Jishnu Devvarma : ত্রিপুরা তথা পূর্বোত্তরের উন্নয়নে আরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে ব্যাঙ্কার্সদের আহ্বান উপমুখ্যমন্ত্রীর

আগরতলা, ৪ মে (হি. স.) : ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে আরও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য উপমুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা ব্যাঙ্কার্সদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আজ প্রজ্ঞাভবনে আর্থিক সাক্ষরতা ও জনসচেতনতার উপর এক সেমিনারের উদ্বোধন করে বলেন, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসার পর উত্তর পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে সবার ধারণাই পাল্টে গেছে। আগে মানুষ উত্তর পূর্বাঞ্চল মানেই সন্ত্রাসবাদীদের তৎপরতা সম্পর্কে খবর নিতেন। এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

পর্যটনের বিকাশে আরও বেশি করে লগ্নি করার ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কার্সদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চল বিশেষ করে ত্রিপুরায় পর্যটনের এক বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে আরও ইতিবাচক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, একটা সময় ছিল যখন উচ্চ বিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তরা শুধু ব্যাঙ্কে যেতেন। এখন সমাজের সব অংশের মানুষ ব্যাঙ্কে যাচ্ছেন। একেই বলে পরিবর্তন।

তাঁর কথায়, ব্যাঙ্ক হচ্ছে উন্নয়নের মানদন্ড। পাশাপাশি মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়েও ব্যাঙ্ক একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। এ বিষয়ে সমাজের সব অংশের মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। উপমুখ্যমন্ত্রীর সাফ কথা, আর্থিক সাক্ষরতার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা ভীষণ জরুরি। প্রত্যেক পঞ্চায়েতে এ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালাতে হবে।

তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাগশিপ প্রোগ্রামগুলির এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। কর্মজীবনের পাশাপাশি অবসরকালীন জীবনের উপরও ভালো করে মনোনিবেশ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের অনেক প্রকল্প রয়েছে। এ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ভালোভাবে অবহিত হতে হবে।
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনকল্যাণে ব্যাঙ্কগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একেবারে গরিব অংশের মানুষকে ব্যাঙ্কে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জনধন যোজনা যে ভূমিকা নিয়েছে তা আজ সর্বজনবিদিত। সমগ্র দেশে ৬০ শতাংশ জনধন যোজনার অ্যাকাউন্ট হচ্ছে মহিলাদের। মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর যে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে তা এর থেকেই স্পষ্ট।

তাঁর কথায়, ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বসহায়ক দলগুলির এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বর্তমান সরকারের সময় স্বসহায়ক দলের সংখ্যা চার হাজার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে পঁয়ত্রিশ হাজারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। মহিলাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য যে প্রচেষ্টা চলেছে তা এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব আকিঞ্চন সরকার বলেন, আর্থিক সাক্ষরতা শব্দটি আমাদের কাছে নতুন হলেও উন্নত দেশগুলিতে এ বিষয়টি সম্পর্কে বিদ্যালয়স্তর থেকেই পড়ানো হয়। ভারতেও বিদ্যালয়স্তর থেকে বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের অবহিত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অর্থনীতি সম্পর্কে সবারই একটা সম্যক ধারণা থাকা উচিত। অর্থনীতি সম্পর্কে ভালো ধ্যান ধারণা না থাকলে ব্যাঙ্কের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিতে সমস্যা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের ডিজিএম বলেন, ব্যাঙ্কিং সেক্টরে জনধন অ্যাকাউন্ট একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। গ্রামীণ এলাকার একটা বিরাট অংশের জনসংখ্যাকে এই কর্মসূচির মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসবিআই-র রিজিওন্যাল ম্যানেজার (সাউথ) দীপক চন্দ্র দাস বলেন, গ্রামীণ অংশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করা হচ্ছে। সঠিক বাজেটের মধ্য দিয়ে চলা আর্থিক সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্ত।

ইউকো ব্যাঙ্কের জোন্যাল ম্যানেজার রাজু দাস বলেন, মানুষকে জানতে হবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কি কি প্রকল্প রয়েছে, কি সুবিধা পাওয়া যায়। একইভাবে তারা কিভাবে এগুলির সুবিধা নেবেন সে সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে হবে। ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের এমডি ভজন রায় বলেন, আর্থিক সাক্ষরতার উপর ত্রিপুরা স্টেট কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এ সম্পর্কে সেমিনার, আলোচনাচক্র করা হচ্ছে। এইচডিএফসি পেনশন এবং রিটায়ারমেন্টের ন্যাশনাল হেড রণবীর সিং ধারিওয়াল বলেন, অর্থ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে আর্থিক সাক্ষরতার বিরাট ভূমিকা রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *