কলকাতা, ২৯ ডিসেম্বর (হি .স.) : গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় বিশ্বে ১৪৭৭ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬৬ লাখ ৯১ হাজার। অতিমারীর আশঙ্কায় ফের রাতের ঘুম উবে র দশা অনেকের। আবার কি করোনা স্বাভাবিক জীবন তছনছ করে দেবে? একে একে শুরু হয়েছে বিধিনিষেধ। এর শেষ কোথায়?
ফি বছর একাধিকবার দূরের কোনও দেশে বেড়াতে যান দক্ষিণ কলকাতার কালিকাপুরের কুমুদ কর। উদ্যোগ-আয়োজন শুরু হয় অনেক আগে থেকে। এবার মার্চ মাসে কলকাতা থেকে প্রথমে কানাডা। সেখান থেকে শ্যালকের সঙ্গে হনলুলু র পরিকল্পনা। টিকিক কাটা, থাকা, ঘোরার ব্যবস্থাদির দায়িত্ব দিয়েছেন একটি নামী ভ্রমণ সংস্থাকে। কিন্তু পরিস্থিতি যা, ঝুঁকি না নিয়ে সফর বাতিল করার কথা ভাবছেন কুমুদবাবু। এই প্রতিবেদককে বললেন, “সময়ের নির্ঘন্ট মেনে চার জায়গায় আরটিপিসিআর করতে হবে। বাতিল করার কথা ভাবছি। কীভাবে আগাম দেয় অর্থ অ্যাডজাস্ট করা যায় দেখতে হবে।“
এই অ্যাডজাস্টমেন্ট ব্যাপারটাও গোলমেলে। এলাহাবাদে বাঙালিদের জলসায় গান গাওয়ার জন্য কলকাতার এক নবীন শিল্পীকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। করোনায় অনুষ্ঠান করা যায়নি। উদ্যোক্তারা অগ্রিম ফেরৎ চাইলে ওই শিল্পী বলেন, “অনুষ্ঠান বাতিলের দোষ তো আমার নয়!“ উদ্যোক্তারা এই প্রতিবেদককে বলেন, “আর একজন শিল্পী কিন্তু লখনউয়ের বাঙালিদের সংগঠনকে করোনায় অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ায় অগ্রিম ফেরৎ দিয়েছেন!“
প্রায় এরকম বেশ কটি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন ভ্রমণসংস্থার সঙ্গে পর্যটকদের। করোনার জেরে সফর বাতিল হয়েছে। ভ্রমণসংস্থা অগ্রিম টাকা ফেরতে রাজি নন। তাঁরা বলছেন পরে কোথা গেলে অ্যাডজাস্ট করে নেবেন! পর্যটকের যুক্তি, কোথাও গেলে কবে, কোন সংস্থার সঙ্গে কোথায় যাব সেটা তো আমার সিদ্ধান্ত! অগ্রিম কেন ফেরৎ দেবেন না? থানা-পুলিশেও গড়িয়েছে সেই বিবাদ।
কলকাতা-ভিত্তিক একটি পর্যটন সংস্থার প্রেসিডেন্ট পিনাকি মিত্র বলেন, “সতর্কতা দরকার। কিন্তু একটাই অনুরোধ। অতিমারীর জন্য গত আড়াই বছরের ওপর পর্যটনশিল্প সাঙ্ঘাতিক মার খেয়েছে।
জোর করে কোভিড সঙ্কট যেন তৈরি না করা হয়। তাহলে সব স্থায়ীভাবে তছনছ হয়ে যাবে। তথ্যের ওপর ভিত্তি করে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
কেবল বেড়ানো বা জলসা নয়, চিন্তিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। যে যাঁর মত সতর্কতা নিচ্ছেন। বাবাসাহেব অম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভার্সিটির (রাজ্যের একমাত্র শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়) উপাচার্য ডঃ সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানান, “২০২০-২০২১এর জুলাই পর্যন্ত আমাদের পঠনপাঠন অনলাইন হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গত সপ্তাহেই আপলোড করেছি স্বাস্থ্যবিধি। কলেজগুলোকেও বলা হয়েছে এ নিয়মগুলো মেনে চলতে –যেমন ১) মাস্ক ব্যবহার করা, ২) স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, ৩) দূরত্ব বজায় রাখা, ৪) পারলে সচেতনতা শিবির করা
এগুলো আমরাও করতে চলেছি।“
বৃহস্পতিবার কর্নাটক সরকারের তরফ থেকে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকায় বলে দেওয়া হয়েছে, বর্ষবরণের উৎসব পালন করতে গেলে কী কী বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। নির্দেশিকার ফলে রেস্টুব়্যান্ট এবং পানশালায় ভিড় তেমন হবে না বলেই মনে করছেন মালিকেরা। তবে কলকাতায় এখনও রকম নির্দেশিকা জারি হয়নি। সল্ট লেকে সেক্টর ফাইভের নামী রেস্তোঁরা ‘ফাইভ ম্যাড ম্যান’-এর অন্যতম পরিচালক সায়ন রায় জানান, এখানে এখনও করোনার কোনও প্রভাব দেখিনি। কারণ বছরশেষের অনেকটায় ছুটির আমেজ চলছে। জানুয়ারিতে বোঝা যাবে। অতিমারির প্রথম দুটো পর্যায়ে সত্যি বিশাল ক্ষতি হয়েছে। তা কোটি টাকার হিসাবে। বিভিন্ন পর্যায়ে খরচ কমিয়ে কোনওক্রমে চালানোর চেষ্টা করেছি। লোকও কমাতে হয়েছে। একাধিক লকডাউন সত্বেও লাইসেন্স ফিজ সবটাই দিতে হয়েছে। সরকারের সহযোগিতা পাইনি। আবার যদি করোনা ছড়ায় তাহলে তো সত্যি খুব চিন্তার বিষয়।
দক্ষিণ কলকাতার নয়াবাঁধ অঞ্চলের ব্যস্ত নির্মাতা শম্ভু ভূঁইয়া জানান, গতবার করোনায় আমার নির্মাণ কাজ খুব ধীর গতিতে হয়েছে। কারণ ওই সময় বিক্রি বা বাড়ি কেনার কেউ ছিল না। কিছু দাম কমাতেই বিক্রি হয়ে গেলো। বর্তমানে বেশি দামে বাড়ি কেনার ক্রেতা কম। তাই এখন পরিকল্পনা কেরেছি ক্রেতার চাহিদা মতন বাড়ি বানাবো। তবে করোনার বাড়াবাড়ি হলে অনেকের মত আমরাও সমস্যায় পড়ব।

