আজ ভাদ্র মাসের পয়লা তারিখ, শ্রীহরিনামে মুখরিত অসমের আকাশ-বাতাস, রাজ্যবাসীর শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রার্থনা মুখ্যমন্ত্রীর

গুয়াহাটি, ১৮ আগস্ট (হি.স.) : আজ পবিত্ৰ ভাদ্র মাসের পয়লা তারিখ। শ্রীহরিনাম ও গুরুদেব শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের সৃষ্টিরাজি গীত সম্ভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে অসমের আকাশ-বাতাস। আজ থেকে মাসব্যাপী সমগ্র রাজ্য জুড়ে ধর্মীয় পীঠস্থান যেমন সত্র, নামঘরগুলিতে শুরু হয়েছে পালানাম।

মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ও মাধবদেব প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ঢেকিয়াখোয়া বড় নামঘর, কলিয়াবর, বটদ্রবা, বরপেটা ইত্যাদি প্রধান নামঘরে আজ পবিত্র ভাদ্র মাসের প্রথম দিন থেকে মাসব্যাপী পালানাম থেকে শুরু হয়েছে পালানাম মহাযজ্ঞ। প্রতি বছরের মতো এ-বারও ধারাবাহিক ভাবে এই পালানামের জন্য চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী মাসব্যাপী পালানামে যোগদান করতে এসেছেন রাজ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কমপক্ষে ৩০ লক্ষ বৈষ্ণব ভক্ত এসেছেন ঢেকিয়াখোয়া নামঘরে। রাজ্যের বিভিন্ন নামঘর ও সত্রে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা সকাল সকাল ভিড় করেন না-দেখা মহাপুরুষের আশীর্বাদ নিতে।
আজ সকালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাও তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পবিত্ৰ ভাদ্র মাসের প্রথম দিন বৈষ্ণব ভক্তদের প্রণাম জানিয়ে আপামর জনসাধারণের মঙ্গল কামনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন, ‘আধ্যাত্মিকতায় ভরপুর পবিত্র মাস হল ‘ভাদ্র’। মহাপুরুষ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং শ্রীশ্রী মাধবদেবের পুণ্যতিথি এই ভাদ্র মাসে শ্রীহরিনামে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে৷ ভগবানের শ্রীচরণে নিজেদের উৎসর্গ করে ঐক্য ও সম্প্রীতির বটবৃক্ষের নীচে জড়ো হয়ে সমাজকে সব দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেদের নতুন করে স্মরণ করার সুযোগ করে দেয় ভাদ্র মাস। আজ, পয়লা ভাদ্র মাসে আমি প্রত্যেক অসমিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য শ্রীপ্রভুর শ্রীচরণে প্রার্থনা করছি।’
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করতে ইতিমধ্যেই পবিত্র মাসে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত ভক্ত বৈষ্ণবদের স্বাগত জানিয়েছে নামঘর পরিচলন সমিতিগুলিও৷
উজান থেকে নিম্ন অসম, প্রতিটি নামঘর ও সত্রে এক মাসব্যাপী পালানাম শুরু হয়েছে। সকালে শ্রীখোল-তাল-নাগারা-শঙ্খ ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে গোটা অসম। ভাদ্র মাসকে অসমিয়া সামাজিক জীবনে একটি পবিত্র মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই পবিত্র ভাদ্র মাসে উভয় গুরু শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং শ্রীশ্রী মাধবদেবের প্রয়াণ ঘটেছিল। ভগবান শ্রীকৃষ্ণেরও জন্ম হয়েছিল ভাদ্র মাসে।

নগাঁও জেলার কলিয়াবরে জাতি-ধৰ্ম নিৰ্বিশেষে বিগত এক মাস ধরে ছোট ছোট শিশুদের গুরুদেবের অপূৰ্ব সৃষ্টি অংকীয়া ভাওনার ‘গাণিকা’ খোল-তাল-নাগারা গুরু পূৰ্ণানন্দ বৈশ্যের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বৃহত্তর অসমিয়া জাতি গঠনের সেরা উদাহরণ দেখা গেছে কালিয়াবরের বড়লিগাঁও গ্রামে। দুই মহাপুরুষের অমর সৃষ্টির প্রতি আকৃষ্ট বাঙালি জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরাও। মাসব্যাপী এই প্রশিক্ষণে বাঙালি শিশুরা দেববাদ্য খোল, তাল সুন্দর করে বাজাতে শিখেছে।