Suicide:ছেলে ও বৌমার মানসিক অত্যাচার আত্মঘাতী বাবা, আশঙ্কাজনক মা, প্রতিবেশীদের রোষের মুখে বৌমার বাবা

দুর্গাপুর, ২ সেপ্টেম্বর (হি. স.) রোজগার কম ছেলের। তাতে খরচের চাহিদা মেটাতে না পারায় বৌমার সঙ্গে ছেলের অশান্তি নিত্যদিনের। আর তাদের অশান্তির মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল মা-বাবা। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হল বাবার, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি মা। ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা। বৌমার ও তার বাপের বাড়ীর লোকজনের ওপর ক্ষোভে ফেটে পড়ল প্রতিবেশীরা। পুলিশের সামনে মেয়ের বাবাকে নির্মম মারধর প্রতিবেশীর। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দূর্গাপুর স্টিল টাউনশিপের রানা প্রতাপ রোডে।

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, মৃতের নাম চিত্তরঞ্জন দাস(৭২)। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মৃতের স্ত্রী লিপিকা দাস আশঙ্কাজনক অবস্থা দুর্গাপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম সঞ্জয় দাস। তিনি পেশায় ফটোগ্রাফার। তাঁর সঙ্গে দয়ানন্দ এভিনিউ এলাকার বাসিন্দা সোমা দাসের বিয়ে হয়। প্রায় ১৪ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল৷ তাদের ১২ বছরের এক পুত্রসন্তান রয়েছে। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই গৃহবধূ নির্যাতন করতো স্বামী সহ শ্বশুর শাশুড়ীর ওপর। বেগতিক দেখে প্রতিবেশীরা মাঝে মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতেন। গৃহবধূর বাপের বাড়ির পাল্টা অভিযোগ শ্বশুড়বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। জামাই রোজগার করতে পারে না। মেয়ের সংসারে প্রায়ই দোকান বাজার করে দিতে হত। তাই নিয়ে সংসারে ছেলে সঞ্জয় ও বৌমা সোমা দাসের নিত্যদিন ঝগড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও সংসারের খরচ চালাতো চিত্তরঞ্জনবাবু দাবী প্রতিবেশীদের। ছেলে কোন কাজ না করায় প্রায়দিনই ছেলে ও বৌমার ঝগড়া লেগে থাকত। তার জেরে ভোগান্তির শিকার হতেন বৃদ্ধ মা-বাবা। এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতেন বলে অভিযোগ। এমনকি সময়ে রান্না করার খাবারও জুটত না। তাই রান্নার লোক রেখেছিলেন চিত্তরঞ্জনবাবু। বৃহঃস্পতিবার রাতে অশান্তি চরম আকার নেই। শেষমেশ পারিবারিক অশান্তির কারণে বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জন বাবু লিপিকা দেবী আত্মঘাতী’র পথ খুঁজে নেন বলে এলাকাবাসী’র অভিযোগ। শুক্রবার সকালে চিত্তরঞ্জনবাবু ও লিপীকাদেবীর ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তাঁর ছেলে সঞ্জয়বাবু ডাকাডাকি করে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীদের খবর দেয়। প্রতিবেশীরা এসে দরজা খুলে দেখেন অচৈতন্য অবস্থায় ওই দম্পতি পড়ে রয়েছেন। তড়িঘড়ি দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালে ভর্তি করে প্রতিবেশীরা। সেখানেই বৃদ্ধ চিত্তরঞ্জনবাবুকে মৃত বলে ঘোষনা করে চিকিৎসকরা। এবং লিপিকাদেবীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুর্গাপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিকে খবর পেয়ে মেয়ের বাড়ীতে পৌঁছায় বৌমা সোমা দাসের বাবা-মা। বৌমা সোমা দাসকে দেখে মারমুখী হয়ে ওঠেন প্রতিবেশীরা। শুক্রবার বিকালে

চিত্তরঞ্জনবাবু’র মৃতদেহ এলাকায় আনতেই আশপাশের বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দুর্গাপুর থানার পুলিশ। অভিযুক্ত গৃহবধূ ও তার বাপের বাড়ি’র লোকজনের ওপর চড়াও হয় প্রতিবেশীরা। পুলিশের সামনে সোমা দাসের বাবাকে মারধর শুরু করে ক্ষুব্ধ প্রতিবেশীরা। ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পরিস্থিতি সামাল দেয় পুলিস। চিত্তরঞ্জনবাবুর ছেলে সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমার স্ত্রী সোমা, বিয়ের পর থেকেই আমার ওপর, মা- বাবা’র ওপর অত্যাচার করত। রান্না করে নিজেরা খেত। তবুও মা-বাবা ও ঠিক মত খাবার খেতে দিত না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে গৃহবধূ সোমা দাস বলেন, “আমার স্বামী রোজগার করে না। বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসে সংসার চালাই। আমি ওদের ওপর অত্যাচার করতাম না। ওরাই আমাকে মারধর করতো৷” সোমা দাসের বাবা মিহির দাস বলেন,” আমার মেয়ের ওপর শ্বশুর বাড়ি’র লোকজন অত্যাচার করতো৷ জামাই কোন কাজ করত না। আমি প্রায়ই দোকান বাজার করে দিতাম। মেয়ের ওপর অত্যাচারে পুলিসের দারস্থও হয়েছিলাম।” আসানসোল – দুর্গাপুর পুলিস কমিশনারেটের ডিসি অভিষেক গুপ্তা বলেন, “এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”