BRAKING NEWS

সংবাদ পরিবেশনে চার বাস্তবতাকে লক্ষ্য রাখতে আর্জি মার্ডিকরের

অশোক সেনগুপ্ত

প্রয়াগরাজ, ২২ ডিসেম্বর (হি. স.) : সময়, সততা, সমাজ এবং সংবাদ-বৈচিত্র্য— এই চার স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে প্রচারমাধ্যমের জগৎ। সংবাদ পরিবেশনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে এই চার বাস্তবতাকে। আজকাল প্রায়শই এর বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই মন্তব্য করলেন ‘হিন্দুস্থান সমাচার’-এর চেয়ারম্যান অরবিন্দ ভালচন্দ্র মার্ডিকর।

ব্যখা দিতে গিয়ে তিনি এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। একটা নিবিড় পর্যবেক্ষণ আছে। তার ভিত্তিতে বলতে পারি, প্রচারমাধ্যম আরও ইতিবাচক মানসিকতার হলে ভাল হয়। এবং ‘উইদাউট অ্যাডিং এনি মির্চ-মশলা’। শিক্ষিত মানুষের মতামত তৈরি করে প্রচারমাধ্যম।

তাঁর মতে, ‘সময়’ ব্যাপারটা আমাদের মত সংবাদ সংস্থার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুততার সঙ্গে তা পরিবেশন করতে হবে। সেই সঙ্গে দেখতে হবে খবরের সত্যতা যেন ঠিক থাকে। এর সঙ্গেই পায়ে পায়ে এসে যায় ‘সমাজ’-এর প্রসঙ্গ। খবর করতে গিয়ে যেন তাতে মশলা না মেশানো হয়। সমাজকে কী পরিবেশন করছি, সেই দায়িত্ববোধটা অবশ্যপ্রয়োজনীয়।

অরবিন্দবাবু মনে করেন, প্রথাগত প্রাত্যহিক খবরের ঘেরাটোপে আটকে থাকলে চলবে না। সংস্থার স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠা, পাঠক বা শ্রোতার তৃপ্তি প্রভৃতির জন্য সংবাদ-বৈচিত্র্য ভীষণ মূল্যবান। অর্থাৎ, কেবল অপরাধ-কেলেঙ্কারি, রাজনীতি-নির্ভর খবর নয়। স্পেশাল স্টোরি প্রয়োজন। গ্রামীণ খবর, আর্থসামাজিক খবর, বিজ্ঞান-সংস্কৃতির অন্য রকম খবর পরিবেশন করা আবশ্যিক। গ্রামীণ নারীশিক্ষা বিস্তার, সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর উন্নয়ন, শিশুমৃত্যু হ্রাস— এধরণের নানা মৌলিক পর্যবেক্ষণ খবরের বিষয় হতে পারে।

মনে রাখতে হবে, সমাজে খারাপ যেমন আছে, ভালর সংখ্যা আরও বেশি। সে কারণেই সমাজ এগিয়ে চলেছে। আর এই গতিশীলতা বজায় রাখতেই ২০১৪-র পর থেকে জাতীয় স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার লোকচক্ষুর আড়ালে যাঁরা গঠনমূলক কাজ করে চলেছেন তাঁদের অনেককে খুঁজে বার করেছে। কবির ভাষায়, ‘আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরণীতে, পরিচিত জনতার সরণীতে’। এঁদের অনুপ্রেরণা দিতে হবে। এঁদের কথা আমরা লিখলে ভাল কাজ করার ব্যাপারে আরও অনেকে উদ্বুদ্ধ হবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ‘মন কি বাত’-এ এরকম নানা খবরের সহায়তা নেন। আমাদের সংবাদ সংস্থার দুটি খবরের উল্লেখ করেছেন তিনি।

সামাজিক মাধ্যমে এখন সবাই খবরদাতা। এঁদের কি আপনি সাংবাদিক বলবেন? জবাবে অরবিন্দবাবু বলেন, “সামাজিক মাধ্যমে যে কেউ যা খুশি লিখতে পারেন। কিন্তু যতক্ষণ না সেটা সংবাদের সত্যতা যাচাই, ঘরানা, ব্যাকরণ মেনে পরিবেশিত হচ্ছে, সেটা খবরের পর্যায়ে পৌঁছচ্ছে না। সামাজিক মাধ্যমের বার্তা অনেকাংশেই ‘কনফ্লিক্টিং এবং কনফিউসিং’।

আঞ্চলিক ভাষায় সংবাদ পরিবেশন সম্পর্কে তাঁর ভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, “আমি আঞ্চলিক ভাষা কথাটা ব্যবহার করব না। বলব ভারতীয় ভাষা। আমি ‘অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অফ মাস্টার প্রিন্টার্স’-এর সাধারণ সম্পাদক এবং এর মুখপত্রের সম্পাদক হিসাবে বিভিন্ন জায়গার নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রতিটা ভাষার একটা মাধুর্য আছে। আমার মাতৃভাষা মরাঠি। হিন্দি, ইংরেজি জানি। এ ছাড়া গুজরাতি, পঞ্জাবী সামান্য বুঝি। এটুকু বুঝি ভাষা হচ্ছে অন্তরের আকুতি। এটাকে মর্যাদা দিতেই হবে। না হলে দেশকে চেনা যাবে না।”

সাংবাদিকদের উদ্দেশে কোনও বার্তা? অরবিন্দবাবুর জবাব, “ওই যে বললাম, দেশকে চেনা দরকার। ২০০৯-’১০ পর্যন্ত আমি ছিলাম বিশ্বপথিক। কখনও বছরে ৩-৪ বার বিদেশে গিয়েছি। তার পর আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম ভারতকে কতটা জেনেছি? ‘বাই চয়েস’ গত এক যুগে আর বিদেশে যাইনি। দেশের নানা প্রান্তে মানুষের অনুভবের পরশ পাওয়ার চেষ্টা করেছি। ভগবানই আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে প্রার্থনা করি, আবার যেন এদেশেই জন্ম হয় আমার। সাংবাদিক, দেশবাসী সবাইকে তাই আর্জি, দেশকে চিনুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *