কলকাতা, ২০ নভেম্বর (হি.স.) : টলিউড আজ স্তব্ধ। কান্নায় ভেঙে পড়েছে ঐন্দ্রিলা শর্মার পরিবার। ভক্তদের মনেও কালো মেঘ। অভিনেত্রীর ভালবাসার মানুষেরাও আজ শব্দ হারিয়েছেন। বহু যুদ্ধে জয়ী হয়েও ফিরে এল না ঐন্দ্রিলা। এর কিছুক্ষণ বাদেই শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক প্রকাশ হয়েছে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। ‘এত আনন্দ আয়োজন, সবই বৃথা তোমায় ছাড়া’, ‘দাদাগিরি’তে ঐন্দ্রিলার সেই দিনের ভিডিও রীতিমত ভাইরাল।
ঐন্দ্রিলার চলে যাওয়ায় একাধিক সেলিব্রিটি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। নিজের ফেসবুক পেজ থেকে শোক প্রকাশ করলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় লেখেন ‘ভাল থেকো ঐন্দ্রিলা….তোমার ইচ্ছেশক্তি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকুক…..’।
জিয়নকাঠিতে তাঁর বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ভরত কল৷ আজ পর্দার মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়লেন অভিনেতা৷ ভরতবাবু জানিয়েছেন, “ভেবেছিলাম ফিরে আসবে ঐন্দ্রিলা৷ ওর থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল৷ মা-বাবাকে খুব ভালবাসত৷ বাবা মেয়ের ওমন সুন্দর সম্পর্ক খুব কম হয়৷ রুখে দাঁড়ানোর মানসিকতা ছিল৷ এত অসুখ, তাকে দেখে বোঝাই যায়নি৷ আর সব্যসাচীর কথা না বললে তো সবটাই অসম্পূর্ণ৷ সবাই, গোটা ইন্ডাস্ট্রি প্রার্থনা করেছে মেয়েটার জন্য৷ ঐন্দ্রিলার মা, বাবা, সব্যসাচী যেন শক্তিটা পায়৷ যারা ক্যানসার পেশেন্ট তাঁরা বোঝেন এর কষ্টটা৷”
অভিনেত্রী কণীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “ঐন্দ্রিলা মানেই সব্যসাচী। আমি একবারই জীবনে দেখা করেছি। আমি যখন আমার লড়াই লড়তে যাচ্ছিলাম, তখন ওকে একবার জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম.. ও কোথাও সাহস জুগিয়েছিল আমার লড়াইটা লড়ার জন্য। সব্যসাচীকে অসম্ভব ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম, এইভাবে আঁকড়ে ধরা যায় বলে। আমি আসলে এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। ওই বিশ্বাস করে নিতে হবে, তবে ওই হাসিটা থেকে যাবে কোথাও মনের মধ্যে, লড়তে হবে ওই মনোবলটা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমি এখনও অবধি ধাতস্ত নই এই খবরটা নিয়ে। ভেবেছিলাম এই লড়াইটাও জিতে যাবে। প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করতাম।”
অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ স্তব্ধ। তিনি জানান, “একটা বাচ্চা মেয়ে, বছর ২৪-এর মেয়েটা, দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, খুব খারাপ লাগছে। কিছুদিন একটা দোলাচলে ছিলাম। কালকেও সব্যসাচীর সঙ্গে, জিতুর সঙ্গে কথা হয়েছে। বাঁচার খুব ইচ্ছে ছিল, তারজন্য তো বারবার ফিরে আসছিল। এত মানুষের চাওয়া, প্রার্থনা, ইচ্ছে পূরণ হতে দিল না।”
একটি নামী টিভি চ্যানেলের প্রাক্তন অ্যাঙ্কর ও কন্টেন্ট এডিটর, বর্তমানে বাঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পদস্থ আধিকারিক নেহা ভট্টাচার্য। তিনি সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, “সিরিয়াল দেখা হয়ে না। তাই সত্যি বলতে ঐন্দ্রিলার কোনো সিরিয়াল আমি দেখিও নি। বিগত কয়েক মাস ধরে খবরের মাধ্যমেই তাকে চেনা। ২৪ বছর বয়সেই এতো লড়াই, কতজনই বা পারে! হঠাৎ খানিক আগেই দেখলাম মেয়েটা আর নেই। এতদিন ধরে খালি মনে হচ্ছিল এই লড়াই শেষেও ঐন্দ্রিলা ঠিক ফিরবে.. কিন্তু ‘প্রতিবারের মতো ফিনিক্স হয়ে আর ফেরা হল না’।
এটাই আশা করবো তোমায় দেখে যেনো এরকম অনেক ঐন্দ্রিলা শক্তি পায়, মনোবল পায়। ঐন্দ্রিলা শর্মা তুমি যেন ও হেনরির ‘দ্য লাস্ট লিফ’ গল্পের সেই শেষ পাতাটা, যাঁকে দেখে প্রেরণা পাবে হাজার হাজার মানুষ। ভালো থেকো বিদায় বেলায়!“
অভিনেতা জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। ওর আগেও শরীর খারাপ হয়েছিল। ও লড়াই করে ফিরে এসেছিল। আমরা আশা করেছিলাম এবারও ফিরে আসবে। ওর পরিবারের জন্য খুব খারাপ লাগছে’’।
সদ্য রোগমুক্ত ঐন্দ্রিলার মন ভাল রাখতে তাঁকে নিয়ে প্রেমিক সব্যসাচীর নাচের ভিডিও সহ প্রিন্স রায় লিখেছেন, “সুতোটা ছিঁড়ে গেল। থেমে গেল লড়াই। জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে জিতিয়ে দিয়ে গেল ভালোবাসাকে। হৃদয়ের মৃত্যু জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে। তোমাদের স্থান অনন্ত জুড়ে।“
বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কাবেরি চ্যাটার্জী লিখেছেন, “এতো মানুষের প্রার্থনা এত মানুষের ভালোবাসা সব ত্যাগ করে তোমায় চলে যেতে হলো বহুদূরে। এই কদিনে তুমি আমাদের সকলের ঘরের মেয়ে হয়ে গিয়েছিলে, প্রতি নিয়ত প্রার্থনা করেছি ঈশ্বরের কাছে তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ফিরে এসো আমাদের সকলের মাঝে, কিন্তু তা আর হলো না, পরপারে ভালো থেকো ঐন্দ্রিলা।”
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিনের যুদ্ধ থামল। রবিবার সকালে প্রয়াত অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। মাত্র ২৪-এই থেমে গেল তাঁর পথ চলা। রেখে গেলেন প্রেমিক সব্যসাচী চৌধুরী, মা, বাবা এবং দিদিকে। আচমকাই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছিল। অস্ত্রোপচারও করা হয়। তার পর এক সপ্তাহে একাধিক বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দীর্ঘ লড়াই চালালেও শেষ রক্ষা হল না। ডাক্তারদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে অকালেই থেমে গেল তাঁর পথ চলা।

