মেয়েরা বলি হবে না, লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন করুন : নিধি ত্রিপাঠি

জয়পুর, ২৬ নভেম্বর (হি.স.): অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) বিদায়ী জাতীয় সাধারণ সম্পাদিকা নিধি ত্রিপাঠি বলেছেন, তিনি জাতীয় শিক্ষা নীতির নামে ছাত্রদের কাছ থেকে নির্বিচারে ফি আদায় সহ্য করবেন না। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের উচিত বাজেটে জাতীয় শিক্ষা নীতির (এনইপি) জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করা। লাভ জিহাদের প্রশ্নে তিনি বলেন, মেয়েরা বলি হবে না, লাভ জিহাদ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজ্য সরকারের উচিত এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করা। এমনই অনেক বিষয় নিয়ে নিধি ত্রিপাঠীর সঙ্গে হিন্দুস্থান সমাচারের কথোপকথনের মূল অংশ-

প্রশ্ন- স্বদেশী ও স্বনির্ভরতার পথে এবিভিপি-র প্রয়াস কী?উত্তর- এবিভিপি-র স্পষ্ট মতামত, আমরা যদি একটি আত্মনির্ভর ভারত গড়তে চাই, তবে আমাদের ভারতীয় পণ্যের উপর নির্ভর করতে হবে। এ ব্যাপারে দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার এবং আরও বেশি করে দেশীয় সামগ্রীর প্রচার আবশ্যিক। এর সচেতনতা সমগ্র যুব সমাজের মধ্যে থাকা উচিত। জয়পুরে অনুষ্ঠিত ৬৮ তম জাতীয় সম্মেলনে আত্মনির্ভর ভারতে যুবসমাজের ভূমিকার উপর একটি অধিবেশন চলাকালীন কর্মীরা শপথ নেন। এর মাধ্যমে তরুণদের সচেতন করার চেষ্টা করা হবে। এবিভিপি “সাবিষ্কার” নামে একটি শাখাও চালায়, যা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিশেষ করে স্টার্টআপ এবং উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। এর মাধ্যমেও বর্তমানে এবিভিপি আত্মনির্ভরশীল এবং স্বনির্ভর ভারত নিয়ে আলোচনা করছে।প্রশ্ন- পরিবেশ নিয়ে ছাত্র পরিষদের এ পর্যন্ত কী প্রচেষ্টা রয়েছে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

উত্তর- পরিবেশের ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য এবিভিপি-র বিকাশের জন্য একটি ছাত্র কার্যকলাপ রয়েছে। এর মাধ্যমে এবিভিপি জল, জঙ্গল, জমি ও প্রাণীর কথা বলে। দুই-তিন মাস আগে এবিভিপি বৃক্ষ মিত্র নামে একটি প্রচার শুরু করেছিল, এর মাধ্যমে কর্মীরা সারা দেশে প্রায় ২৩ লক্ষ চারা রোপণ করেছিল। কার্যকর্তারা নিজেদের জন্মদিনে চারা রোপণ করছেন এবং তা রক্ষাও করছেন। সম্মেলন ও শ্রেণি প্লাস্টিকমুক্ত রাখার চেষ্টা চলছে। সকল কর্মসূচি, প্রচারাভিযান ও আন্দোলনে শূন্য খাদ্য অপচয় অনুসরণ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন- দেশে বিশেষ করে গ্রামে সম্প্রীতির অভাব রয়েছে, এ বিষয়ে বিদ্যার্থী পরিষদ কী ভাবছে?উত্তর- এবিভিপি-র পূর্ণ আস্থা আছে “হিন্দব: সোদ্রা: সর্বে, না হিন্দু পতিতো ভবেত”। ভারতের সকল নাগরিক সমান। কোনও ব্যক্তির প্রতি কোনও বৈষম্য করা চলবে না। কোনও বৈষম্য থাকলে তা দূর করতে অনুভূতি শিবির আয়োজন করে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি করা হয়। “স্টুডেন্ট ফর সার্ভিস”-এর মাধ্যমে তারা বস্তিতে যায় এবং কাজ করে। বস্তিতে আমরা জাত দেখি না। উদ্দেশ্য সমাজের সেবায় আসা, সমাজে কোনও ধরনের ব্যবধান থাকলে তা মেটানোর কাজ সারা দেশেই করছেন কার্যকর্তারা।প্রশ্ন- দেশে এবিভিপি-র বিরুদ্ধে ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা চলছে, এ বিষয়ে আপনি কী বলতে চান?

উত্তর- সত্য বেশিদিন গোপন থাকে না। আমাদের কাজ সমাজের জন্য। চোখের সামনে থেকে সে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে না। বিরোধীরা হয়তো এবিভিপি নিয়ে অনেক অভিযোগ করছে, কিন্তু আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন। তাই মেয়েরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছে। আদিবাসী সহ সমাজের সমস্ত অংশের এবিভিপি-তে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।

প্রশ্ন- বর্তমানে এবিভিপি-র সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?উত্তর- চ্যালেঞ্জ সবসময় আমাদের জন্য একটি সুযোগ। এমনকি করোনার সময়েও আমরা চ্যালেঞ্জকে সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে এগিয়েছি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও এগিয়ে যেতে হবে। ক্যাম্পাসেও রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। এখানেও আমরা সুযোগ খুঁজি। ছাত্ররা সেগুলি মোকাবেলা করার শক্তি দেয়। আসুন একটি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের পরিমার্জিত করার চেষ্টা করি।প্রশ্ন- সম্মেলনে বিশেষ কী আছে?

উত্তর- অধিবেশনে পাঁচটি প্রস্তাব আনা হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ফি বাড়ায়। আমাদের দাবি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বাজেটে নতুন শিক্ষানীতির জন্য তহবিলের ব্যবস্থা করুক। সরকার জাতীয় কবি সুব্রামানিয়াম ভারতীর জন্মদিন ১১ ডিসেম্বরকে ভারতীয় ভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর আয়োজনে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে। রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ইউজিসি নিট পরীক্ষা বছরে দু’বারের পরিবর্তে একবার নেওয়া হচ্ছে। সেজন্য ঘুমন্ত প্রশাসনকে জাগানোর প্রস্তাব পাস করা হবে। আমরা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার স্বার্থে পিএফআই-এর উপর নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানাই। প্রস্তাবের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানানো হবে। ভারতীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির পরিপ্রেক্ষিতে জি-২০ প্লাটফর্মের বৈশ্বিক ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

প্রশ্ন- মহিলা নিপীড়ন, লাভ জিহাদ ইত্যাদির ক্রমবর্ধমান ঘটনা সম্পর্কে আপনার মতামত কী?উত্তর- আমরা সবসময় নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে। এর প্রতিফলন আমাদের প্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান। লাভ জিহাদ নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজ্য সরকারের উচিত এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে কন্যাদের বলি হতে হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *