর দাবি, বর্তমানে ত্রিপুরায় আইন শৃঙ্খলার উন্নতি হওয়ার ফলে মা-বোনেরাও রাতে নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারছেন। ত্রিপুরার বিভিন্ন হাইওয়েগুলোতে দুর্ঘটনা ও অপরাধের মাত্রা হ্রাস করার জন্য ২৪ ঘন্টার পেট্রোলিং-এর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান ত্রিপুরা সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। গুণগত শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে রাজ্যে এন সি ই আর টি পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। ত্রিপুরার একশোর উপর বিদ্যালয়কে বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। ত্রিপুরার বিভিন্ন শিক্ষা পরিকাঠামোকে কেন্দ্র করে রাজ্যে এডুকেশন হাব বানানোর লক্ষ্যেও ত্রিপুরা সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে।
এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা সরকার বিগত সাড়ে ৪ বছরে জনকল্যাণে কি কি কাজ করেছে তা জনগণকে অবহিত করার উদ্দেশ্যেই সরকার আজ রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করেছে। বর্তমান ত্রিপুরা সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, পরিকাঠামো সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন নতুন মাইলস্টোন তৈরী করেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সরকার মিশন মুডে কাজ করছে। ফলে ত্রিপুরায় রেল, বিমান, সড়ক যোগাযোগ সহ বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নেও ব্যাপক সফলতা এসেছে।তাঁর দাবি, ত্রিপুরার বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর উন্নয়নে রাজ্য সরকার সম্প্রতি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে ২,২৭৫ কোটি টাকার একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প রূপায়ণের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে সব দিক দিয়েই ত্রিপুরা এখন নতুন দিশায় নতুন চিন্তাশক্তি নিয়ে দ্রুত এগুচ্ছে।
স্বাগত ভাষণে পরিকল্পনা দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় বলেন, ত্রিপুরা সরকারের উন্নয়ন সম্বলিত পুস্তিকা তথা রিপোর্ট কার্ডে প্রধানত ১০টি প্রধান ক্ষেত্রকে তুলে ধরা হয়েছে। সেগুলি হল শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, মহিলা ও শিশু কল্যাণ, জনজাতি কল্যাণ, পরিকাঠামো, – অর্থনৈতিক ও শিল্প, আইন শৃঙ্খলা এবং পর্যটন। এছাড়াও প্রতিটি দপ্তরই তাদের উন্নয়নের খতিয়ান সম্বলিত পুস্তক প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানে কৃষি, উচ্চশিক্ষা, বিদ্যালয় শিক্ষা সহ বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়ন সম্বলিত পুস্তিকা এবং প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের সাফল্য সম্বলিত পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

