আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর : ২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লকে বিশেষ প্রকল্প রূপায়িত হবে রাজ্যে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার বিকাশ ও জনজাতিদের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থানুকূল্যে প্রায় ১,৩০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। রাজ্যের ২৩টি জনজাতি অধ্যুষিত ব্লক বিশেষ করে ১২টি অ্যাসপিরেশনাল ব্লকে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানান জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া। জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী জানান, এই প্রকল্পে মূলত জনজাতিদের জীবিকা নির্বাহ, তাদের জীবনমান উন্নয়ন সহ শিক্ষা যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ৫ বছরের জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। তিনি রাজ্যে রূপায়িত মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের জনজাতিদের আর্থিক উন্নতির কথাও উল্লেখ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী জানান, বর্তমান রাজ্য সরকার ক্ষমতায় এসে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যে ১৬টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি জানান, জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি তাদের আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে সাপ্লিমেন্টারি এডুকেশন ফর এলিমেন্টারি ক্লাসেস (এসইইসি)-২০২২ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে সারা রাজ্যে ৩০০টি কোচিং সেন্টার খোলা হবে। রাজ্য সরকারের জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের পরিচালনায় এই স্কিমের আওতায় শিক্ষা প্রদান করা হবে। তিনি জানান, জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষা প্রদান করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার শিক্ষামূলক বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের প্রতি দিন ৬৫ টাকা করে ছাত্রাবাস বৃত্তি প্রদান করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট ২৭,৩৬১ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রাবাস বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী জানান, করবং জনজাতিভুক্ত ২৩টি পরিবারকে জলের ট্যাঙ্ক ও ফিল্টার দেওয়া হয়েছে। এই লুপ্তপ্রায় করবং জনজাতি সম্প্রদায়ের বিকাশে রাজ্য সরকার আগামীদিনে আরও বেশকিছু উদ্যোগ নেবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল রাজ্যে দপ্তর কর্তৃক রূপায়িত নানা কর্মসূচি সম্পর্কে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে জনজাতিদের জন্য ছাত্রাবাস বৃত্তি, প্রাকমাধ্যমিক (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম), প্রাকমাধ্যমিক (নবম থেকে দশম) তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলে ধরেন। তাছাড়াও তিনি জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাক্ষেত্রে এককালীন আর্থিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন। বৈঠকে দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে মোট ২৯ জন জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৬টি এসটি বয়েজ এবং গার্লস হোস্টেল নির্মাণের কাজ চলছে। প্রধান সচিব জানান, বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৩২টি বনধন বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন রাজ্যে চালু রয়েছে। জনজাতি কল্যাণ দপ্তর সহ বিভিন্ন সহযোগী দপ্তরের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে রাবার চাষ করা হবে। তিনি জানান, বনাধিকার আইনে জমির পাট্টা ডিমার্কেশনের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য বনাধিকার অ্যাপ প্রয়োগ করা হবে। জমির অধিকার প্রাপ্ত ৩২,৭২২টি পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গৃহ দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধান সচিব জানান, ৫২ জন জনজাতি যুবকদের ক্ষুদ্র পরিবহণ ব্যবসা সহ কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়াও জনজাতি দপ্তরের আরও বেশ কিছু রূপায়িত কর্মসূচি সমূহ সম্পর্কেও সাংবাদিক সম্মেলনে তুলে ধরেন দপ্তরের প্রধান সচিব পুনীত আগরওয়াল। সাংবাদিক সম্মেলনে রেশম শিল্প দপ্তরের কর্মসূচি রূপায়ণের কথাও তুলে ধরেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিষেক চন্দ্রা। তিনি জানান, ইনটেনসিভ বাইভোল্টাইন সেরিকালচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট রূপায়ণের জন্য রাজ্যের ৬টি ব্লককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা বিশাল কুমার।