গুয়াহাটি, ১৫ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : মধ্য অসমের মরিগাঁও জেলার লাহরিজান থানায় জনৈক নাবালককে নিগৃহীত করার দায়ে অসম সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)। ক্ষতিপূরণবাবদ নগদ ২৫ হাজার টাকা দিতে বলেছে এনএইচআরসি।
আজ বৃহস্পতিবার জনতা ভবনের এক সূত্রের খবরে প্রকাশ, ১৪ সেপ্টেম্বর অসমের মুখ্যসচিব পবনকুমার বড়ঠাকুরের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে এনএইচআরসি-র ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) ইন্দ্রজিৎ কুমার রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, মরিগাঁও জেলার যে থানায় ১৩ বছর বয়সি নাবালককে নিগ্রহ করা হয়েছে, সেই থানার অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে শীঘ্র বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি চার সপ্তাহের মধ্যে তাকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, চলতি বছরের ৯ মার্চ, লাহরিজান থানার জনৈক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) উপেন বরদলৈ থানা চত্বরে পার্ক করা একটি বাজেয়াপ্ত গাড়ি থেকে কোনও কিছু চুরি করার চেষ্টা করলে ছেলেটিকে আটক করেছিলেন। পরবৰ্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচারিত একটি ভিডিও দেখা যায়, ওই এএসআই থানার ভিতরে লাঠি দিয়ে নাবালক ছেলেটিকে উপর্যুপরি মারধর করছেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুয়াহাটির বাসিন্দা জনৈক মনোজিৎ সিংহের একটি অভিযোগের ভিত্তিতে এনএইচআরসি এই নির্দেশ জারি করেছে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, একজন পুলিশ অফিসার ওই নাবালকের মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা হয়েছে। ঘটনা সম্পৰ্কে রাজ্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ যে রিপোৰ্ট জমা দেওয়া হয়েছিল, তাতে সরকারি কর্মচারী তথা পুলিশ অফিসারকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সুরক্ষা আইনের ১৮ ধারার অধীনে মুখ্যসচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছিল। তাতে ঘটনা সম্পর্কে ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতেও বলেছিল এনএইচআরসি। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন ত্রাণ কমিশনের নির্দেশের পরও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ ওই টাকা প্রদান করা হয়নি।
এনএইচআরসি-র ডেপুটি রেজিস্ট্রার (আইন) ইন্দ্রজিৎ কুমারের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, গত ২২ জুলাই কমিশন কর্তৃক জারিকৃত কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব, এখন পর্যন্ত কেন পাওয়া যায়নি? তাই বর্তমান মামলার ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গাফিলতি করছেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে কি?
ভুক্তভোগী নাবালককে ক্ষতিপূরণের অৰ্থ আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিতরণ করা হবে তা নিশ্চিত করতে মুখ্যসচিবকে বলেছে মানবাধিকার সংস্থা। এছাড়া আগামী ২২ অক্টোবরের মধ্যে অর্থপ্রদানের প্রমাণ সহ কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট কমিশনে জমা দিতেও নির্দেশিকায় বলা হয়েছে।
তবে মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার অপর্ণা এন এনএইচআরসি-তে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। এতে তিনি লিখেছিলেন, ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশের অভিযুক্ত এএসআই উপেন বরদলৈয়ের বিরুদ্ধে লাহারিঘাট থানায় জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের নির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে ২৫ মে তাঁর বিরুদ্ধে একটি চার্জশিটও দাখিল করা হয়েছিল। কেবল তা-ই নয়, শৃঙ্খলাভঙ্গ, চরম অসদাচরণ এবং সরকারি কর্তব্যে অবহেলার জন্য এএসআই বরদলৈকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। তাছাড়া নাবালক ছেলেটি মানসিক আঘাত না পায়, সেজন্য প্রশিক্ষিত মনোস্তত্ববিদের দ্বারা কাউন্সেলিঙের ব্যবস্থা করা হয়েছে, রিপোর্টে লিখেছিলেন মরিগাঁওয়ের পুলিশ সুপার।

