বরাক উপত্যকার তিন জেলাকেও দুর্নীতি ও অপরাধমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার
করিমগঞ্জ, ২১ জুলাই (হি.স.) : বন্যাক্রান্ত জনগণের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখতে পনেরো দিনের মধ্যে তিন-তিনবার বরাক উপত্যকা সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। যা বরাকের জন্য এক ইতিহাস। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ করিমগঞ্জের রতনপুর-ভরিবন্দ এলাকায় লঙ্গাই নদীর ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করে এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা। বন্যার কবল থেকে করিমগঞ্জ জেলার মানুষকে রক্ষা করতে সরকার বদ্ধপরিকর। খুব শীঘ্রই জেলার সব নদীবাঁধ মেরামত করে তোলা হবে বলেও আশ্বাস দেন মন্ত্রী পীযূষ।
সংবাদ মাধ্যমের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রী হাজরিকা বলেন, বিজেপি সরকার জাতিধর্মবর্ণ, সম্প্রদায় নির্বিশেষে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে সর্বশ্রেণির জনগণের সেবা করতে সংকল্পবদ্ধ। কোন কেন্দ্রে কোন দলের বিধায়ক রয়েছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিজেপি সরকারের কাছে কোনও ভেদাভেদ নেই। মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সব-কা সাথ, সব-কা বিকাশ এবং সবকা-বিশ্বাস, এই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে রাজ্যবাসীর সেবায় নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গক্রমে মন্ত্রী বিজেপি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, কংগ্রেস আমলে দক্ষিণ করিমগঞ্জের বুক চিরে ধাবিত অসম-ত্রিপুরা জাতীয় সড়কের কী অবস্থা ছিল, সে বিষয়ে এখানকার জনগণ ভালো করেই অবগত। দক্ষিণ করিমগঞ্জে কোন দলের বিধায়ক রয়েছেন, সরকারের এতে কোনও কিছু যায়-আসে না। তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠে একমাত্র জনগণের স্বার্থে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে তুলতে মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাই আজকের দিনে সড়কটির হাল ফিরেছে।
সেই সঙ্গে ড্রাগসমুক্ত এবং অপরাধমুক্ত বরাক উপত্যকা গড়ে তোলার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বন্যামুক্ত বরাক গড়ার যে সংকল্প সরকার গ্রহণ করেছে, তা পূরণ করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রাজ্যের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বন্যায় আক্রান্ত হওয়ার পর-পরই ত্রাণ সামগ্রী তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমন-কি ত্রাণ শিবিরে অবস্থান কালেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা এর আগে কোনওদিন কেউ কল্পনাও করতে পারেননি. দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন মন্ত্রী পীযূষ।
বিজেপি সরকারের আমলে বরাকের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তনের কথাও বলেছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বরাক উপত্যকার তিন জেলায় যেভাবে বন্যায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন তাঁদের দেখতে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী পর-পর তিনবার বরাক সফরে এসেছেন যা এক ইতিহাস। সমগ্র রাজ্যের সঙ্গে বরাক উপত্যকার তিন জেলাকেও দুর্নীতিমুক্ত এবং অপরাধমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এতে জনগণেরও সাহায্য সহযোগিতা কামনা করেন মন্ত্রী পীযূষ। অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের এই উপত্যকা থেকে যাতে উৎখাত করা হয়, তার জন্য সরকার ইতিমধ্যে শনাক্তকরণের কাজ শুরু করেছে। বিগত দিনে যারা নানা অপরাধে যুক্ত ছিল এবং আজও অপরাধীর খাতায় নাম থাকা অবস্থায়ও অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদের শায়েস্তা করতে অসম সরকার বদ্ধপরিকর বলেও দৃঢ়তার সঙ্গে দাবি করেছেন জলসম্পদ, তথ্য ও জনসংযোগ এবং সামাজিক ন্যায় দফতরের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা।
তিনি বলেন, দুর্নীতি এবং অপরাধজনিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদেরকে রেহাই দেওয়া হবে না। বিজেপি সরকার দুর্নীতিমুক্ত অসম গড়ার যে সংকল্প নিয়েছিল তা দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করবে। মন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই বরাক উপত্যকার নদীবাঁধ সমস্যা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছেন। যে সব বাঁধ স্বাধীনতার পর সংস্কার হয়নি বা যে সকল বাঁধ দিয়ে জল প্রবেশ করেছে সবকটি বাঁধের রূপ পাল্টে দেওয়া হবে। যাতে আগামীতে বন্যায় মানুষের ক্ষতি না হয়। কেননা, বন্যামুক্ত বরাক গড়ার সংকল্প নিচ্ছে অসম সরকার।
উল্লেখ্য দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদের অনুরোধে এদিন রতনপুর-ভরিবন্দ এলাকায় নদীবাঁধের ভগ্ন দশা পরিদর্শন করতে আসেন মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা। এদিন সকালে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী পাথারকান্দি যাওয়ার উদ্দেশ্যে করিমগঞ্জ আবর্ত ভবন থেকে রওয়ানা দেন মন্ত্রী। প্রথমে তিনি শহরের শম্ভুসাগর পার্কে স্থায়ী শহিদ বেদিতে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদ জগন ও যিশুকে নতমস্তকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করে সম্মান প্রদর্শন করেন। পাথারকান্দি যাওয়ার পথে মন্ত্রী দক্ষিণ করিমগঞ্জের রতনপুর-ভরিবন্দ এলাকায় লঙ্গাই নদীর ভাঙা বাঁধ পরিদর্শন করেন। বাঁধ পরিদর্শনকালে মন্ত্রী হাজরিকার সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক মৃদুল যাদব, তিন বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু পাল, বিজয় মালাকার ও সিদ্দেক আহমদ, জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য, শিপ্রা গুন সহ জলসম্পদ বিভাগের আধিকারিকগণ।

