দেশদ্রোহী মামলায় অভিযুক্ত ১৯ বছরের বৰ্ষাশ্ৰী বুঢ়াগোহাঁইয়ের জামিন মঞ্জুর গুয়াহাটি উচ্চ আদালতে

গুয়াহাটি, ২১ জুলাই (হি.স.) : দেশদ্রোহী মামলায় কারাবন্দি যোরহাট জেলার টিয়কের বানাই কাটারিখাম গ্রামের বাসিন্দা ১৯ বছর বয়সি দেবীচরণ বরুয়া গার্লস কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় ষাণ্মাষিকের অঙ্ক মেজরের ছাত্রী বর্ষাশ্রী বুঢ়াগোহাঁইয়ের জামিন মঞ্জুর করেছে গুয়াহাটি উচ্চ আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বর্ষাশ্রীর জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে উচ্চ আদালতের বিচারপতি তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

নিষিদ্ধ উগ্রপন্থী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম (ইন্ডিপেন্ডেন্ট)-এর সমর্থনে একটি কবিতা লিখে তা সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করেছিলেন বর্ষাশ্রী। এতে তিনি আলফা (স্বাধীন)-য় যোগদান করবেন বলেও লিখেছিলেন। এই অভিযোগে দুমাস আগে ১৮ মে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইন (ইউএপিএ), ১৯৬৭-এর অধীনে নির্দিষ্ট ধারায় তাকে তার এক বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সে থেকে তিনি গোলাঘাট জেলা কারাগারে বন্দি। তাঁর রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কবিতা সম্পর্কে যোরহাটের উরিয়ামঘাটের জনৈক পঙ্কজ শইকিয়ার দায়েরকৃত অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ষাশ্রী বুঢ়াগোহাঁইকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গত ১৮ মে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে ইতিমধ্যে কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় ষাণ্মাষিকের দুটি পরীক্ষা কারাগারে থেকেই দিয়েছেন বর্ষাশ্রী।

এদিকে রাজ্যের বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছিল, কবিতা লেখার জন্য বর্ষাশ্রী বুঢ়াগোহাঁইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। ওই সব অভিযোগের মোটেও সত্যতা নেই বলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা থেকে শুরু করে ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বার বার বলছিলেন, বর্ষাশ্রীকে কবিতা লেখার জন্য মোটেও গ্রেফতার করা হয়নি। তাঁকে গ্রেফতার না করলে এতদিনে তিনি আলফা (স্বাধীন)-য় চলে যেতেন। তাই কবিতা লেখার সঙ্গে বর্ষাশ্রীর গ্রেফতারের কোনও সম্পর্ক নেই, বার বার বলেছেন তাঁরা।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বর্ষাশ্রীর কাউন্সেলিং চলছে। তার সঙ্গে প্রশাসনের আধিকারিকরা যোগাযোগ রাখছেন। একাংশ নেতা জেনেশুনে ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবেশ জটিল করার পথে নেমেছেন। তবে তাঁর মা-বাবা যদি দ্বায়িত্ব নেন এবং তরুণীটি যদি অঙ্গীকার করেন যে তিনি আলফায় যাবেন না, তা-হলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। কারণ আলফায় গেলে তরুণীটি মানব-বোমা হয়ে আমাদের মারবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বর্ষাশ্রী কবিতায় লিখেছেন, তিনি আলফায় যেতে চাইছেন। তিনি নিজে লিখেছেন, ‘…আমি বার বার রাষ্ট্ৰদ্ৰোহ করব…’। এবার কেউ যদি বলে, আমি বার বার রাষ্ট্ৰদ্ৰোহ করব, তা-হলে তাকে গ্ৰেফতার না করলে দেশে কি আইন-কানুন বলে কিছু থাকবে? কবিতার পাকচক্ৰে পড়ে মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে খেলতে পারব না আমরা, বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মেয়েটির সঙ্গে কয়েকবার কথা বলা হয়েছে। বার বার বলেছেন আলফায় তিনি যাবেনই। তবে গত চার-পাঁচদিন ধরে বলছেন, ‘আমি নতুন করে ভাবছি, আমি পরীক্ষা দেব।’

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঠিক আছে, পরীক্ষা দাও। কিন্তু আলফায় যাব না বলে যতক্ষণ মুচলেকা দেবে না, ততক্ষণ তাকে ছাড়া হবে না। কাল যদি এই মেয়েটি গণেশগুড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়, তা-হলে কী হবে?’ মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা বলেছেন, ইতিমধ্যে আলফায় যাওয়ার পর ৪২ জন ছেলে-মেয়ে তাদের ক্যাম্পে মারা গেছে। কোনও কারণে সে-ও যদি মারা যায়, যদি কেউ মেরে ফেলে, বা যদি বলা হয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খবরের কাগজে যদি নিউজ হয়, অমুককে আমরা (নাম না বলে আলফা-প্রধানকে ইঙ্গিত) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছি, তখন কী হবে? মেয়েটির কথা একবার ভেবে দেখুন। এ সব জেনেও কীভাবে মেয়েটিকে আলফায় যেতে দেব আমরা? ধরুন, তিনি আলফায় চলে গেলেন, এর পর আলফা তার হাতে একে ৪৭ তুলে দিয়ে পাঠিয়ে দেবে, তখন কী হবে? এ সব বোঝা দরকার। সে আমাদের মেয়ে, তাকে বাঁচানো বা রক্ষা করার দ্বায়িত্ব আমাদের, বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

গতকাল রাজ্যের পুলিশ-প্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত বলেছিলেন, এ ধরনের পোস্ট করে মেয়েটি এখন অনুতপ্ত। সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে। তাছাড়া তার বাবা-মাও মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁকে (ডিজিপি) লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, তাঁদের মেয়ে বর্ষাশ্রী বুঢ়াগোহাঁই আলফা (স্বাধীন)-এ যাবে না বা এ ধরনের সংগঠনের গুণগানও গাইবে না। মেয়েকে যেন শীঘ্র মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাঁর দায়িত্ব তাঁরা নেবেন বলে মুচলেকা বর্ষাশ্রীর বাবা ও মা নাকি দিয়েছেন, জানিয়েছিলেন ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত।