নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ মে৷ রমজানের রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ৷ আরবি বছরের অষ্টম মাসের নাম হল শাবান মাস ৷ এই মাসের মাঝামাঝি সময় আগমন হয় শবে-বরাতের পবিত্র রাত্রি৷ এই রাত্রিতে ভাগ্যের রজনী বলা হয়৷ ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা এই রাতে আল্লাহ- তালার আনুগত্য পাওয়ার জন্য বিশেষ সাধনায় রত হয়৷ এই রাতের১৫ দিন পর রোজার আগমনবার্তা নিশ্চিত করে৷ আরবি বর্ষের নবম মাস হিসেবে রমজানের আগমন হতেই মুসলিমদের রোজা রাখার কাজ শুরু হয়ে যায়৷ পড়ন্ত বিকেল শেষে গোধূলির অন্তীম- লগ্ণে পশ্চিম আকাশে এক চিলতে চাঁদের উদয়ন হলেই রমজান মাসের শুভাগমন নিশ্চিত হয়৷ সে রাত থেকে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে তারাবির নামাজ শুরু করে মুসলিমরা৷ তারাবির নামাজ রাতের বেলা এশার নামাজের পরে পড়ার নিয়ম৷
এক্ষেত্রে তিন রাকাত বিতরের নামাজকে সামনে রেখে তারাবির নামাজ পড়তে হয়৷ মুসলিম দুনিয়ার স্বল্প সংখ্যক মানুষ ৮ রাকাত তারাবি নামাজ পড়লেও অধিকাংশ মুসলমানগন ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ে থাকে৷ রোজা রাখার নিয়ম অনুযায়ী ভোররাতে তথা সুবেসাদিকের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেহরি খাবার খেতে হয়৷ সুবেসাদিকের সময় মূলত সূর্য উদয়ের প্রায় দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত নির্ধারিত থাকে৷ তারপর সারাদিন উপোস থাকার মাধ্যমে রোজার সিয়াম-সাধনা করতে হয়৷প্রত্যেক সাবালক- সাবালিকা মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা ফরজ৷ ইসলাম ধর্মের তৃতীয় স্তম্ভ হল এই রোজা৷ রোজার আভিধানিক অর্থ হল সংযম পাশাপাশি সিয়াম শব্দের অর্থ হলো ভস্মীভূত হওয়া৷ প্রায় ১৪থেকে ১৫ ঘণ্টা সময় পর্যন্ত রোজাদার ব্যক্তি দের কে উপোস থাকতে হয়৷ এই সময় কোন ধরনের খাবার সে খেতে পারেনা৷ এমনকি মুখের লালাটুকু পর্যন্ত কণ্ঠনালীর নিচে নেওয়া নিষেধ ৷ এই কঠিন সিয়াম-সাধনার মধ্য দিয়ে আল্লাহ-তালার আনুগত্যের লাভের আশায় রোজাদার ব্যক্তিগণ রত থাকেন৷ রোজার মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে প্রথম দশদিন হল রহমত প্রাপ্তি অর্জনের দিন৷ দ্বিতীয় দশদিন হল মাগফিরাত বা ক্ষমা প্রাপ্তির দিন৷ তৃতীয় দশদিন হল নাজাত তথা নরকের প্রজ্জ্বলিত অগ্ণিশিখা থেকে বাঁচার আরাধনার দিন৷ শেষের দশ দিনের সময় বৃত্তশালী মুসলিম ব্যক্তিগণ ফিৎরা ও জাকাত প্রদান করে থাকেন৷
জাকাতের টাকা মূলত এতিম হত দরিদ্র মানুষেরা গ্রহণ করার নিয়ম আছে৷বিশেষ করে কৌম্বি মাদ্রাসারসহ লিল্লা পরিচালিত মাদ্রাসা গুলিতে এই অংশের ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন৷ এই ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে জাকাত প্রদান করা উত্তম৷ তবে প্রতিবেশী কোন ব্যক্তি অথবা নিকট আত্মীয় কোন ব্যক্তি যাতে এই ব্যাপার বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী৷ শেষের দশ দিনের বে-জোড় রাত্রির কোন এক রাত্রিকে শবে কদরের রাত্রে বলা হয়৷ তবে এক্ষেত্রে বেশিরভাগ ইসলামিক পণ্ডিতদের মতামত হল ২৭ রমজানের রাত্রি হল পবিত্র শবে কদরের রাত্রি৷এই রাতে ফেরেশতাদের সর্দার (সাইয়দুল মালাইকা )জিব্রাইল আলাই সালাম সমস্ত ফেরেশতাদের নিয়ে পৃথিবীতে আসেন৷ হাজারো রাত থেকে উত্তম পবিত্র রাত্রি হল এই শবে-কদর রাত৷ এই রাতে পবিত্র কোরান শরীফ লৌহ মাহফুজ থেকে আসমানী দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন পরম করুণাময় আল্লাহ-তালা৷তারপর সেখান থেকে দীর্ঘ২৩ বছরের সময়ে-সময়ে ফেরেস্তা মারফতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর নিকট প্রেরণ করেন সৃষ্টিকর্তা৷ হযরত মুহাম্মদ (স:)একদিন সাহাবীদের কাছে বনি ইসরাফিলের যুগের সাহাবীদের দীর্ঘ সময় কাল যাবত এবাদত করার আলোচনা করছিলেন৷ তখন উপস্থিত সাহাবীরা আফসোস করতে থাকেন তাদের জীবনে স্বল্প আয়ু-কালে তারা কিভাবে এবাদত করবে৷এই অবস্থায় ফেরেশতা মারফত আল্লাহ-তালা শবে কদরের রাতের গুরুত্ব ঘোষণা করেন৷রোজার শেষের দশ দিনের জন্য ধর্মপ্রাণ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জায়গায়-জায়গায় এতেকাফের বিশেষ সাধনার জন্য মসজিদে বসে যান৷যে সময় পরিবার-পরিজনের সমস্ত মায়া বন্ধন ত্যাগ করে আল্লাহ-তালার বিশেষ সাধনায় তারা মগ্ণ হয়ে থাকেন৷
একমাস যাবত রোজার এই কঠিন পবিত্র আরাধনার পর আগামীকাল রোজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে খুশির ঈদ তথা ঈদুল ফিতর৷ইতিমধ্যেই সীমান্ত এলাকা মুসলিম অধ্যুষিত বক্সনগরে তার রমরমা সাজের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে৷রাজ্য জমিয়ত উলামা হিন্দের সভাপতি মুফতি তৈয়বুর রহমান সাহেব এই ব্যাপারে রাজ্যবাসীকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রদান করেছেন৷ত্রিপুরা রাজ্যের বসবাসকারী সমস্ত অংশের মানুষ মধ্যে যাতে এই খুশির ঈদ অনাবিল সুখ শান্তি বয়ে আনে সেই কামনা করা হচ্ছে৷ বক্সনগর স্থিত কলমচৌড়া থানা এলাকায় মোট ২৯টি জায়গায় ইদের নামাজ অনুষ্ঠিত করা হবে