অসমের প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী ডা. অৰ্ধেন্দু দে আর নেই, শোকাহত মুখ্যমন্ত্ৰী হিমন্তবিশ্ব, সাংবাদিক অমল গুপ্ত সহ বহুজন

গুয়াহাটি, ২৭ জুলাই (হি.স.) : অসমের প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী ডা. অৰ্ধেন্দুকুমার দে আর নেই। চিকিৎসকদের যাবতীয় চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ বুধবার ভোররাত ১.৩০ মিনিটে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ডা. দে। দীৰ্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে প্রয়াতের বয়স ছিল ৮১ বছর। আজই তাঁর নির্বাচন কেন্দ্র তথা স্বগৃহ হোজাইয়ে প্ৰাক্তন মন্ত্ৰীর নশ্বর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁরই নিজের হাতে নির্মিত শ্মশান ‘শান্তিবন’-এ প্ৰয়াত বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, জানান ছেলে অনিরুদ্ধ।রাজ্যের প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী ডাক্তার অৰ্ধেন্দুকুমার দে-র প্রয়াণে গভীর শোকাহত অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, মন্ত্ৰী পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক অমল গুপ্ত সহ বহুজন। নিজের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “প্রবীণ নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী এবং হোজাইয়ের বিধায়ক ডা. অর্ধেন্দু দে-র মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি জনকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তাঁর শোকাহত পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি পরমেশ্বরের কাছে প্রয়াতের বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করছি। ওম শান্তি!”

১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি হোজাইয়ের বিধায়ক ছিলেন। মাঝে এক মেয়াদের পর ফের ২০১১ সালে এই হোজাই থেকেই বিধায়ক পদে নির্বাচত হন ডা. অর্ধেন্দু দে। ২০২১ সালে কংগ্ৰেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপিতে যোগদান করেন অসমে বাঙালিদের স্বার্থে আপসহীন লড়াকু নেতা ডা. দে। প্রসঙ্গত, ডা. অর্ধেন্দু দে-র পত্নী মায়া দে কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন।তিনি তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস আমলে সেচ ও মৃত্তিকা সংরক্ষণ দফতরের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রয়াত অর্ধেন্দুকুমার দে-র অতিঘনিষ্ঠ প্রবীণ সাংবাদিক অমল গুপ্ত জানান, লামডিং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশ্বিনীকুমার দে-র পুত্র অর্ধেন্দু ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে হোজাইয়ে এসে মানুষের চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন।তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন, লিখতেন কবিতাও। তাঁর ‘লাল গোলাপের জন্য’ কবিতা সংকলন দেশের কবিদের মধ্যে সাড়া ফেলেছিল। তাঁর ‘ছেঁড়া মাদুর’-এর কয়েকটি লাইন ‘…একদিন ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতাম, আজ সেই কাঁথাটার জন্যে মন খারাপ করছে…’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়দের উচ্চপ্রশংসা লাভ করেছিল। অমল গুপ্ত বলেন, বাঙালির প্রতিবাদী কণ্ঠ প্রাক্তন মন্ত্রী ডাক্তার অর্ধেন্দুকুমার দে প্রয়াত হয়েছেন শুনে তিনি বাগরুদ্ধ হয়ে গেছেন।

অমল গুপ্ত বলেন, ডাক্তার দে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের চিকিৎসা করে গেছেন। মানুষের সেবা করেছেন। এছাড়া অসমের বাঙালিদের, বিশেষ করে হিন্দু বাঙালিদের দুঃখে চোখের জল ফেলতেন তিনি। এই মানুষটিকে আজ হরালাম। এককথায় বাঙালির প্রতিবাদী কণ্ঠ আজ নীরব হয়ে গেছে, বলেন অমল গুপ্ত।অমলবাবু বলেন, মূলত অর্ধেন্দু দা-র জন্যই আজ তিনি সাংবাদিকতা পেশায় আসতে পেরেছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন গুপ্ত। অর্ধেন্দু দে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অমল গুপ্ত তাঁর বহু স্মৃতিচারণ করে আবেগিক হয়ে পড়েন।

প্রয়াতের শেষ কিছু বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে অমল গুপ্ত বলেন, ‘হোজাই মহিলা কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার ইচ্ছা আমার (প্রয়াত ডা. অর্ধেন্দু দে) পূরণ হল না। আমার কবিতা মনে রেখো। আমি চললাম…’। অমল গুপ্ত বলেন, আমার পত্নী সান্ত্বনা দুমাস আগে প্রয়াত হয়েছেন। অর্ধেন্দুদা বরাবর পত্নীর অসুস্থতার খবর নিতেন। তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনা করে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অমল গুপ্ত।