দুর্গাপুর, ৫ নভেম্বর (হি. স.) : ফের জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে অবৈধ কয়লা পাচারের রমরমা কারবার। পুলিশি তৎপরতাই পাচারের আগে ধরা পড়ল অবৈধ কয়লা বোঝাই দুটি লরি। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪০ মেট্রিক টন কয়লা। শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে ১৯ নং জাতীয় সড়কের ওপর অন্ডাল টপলাইন এলাকায়। ঘটনাকে ঘিরে আবার প্রশ্নের মুখে অবৈধ কয়লার রমরমা কারবারের সঙ্গে তাবত খনি অঞ্চলের জাতীয় সম্পত্তির নিরাপত্তায়। লরি দুটির চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, কয়লাকান্ডে তোলপাড় গোটা রাজ্য। কেন্দ্রীয় গয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও রাজ্যের সিআইডি অবৈধ কয়লার চোরাচালনে ধরপাকড় শুরু করেছে। ঘটনায় একাধিক কয়লা মাফিয়া ধরা পড়েছে। ঘটনার তদন্তে জোর তৎপরতা শুরু করেছে রাজ্য কেন্দ্র উভয় গয়েন্দা বিভাগ।এমনকি খনি সংস্থা ইসিএলের বেশ কয়েকজন আধিকারিকও গ্রেফতার হয়েছে। কয়লা পাচার কাণ্ডে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থার। একইসঙ্গে তদন্তকারীদের র্যাডারে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট শিল্প সংস্থা।পাশাপাশি আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ অবৈধ কয়লা পাচার রুখতে সক্রিয়। গত কয়েক মাস ধরে বেশ কিছু অবৈধ কয়লা পাচারের হদিশ উদ্ধার করেছে।
ঘটনায় জানা গেছে, শুক্রবার রাতে জাতীয় সড়কের অন্ডালের টপলাইনে নাকা চেকিং চলছিল পুলিশের। ওইসময় আসানসোল দিক থেকে দুটি সন্দেহজনক লরি দুটি আটক করে পুলিশ। তল্লাশী চালাতেই কয়লা বোঝাই লরি দুটি কোন বৈধ কাগজ দেখাতে পারেনি। তারপরই পুলিশ কয়লা বোঝাই লরি দুটি আটক করে। লরি দুটিতে ৪০ মেট্রিক টন কয়লা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। কয়লা পাচারের অভিযোগে লরির চালক দুজনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ধৃতদের নাম গৌরীশংকর মাহাতো ও ফজিজুল মীর। ধৃত গৌরীশংকর পাণ্ডবেশ্বরের হরিপুর ও ফজিজুল মীর গলসির পুরষা এলাকার বাসিন্দা। লরি দুটিতে বারাবনি থানার গৌরন্ডি থেকে পাচারের উদ্দেশ্যে কয়লা ভর্তি করে কলকাতার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। শনিবার ধৃতদের দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের জামিন খারিজ করে দেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টম্বর গোপনসূত্রে খবর পেয়ে দুর্গাপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের পারুলিয়ায় হানা দেয় পুলিশ। গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ কয়লা বোঝাই ৩ টি লরি বাজেয়াপ্ত করে। ঘটনায় চালকসহ চারজন কে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা খনি অঞ্চল থেকে ওই কয়লা বোঝাই লরি গুলি আসছিলো দুর্গাপুরের দিকে। অনুমান শহর লাগোয়া কোন লিঙ্ক রোড দিয়ে হাইওয়ে ধরার চেষ্টায় ছিল লরিগুলি। পুলিশ খবর পাওয়া মাত্র অভিযান চালিয়ে পারুলিয়া এলাকা থেকে ওই তিনটি গাড়ি আটক করে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনটি লরিতে ৭০ টন কয়লা বাজেয়াপ্ত হয়েছে। গত আগষ্ট মাসের শেষের দিকে দুর্গাপুর-ফরিদপুর থানার সরপি এলাকায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর আড়ালে অবৈধ কয়লা কারবারের হদিশ পায় পুলিশ। ঘটনায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর মালিশ যোগেশ রাজদকে গ্রেফতার করে। এবং বাজেয়াপ্ত করে ১০ মেট্রিক টন অবৈধ কয়লা। কয়েকদিন আগে কাঁকসার বাঁশকোপায় অবৈধ কয়লা বোঝাই তিনটি লরি ধরা পড়ে পুলিশের জালে। ঘটনায় দুজন চালক গ্রেফতার হয়। ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ আসানসোলের সালানপুরে একটি বেসরকারী ফ্যাক্টরীর কয়লা পাচার চক্রের হদিশ পায়। যেখান থেকে ওইসব কয়লা পাচার হচ্ছিল। সেখানে কয়লা ছাড়াও জেসিবি মেশিন বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তারপর এদিনের ঘটনায় আবারও নতুন করে কয়লা পাচারের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে,” ধৃতদের হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”