BRAKING NEWS

Arrested : ৫০ লক্ষ প্রতারণা মামলায় বিচারাধীন কারাবন্দি অমিতাভকে পুলিশি রিমান্ডে এনে জেরা করা ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গ্রেফতারের দাবি সুজিতের

শিলচর (অসম), ২৩ মে (হি.স.) : বৈদ্যুতিন চ্যানেলের অনুজ্ঞাপত্র বের করে দেওয়ার বদলে ডিএভিপি সহ সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের ভুয়ো নথি দেখিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে জেল হাজতবাস করতে হচ্ছে বছর কুড়ির এক যুবককে। কালাইনের বাসিন্দা অনুপ ভট্টাচার্যের ছেলে অমিতাভ ভট্টাচার্য (২০) গত ২০২০ সাল থেকে ইনফরমেশন অ্যান্ড টেকনোলজিকে অপব্যবহার করে শিলচর তারাপুরের সংবাদকর্মী সুজিতকুমার চন্দের কাছ থেকে দফায় দফায় ৫০ লক্ষের অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণের শিকার সুজিত চন্দ আজ সোমবার শিলচর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে অমিতাভ ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে যথার্থ নথিপত্র সমেত বেআইনি কার্যকলাপের ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, বৈদ্যুতিন সংবাদ চ্যানেলের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট সহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেওয়ার নামে এভাবে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কালাইনের যুবক অমিতাভ ভট্টাচার্য। ভুয়ো সরকারি নথি দেখিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে দেদার অর্থ হাতিয়ে বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছে অভিযুক্ত অমিতাভ। সুজিত জানান, অমিতাভের মিষ্টি কথায় বিশ্বাস করে আজ তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। তার প্রতারণামূলক কার্যকলাপ বুঝতে অনেক দেরি হয়েছে সুজিতের। ততক্ষণে প্রায় ৫০ লক্ষ গচ্ছা হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে ১৪ মে শিলচর সদর থানায় অমিতাভের বিরুদ্ধে এফআইআর দাখিল করেন। ওইদিনই কাটিগড়া পুলিশের সহযোগিতায় অমিতাভ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শিলচর সদর থানায় আইপিসি ১২০(বি)/৪০৬/৪৬৮/৪৭১ ধারায় ১২৬৪/২০২২ নম্বরে নথিভুক্ত মামলায় তারাপুর টাউন আউট পোস্টের তদন্তকারী আধিকারিক মনাফ আলি তাকে আদালতে সোপর্দ করার পর জেল হাজতে পাঠানো হয়। সুজিতবাবু জানান, অভিযুক্ত অমিতাভ রীতিমতো একটি সিন্ডিক্যাট তৈরি করে এ ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। কালাইনে তার একাংশ বন্ধু ও গুয়াহাটির জনাকয়েক সাঙ্গোপাঙ্গদের ইনফরমেশন টেকনলজি এক্সপার্ট, সাইবার এক্সপার্ট, সাইবার ইঞ্জিনিয়ার সহ বিভিন্ন পদবীর মানুষ সাজিয়ে বেআইনিভাবে অর্থ আদায়ের কারবার চালাচ্ছিল দিব্যি। তাই জেল হাজতে অবস্থানকারী অমিতাভকে পুলিশি রিমান্ডে এনে জেরা করলে প্রতারণামূলক একাধিক ঘটনার চিত্র সামনে আসবে বলে দাবি করেন সুজিতকুমার চন্দ।

চন্দ বলেন, ওয়েব পোর্টেল, মিনিস্ট্রি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড ব্রডকাস্টিং ‘এমআইবি’র রেজিস্ট্রেশন, ‘এমআইবি’র সার্টিফিকেট আসার পর ‘রিভিউ’ করা, ‘টিএলএস’ সিকিউরিটি জমা করা, ডিএভিপির ‘এ’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্তি করা সহ ডিএভিপি-র বিওসি davpboc@gmail.com মেইল থেকে সুজিতের gana.awaz@@gmail.com মেইলে আসা বিভিন্ন সফটওয়ার ইনস্টলেশনের জন্য খরচ বাবদ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অমিতাভ। কিন্তু অমিতাভের কথামতো যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও যখন চ্যানেলটি চালু হচ্ছে না, বিজ্ঞাপনের ৪৪ লক্ষ টাকার বিল মেইলের মাধ্যমে জমা করার পর দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও পেমেন্ট না আসায় সুজিতের মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। পরে তিনি কালাইনে গিয়ে জানতে পারেন সফটওয়ার ইনস্টলেশনের জন্য গুয়াহাটি আইটি সলিউশনের সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অমিতাভ যে ছেলেটিকে পরিচয় করিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সেই ভুয়ো ইঞ্জিনিয়ার আসলে কালাইনের পাপ্পু ওরফে নীল সরকার।নীল নাকি স্বীকার করেছে, সে কোনও ইঞ্জিনিয়ার নয়। অমিতাভের টোপে লোভের বশীভূত হয়ে সে কাজ করেছে। নীল সরকারের প্রদত্ত তথ্যবলি সহ কাটিগড়া থানার ওসির সঙ্গে আলোচনা করলে ওসি এসে অমিতাভকে গ্রেফতার করে তার কালাইনের বাড়ি থেকে দুটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ, ইউটিবি নামে আরও একটি চ্যানেলের সার্টিফিকেট-নথিপত্র সহ অনাথ আশ্রমের নামেও বেশ কিছু নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করেন।ইউটিবি সম্পর্কে খবর নিয়ে জানা যায়, কালাইন দিগরকাল এলাকার এক বাসিন্দাকে এভাবে স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেলের ভুয়ো কাগজপত্র দিয়েও প্রচুর টাকা হাতিয়েছে সে। এছাড়াও অসমের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সার্টিফিকেট জালিয়াতি করার অভিযোগে ২০২০ সালে কাছাড়ের তখনকার এডিসি সুমিত সাত্তায়নের নির্দেশে অমিতাভ সহ অপর এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাটিগড়ার সার্কল অফিসারের এজাহারের ভিত্তিতে কাটিগড়া থানায় জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়। ওয়ারেন্ট ইস্যু হলেও আসামীদের গ্রেফতার করা হয়নি। পরে এডিসি ও সার্কল অফিসার বদলির হলে পুরো ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়, জানান সুজিত চন্দ।

এছাড়া ন্যাশন্যাল হাইওয়েতে টোল গেট বসানোর জন্য একটি ভুয়ো ‘এনজিও’র নামে প্রধানমন্ত্রী দফতরের নাম ব্যবহার করে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে ন্যাশন্যাল হাইওয়েতে গেট বসানোর অপচেষ্টা চালায় অমিতাভ, অভিযোগ করেছেন সুজিতকুমার চন্দ। তাই তাকে রিমান্ডে এনে জেরা করলে ওই সব ঘটনাবলির সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

সুজিত চন্দ আরও বলেন, গত দু-বছরে অমিতাভের মা হ্যাপি ভট্টাচার্যের নামে পাঞ্জাব ন্যাশন্যাল ব্যাঙ্কের কালাইন শাখার অ্যাকাউন্টে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার আদান-প্রদান হয়েছে বলে সুজিতকে জানিয়েছে অমিতাভ। প্রয়োজনে অমিতাভের দুটি মোবাইল নম্বরের কল রেকর্ডিং যাচাই করলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি। তাই তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালাতে, প্রয়োজনে নার্কো টেস্ট করারও দাবি জানান ভুক্তভোগী সুজিতকুমার চন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *