ত্রিপুরায় একক শক্তিতে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন চাইছে বিজেপি, জনজাতি ভোট পাখির চোখ, নাড্ডার বক্তব্যে স্পষ্ট

আগরতলা, ২৯ আগস্ট (হি. স.) : একক শক্তিতে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন হোক বিজেপির, এমনটাই চাইছেন দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। ত্রিপুরা সফরে এসে তা একপ্রকার স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সাফ কথা, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরবে বিজেপি। এক্ষেত্রে আগে নিজেদের শক্তিশালী করতে হবে। তবে, সমমনোভাবাপন্ন দল আসতে চাইলে স্বাগত জানাবে বিজেপি।

এদিন তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে জনজাতি ভোট হবে বিজেপির পাখির চোখ। তাই তিনি জনজাতিদের উন্নয়নের জন্য একমাত্র ভাবে বিজেপি, বারেবারেই তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন। খুমুলুঙয়ে সভাও তারই অঙ্গ, সেকথাও তিনি স্বীকার করেছেন।     

এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় গত চার বছর ধরে বিজেপি সরকার পরিচালনা করছে। ইতিপূর্বে ৩৫ বছর বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল। তাঁরা দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেও মহিলাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য কাজ করেননি। ঠিক একই ভাবে ত্রিপুরার জনজাতি অংশের মানুষের উন্নয়নও তাঁরা এড়িয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরার যুব সমাজের জন্যও বামেরা কিছুই করেননি।

তাঁর কটাক্ষ, বামেদের মতোই ত্রিপুরায় কংগ্রেসও দীর্ঘ বছর শাসন করেছে। অথচ, তাঁরা ত্রিপুরায়শুধুই উগ্রবাদ ও অবৈধ অনুপ্রবেশকে উত্‍সাহিত করেছে। তাই ওই সময় ত্রিপুরায় উগ্রবাদ চরম পর্যায়ে ছিল। বনধ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ মাদক ব্যবসাকেও সিপিএম ও কংগ্রেস উত্‍সাহিত করেছে। কিন্ত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সার্বিক উন্নয়ন গতি ধরেছে, দাবি করেন তিনি। সাথে তিনি যোগ করেন, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করা হয়েছে। শিল্প সম্প্রসারিত হচ্ছে। জৈব কৃষি, পর্যটন শিল্প, খেলাধুলা ও পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।

বিজেপি সর্ব ভারতীয় সভাপতির বক্তব্য, ত্রিপুরায় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে গতি এসেছে। মৈত্রী সেতুর মধ্যে দিয়ে সড়ক যোগাযোগ উন্নত হয়েছে। তেমনি আগরতলা ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি ট্রেন সংযোগ স্থাপিত হওয়ার মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ত্রিপুরা গেটওয়ে হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মহিলাদের স্বশক্তিকরণ, স্ব-সহায়ক দলগুলিকে কাজের সুবিধা করে দেওয়া এবং তাদের উত্‍পাদিত সামগ্রির বাজার জাত করণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, চাকরিতে মহিলাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে বর্তমান সরকার।

এদিন তিনি বলেন, ভারত সরকার বিশ্ব ব্যাংক থেকে সহায়তা নিয়ে জনজাতি কল্যাণে ১৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। মূলত, ওই অর্থ যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জনজাতিদের জীবনজীবিকার মানোন্নয়নে খরচ করা হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করেছে। প্রত্যেক মাসে সাড়ে ছয় হাজার টাকা আয় করা কৃষক এখন মাসে ১১ হাজার টাকা উপার্জন করছে। তাঁর দাবি, ত্রিপুরার আর্থিক বিকাশে বাজেট ১২৬০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৭০০০ কোটি টাকা হয়েছে।

আজ তিনি সাফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্যই জনজাতি কল্যাণ সম্ভব হচ্ছে। দেশের সর্বোচ্চ পদে জনজাতি মহিলাকে বসিয়ে তিনি তা প্রমাণ করেছেন।

এদিন তিনি খুমুলুঙয়ে জনসভাতেও জনজাতিদের ভাবাবেগে স্পর্শ করার জন্য বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন, দেশে যখনই সংকট এসেছে, তখনই একজোট হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে জনজাতি সমাজ। তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সমাজকে সম্মান জানিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পদে একজন জনজাতি মহিলাকে বসিয়েছেন।

তাঁর বক্তব্য, দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতিকে মুখ্য ধারায় যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ করার জন্য ত্রিপুরার ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের অবদান অনস্বীকার্য। আত্মনির্ভর সমাজের কল্পনা জনজাতীয় জীবনের সাথে জুড়ে রয়েছে।

সাথে তিনি যোগ করেন, সরকারে জনজাতি সমাজ থেকে সবচাইতে বেশি সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দিয়েছেন। বর্তমানে কেন্দ্রে আট জন মন্ত্রী এবং ত্রিপুরায় পাঁচজন মন্ত্রী জনজাতি সম্প্রদায় ভুক্ত রয়েছেন।তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের কথা ভেবে দেশে জনজাতি মন্ত্রক গঠন করার কৃতিত্ব প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ীর।