Guwahati : চার দশক ধরে নানা সমস্যায় ভুগছিল উত্তরপূর্ব, এখন কালো অধ্যায়ের যবনিকা ঘটেছে, শিল্প সম্মেলনে বলেছেন ড. কৃষ্ণগোপাললঘু উদ্যোগ ভারতী, গুয়াহাটির ২৮-তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপিত

গুয়াহাটি, ২৫ এপ্রিল (হি.স.) : প্রায় চার দশক ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্য। কিন্তু আজ দিন বদলেছে। যবনিকা ঘটেছে কালো অধ্যায়ের, লঘু উদ্যোগ ভারতী, গুয়াহাটির ২৮-তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সহ-সরকার্যবাহ ড. কৃষ্ণগোপাল।

সংঘের সহ-সরকার্যবাহ ড. কৃষ্ণগোপাল বলেন, অসমে আজ দুরন্তগতিতে উন্নয়ন হচ্ছে। আগে মনে হত, সারা দেশের সকল সমস্যা যেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এসে জড়ো হয়ে। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। জঙ্গিপনার অবসান হয়েছে, রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ হয়েছে, রেল চলাচল বাড়ছে, বাড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। তিনি বলেন, গুয়াহাটি আইআইটি দেশের শীর্ষ পাঁচটি আইআইটি-র মধ্যে অন্যতম। সার্বিক পরিবেশ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। টানা চার দশক, প্রায় ৩৫-৪০ বছর ধরে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ধ্বংসের পথে যাচ্ছিল। উগ্রপন্থীরা উন্নয়ন চায়নি। তবে সেই কালো দিনগুলির অবসান ঘটেছে।

তিনি বলেন, কবে কোথায় পৌঁছাবেন, জানেন না। আগে এসকর্ট নিতেন। শান্তি ছিল না। ঘটত বিস্ফোরণের মতো নাশকতার ঘটনা। এখন এ সবের পরিবর্তন হয়েছে। সমগ্র দেশের অধিকাংশ সবুজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। ড. কৃষ্ণগোপাল বলেন, ঈশ্বর অনেক দিয়েছেন। মানুষ এখানে এখন বিনিয়োগ করতে আসেন। এখন উৎপাদনের প্রকৃত সময়। আমদানি প্রায় বন্ধ, প্রচুর স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সামগ্ৰী রফতানি করা যায়। অনেক প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্য করার দুয়ার খুলেছে। ভালো নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্ৰ ও রাজ্য, দুই সরকারই একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, অমের মানুষ উৎসবপ্রিয়, সৌহার্য্ পূর্ণ, প্রসন্নতার সঙ্গে বসবাস করেন। এখন উন্নয়নের সময়। এখানেই মানুষ কর্মসংস্থান পাবেন। অসমের জনসাধারণের উচিত নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করা আর গোটা দেশের মানুষের উচিত এ কাজে সাহায্য করা। এক কথায় সর্বক্ষেত্রে বিকশিত হোক এই রাজ্য, বলেন কৃষ্ণগোপাল।

তিনি বলেন, আগরতলা থেকে রাজধানী চলবে, বলেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। তাঁর কথা শুনে রেল আধিকারিকরা বলেছিলেন, ওই রুটে মিটারগ্যাজের, সেতুগুলো ছোট, পাহাড় কাটতে হবে। তাঁদের বক্তব্য শুনে সুরেশ প্রভু আধ-ঘণ্টার মধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেন। পরবর্তীতে রাজধানী একসপ্রেস আগরতলা থেকে শুরু হয়। এখানে জাতীয় রাজ্য কমিটির সভা আয়োজন করে একটি নতুন দ্বার খুলে দিয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পপতিরা। সমস্যা আছে, থাকবেও। এগুলো আমাদের একসাথে সমাধান করতে হবে। অসমবাসীর আয় দ্বিগুণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সোম প্রকাশ বলেন, প্রতিষ্ঠানের যা সমস্যা আছে, আমাদের বলুন। আমরা তা পূরণ করার চেষ্টা করব। তবে, আপনাদের স্বনির্ভর হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তরপূর্বের উন্নয়নে কেন্দ্ৰের সমস্ত মন্ত্রীকে প্রতি মাসে অন্তত একবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করছি, ভালো শিল্পনীতি প্রণয়ন হবে।

এদিকে অসমের শিল্পোদ্যোগমন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি বলেন, স্বাধীনতার আগে অসম একটি সমৃদ্ধ রাজ্য ছিল। স্বাধীনতার পর ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়লেও এখন আবার দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। অন্যদিকে, বলদেব ভাই প্রজা তাঁর ভাষণে বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প বাঁচাতে ১৯৯৪ সালের ২৫ এপ্রিল লঘু উদ্যোগ ভারতী গঠিত হয়েছিল। তিনি জানান, ভারতের সব রাজ্যের ৪৫০টি জেলায় ৩২ হাজারের বেশি ইউনিট গঠন করা হয়েছে।

স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে মনোজ লুন্ডিয়া বলেন, আজকের অনুষ্ঠানকে সফল করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। উদ্যোগ সম্মেলন-২০২২-এ মোট ৪২২টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২০টি কেন্দ্রীয় এবং ৯০টি স্টল রাজ্যের। এত বড় কার্যক্রম গুয়াহাটিতে এর আগে কখনও হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের সদস্যরাও আমাদের অনুরোধ মেনে নিয়েছেন এবং তাঁদের স্টল বসিয়ে এই কার্যসূচিকে সফল করতে সহযোগিতা করেছেন।

এই উপলক্ষ্যে লঘু উদ্যোগ ভারতী, গুয়াহাটির সভাপতি বলদেবভাই প্রজা, সাধারণ সম্পাদক ঘনশ্যাম ওঝা, প্রাক্তন সভাপতি ওমপ্রকাশ মিত্তল, মনোজ লুন্ডিয়া, আশিস দেবরা, প্রাক্তন সভাপতি জিতেন্দ্র গুপ্তা, গোবিন্দ লেলে, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকাশ চন্দ্র, ঘনশ্যাম ধনুকা, বিজিৎ, অমিত অরূপ পূজারি, রাজেন কলিতা, হর্ষ আগরওয়ালা, অরুণ সহ অন্যান্য সম্মানিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন বিবেক আগরওয়াল এবং অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেছেন বিকাশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *