BRAKING NEWS

Taslima Nasrin : বাংলাদেশে নির্যাতনের জেরে হিন্দুদের দেশত্যাগ নিয়ে শঙ্কা তসলিমা নাসরিনের

কলকাতা, ১৩ এপ্রিল (হি. স.) : বাংলাদেশে নির্যাতনের জেরে হিন্দুদের দেশত্যাগ নিয়ে বুধবার সামাজিক মাধ্যমে তাঁর শঙ্কা প্রকাশ করলে নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

তিনি লিখেছেন, ”লজ্জা’ লিখেছি তেইশ বছর আগে। এখনও লজ্জার ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি হওয়ার পর তাঁর সৈন্যসামন্ত হিন্দু মন্দিরগুলোয় হামলা চালাচ্ছে। বরগুনা আর বাগেরহাটের মন্দিরে ইতিমধ্যেই ভাংচুর করেছে। কিছু হিন্দু বাড়ি লুঠ করেছে। এরপর হয়তো বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পাবো, ধর্ষণের খবরও পাবো। এরপর যে খবরটা পাবো না, সেটা হলো হিন্দুদের দেশত্যাগ। হিন্দু সংখ্যা কমতে কমতে শূন্যে এসে ঠেকলে হয়তো শুনবো। তখন বিস্মিত হবো না। বিস্মিত হতে হতে এখন আর কোনও কিছুতেই বিস্মিত হই না।“

অপর একটি পোস্টে লিখেছেন, “ঘরবন্দি জীবন আমার কাছে নতুন নয়। মেয়ে হয়ে জন্মেছি এই অপরাধে ইস্কুল কলেজের বাইরে পুরোটা কৈশোর জুড়ে ঘরবন্দি জীবনই তো কাটাতে হয়েছে। যৌবনেই বা কতটুকু আর স্বাধীনতা পেয়েছি। বাইরে যৌন হেনস্থা, অপহরণ, ধর্ষণ ওত পেতে আছে বলে ঘর থেকে বেরোতে পারিনি। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আমার লেখালেখিতে ইসলামের সমালোচনা ছিল বলে মৌলবাদিরা ফাঁসির দাবিতে মিছিল করতো। বইমেলায় শারীরিক আক্রমণ করতো।

ওদিকে একের পর এক ফতোয়াও জারি হলো। মুন্ডু কেটে নিতে পারলে লাখ টাকা উপহার। তখনও বাধ্য হয়েছি ঘরবন্দি জীবন কাটাতে। সরকার একসময় মামলা করলো, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলো। তখনও আত্মগোপন করতে গিয়ে আবারও ঘরবন্দি জীবন। নির্বাসন জীবন শুরু হলো ইউরোপে। সেখানেও নিরাপত্তারক্ষীরা আমাকে ঘরবন্দি জীবন দিয়েছিল।বিদেশ ফেলে যখন ভাষার টানে কলকাতায় ঠাঁই নিয়েছি, সেখানেও একের পর এক ফতোয়া। একসময় সিপিএম সরকার আমাকে রাজ্য ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। কথা শুনিনি বলে আমাকে গৃহবন্দিত্ব উপহার দিল। আহারে সেইসব কষ্টের যন্ত্রণার দিনগুলি! কয়েক মাস ঘরবন্দি করে রাখার পর রাজ্য ছাড়তে শেষ অবধি বাধ্যই করলো। দিল্লিতেও কেন্দ্রীয় সরকার একই কাজ করেছিল, হয় ভারত ছাড়ো নয়তো ঘরবন্দি থাকো, বাইরে বলা হয়েছিল ‘সেইফ হাউজে’আছি। সেখানেও কেটেছে আরো কয়েকটি মাস।

এ কারণেই সম্ভবত একা একা একটি বাড়িতে দিন রাত পড়ে থাকা, বাইরের আলো হাওয়ার স্পর্শ না পাওয়া আমার কাছে খুব কিছু অস্বাভাবিক অসম্ভব নয়। বীন দেয়ার, ডান দ্যাটের মতো। টেনশান তখনও ছিল, এখনও আছে। পরাধীনতার ক্ষোভ ছিল, ফণা তুলে থাকা মৃত্যু ছিল চোখের সামনে। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও অনুভূতিগুলো প্রায় একই। বাইরে বেরোলে ধর্ষকেরা, গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগা পুলিশেরা, মুন্ডু কাটায় আগ্রহী অর্থলোভী ধার্মিকেরা, ফাঁসির দাবিতে চিৎকার করা ধর্মান্ধ, আদর্শচ্যুত দূরদৃষ্টিহীন রাজনীতিক সবাই আমাকে খুন করবে, ঠিক এখন যেমন ইমিউনিটি না থাকা শরীরটি বাগে পেলে করোনাভাইরাস আমাকে গলা টিপে হত্যা করবে।

ভাইরাসকে কি দরজা বন্ধ করে রাখলেই ঠেকানো যায়! ফাঁক ফোকড় দিয়ে কোনওদিন হয়তো ঢুকে যাবে, সাপ যেমন ঢুকে গিয়েছিল লখিন্দরের লোহার ঘরে। তবে যথাসম্ভব সতর্কই থাকতে চাই। চাই কারণ বিশ্বাস করি জীবন একবারই আসে, আর মৃত্যুতেই এই জীবনের সমাপ্তি, তাই এই জীবন বড় মূল্যবান। ধর্ম বিশ্বাসীরা পরকালে বিশ্বাস করে, তাদের কাছে পরকালের জীবনটি মূল্যবান, এই জীবনটির ইতিতে তাই তারা তত কাতর হয় না। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই। এ যাত্রা যদি বেঁচেও যাই, করোনা পরবর্তী পৃথিবী আমাদের আগের পৃথিবীর মতো যদি নাও হয়, তবুও যেন শেষ বিদায়ের আগে অন্তত বন্ধুদের হাত স্পর্শ করার, স্বজনকে আলিংগণ করার স্বাধীনতা পাই।“

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *