নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৮ জুলাই৷৷ বেকারদের সঙ্গে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতারণার প্রতিবাদে ১১ দফা দাবিতে সোমবার আগরতলায় সিটি সেন্টারের সামনে প্রদেশ যুব কংগ্রেসের ডাকে ৭২ ঘন্টার গণ অবস্থান আন্দোলন শুরু হয়েছে৷
বিজেপির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার বেকার যুবক যুবতীদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছে৷ রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বেকার যুবক যুবতীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষমতায় আসতে বছরে পঞ্চাশ হাজার বেকারকে চাকরি দেওয়া হবে, মিসড কল দিলেই চাকরি মিলবে ,সবর্োপরি কর্মসংস্থানের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে৷ পূর্ববর্তী বামফ্রন্টের ২৫ বছরের অপশাসন থেকে মুক্তি পেতে এবং বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির আশ্বাসে বেকার যুবক-যুবতিসহ রাজ্যের জনগণ বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে বিজেপিকে দুহাত বলে আশীর্বাদ করে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন৷ প্রত্যাশা ছিল বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসলে এই রাজ্যের বঞ্চিত অবহেলিত সাধারণ মানুষ এবং বেকারদের বঞ্চনা অবহেলা থেকে মুক্তি মিলবে৷ কিন্তু প্রত্যাশায় গুড়ে বালি৷ বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যের ক্ষমতাশীন হওয়ার পর তাদের মুখোশ জনসমক্ষে ভেসে উঠেছে৷ বছরে পঞ্চাশ হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার৷ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্যে বেকারের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ৷ বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে এই সংখ্যা কমার বদলে আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বেকারদের সরকারি চাকরি কিংবা কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা করছে না বর্তমান সরকার৷ বেকারদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণার প্রতিবাদে প্রদেশ যুব কংগ্রেস সোমবার সিটি সেন্টারের সামনে ৭২ ঘন্টার গণ অবস্থান আন্দোলনের শামিল হয়৷ গণ অবস্থান আন্দোলনের সূচনা লগ্ণে আন্দোলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সমীর রঞ্জন বর্মন, প্রাক্তন বিধায়ক আশীষ কুমার সাহা, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদিকা তথা রাজ্যের ইনচার্জ জারিতা লাইট ফ্লাং, প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সভাপতি রাখু দাস সহ অন্যান্য বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ৷ আন্দোলন মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক কংগ্রেস নেতা আশীষ কুমার সাহা কেন্দ্রের এবং রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে যুবসমাজ সহ সকল অংশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলনের শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আশিস বাবু বলেন রাজ্যে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বছরে ৫০ হাজার বেকারের সরকারি চাকরি, অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করুন, চাকুরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান, সবর্োপরি বেকারদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ রাজ্যের জনগণ ও বেকার যুবক যুবতীরা দীর্ঘ বাম শাসন থেকে রাজ্যকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ও আহবানে সাড়া দিয়ে চলো পাল্টাই স্লোগানে শামিল হয়ে রাজ্যে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাসীন করে৷ কিন্তু বিজেপির কথা এবং কাজের মধ্যে যে কোন মিল নেই ,তারা যে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মাস্টার তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে৷ রাজ্যে বেকারদের কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা করছে না বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার৷ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতিসহ সকল অংশের মানুষের স্বার্থ সুরক্ষার তাগিদে প্রদেশ যুব কংগ্রেস বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যোগ্য জবাব দিতে সোমবার থেকে আগরতলা সিটি সেন্টারের সামনে ৭২ ঘন্টার গণ অবস্থান আন্দোলন কর্মসূচিতে শামিল হয়েছে৷ এই আন্দোলন কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রাক্তন বিধায়ক কংগ্রেস নেতা আশীষ কুমার সাহা বেকার যুবক-যুবতিসহ রাজ্যের সকল অংশের জনগণকে প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ আশিস বাবু বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারকে জুমলা সরকার এবং মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার সরকার বলে আখ্যায়িত করেছেন৷রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সমীর রঞ্জন বর্মন বর্তমান বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাজ কর্মের তীব্র সমালোচনা করেন৷ তিনি বলেন বিজেপির শাসনে এই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতির ঘটেছে৷ মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে৷ রাজ্যের গণতন্ত্র ভুলুণ্ঠিত৷ এ ধরনের নৈরাজ্য কোনভাবেই মেনে নেওয়া যেতে পারে না৷ বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে বিজেপিকে ক্ষমতারচ্যুত করতে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের সকল অংশের জনগণ এবং কংগ্রেসের সর্বস্তরের সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সমীর রঞ্জন বর্মন৷ যুব কংগ্রেসের ৭২ ঘন্টার আন্দোলন কর্মসূচি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদিকা তথা রাজ্যের ইনচার্জ জারিতা লাইটফ্লাং বলেন বিজেপির নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার রাজ্যের নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনগণকে প্রতারিত করে চলেছে৷ কংগ্রেসের আন্দোলন স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য এবং কংগ্রেসের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে কংগ্রেস নেতা কর্মীদের উপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, দলীয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি৷ যুব কংগ্রেস সিটি সেন্টারের সামনে যেখানে ৭২ ঘন্টার আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সেখানে সরকারি নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে৷ অথচ পরিকল্পিতভাবে, ষড়যন্ত্র করে আন্দোলন মঞ্চের বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো হয়েছে৷ যুব কংগ্রেসের আন্দোলন কর্মসূচি যাতে বন্ধ করে যাওয়া যায় সেই লক্ষ্যেই এ ধরনের চক্রান্ত বলে তিনি উল্লেখ করেন৷ কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদিকা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন এভাবে হামলা চালিয়ে অগণতান্ত্রিক উপায়ে কংগ্রেসের উপর দমন পীড়ন চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না৷ রাজ্যের জনগণ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে করায় গণ্ডায় হিসেব চাইবেন৷ রাজ্য সরকার এবং বিজেপির সব ধরনের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাজ্যের সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে যুব কংগ্রেসকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান৷ প্রদেশ যুব কংগ্রেস আয়োজিত ৭২ ঘণ্টার গণ অবস্থান আন্দোলন সোমবার থেকে সিটি সেন্টারের সামনে শুরু হয়েছে৷ আন্দোলন কর্মসূচিকে সফল করার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে যুব কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা শামিল হয়েছেন৷ আগামী দিনের যুব কংগ্রেস বেকারদের কর্মসংস্থান সহ ১১ দফা গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে আরো বৃহত্তর আন্দোলনের শামিল হবে বলে যুব কংগ্রেসের তরফ থেকে জানানো হয়েছে৷
2022-07-18