Arrested : করিমগঞ্জের ইশানছড়ায় প্রায় ১৮ কোটি টাকার ২.২৭৫ কিলো হেরোইন উদ্ধার, আটক চার

করিমগঞ্জ (অসম), ৮ এপ্রিল (হি.স.) : ড্রাগস-বিরোধী অভিযানে আবারও দৃষ্টান্ত রচনা করেছে অসম পুলিশ। এবার ড্রাগস-বিরোধী অভিযানে দ্বিতীয় দফায় বড়সড় সাফল্য পেয়েছে করিমগঞ্জ পুলিশ। এর আগে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জ জেলার রাতাবাড়ি থানাধীন ভেটারবন্দে প্ৰায় ২৩ কোটি টাকার নেশাজাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছিল। এবার ১৮ কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ হাইলাকান্দি জেলার সীমান্তবর্তী করিমগঞ্জ জেলার রামকৃষ্ণনগর থানাধীন ইশানছড়া এলাকায়।

গতকাল রাতে ইশানছড়ায় পুলিশ ২ কেজি ২৭৫ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে। উদ্ধারকৃত হেরোইনগুলির বাজারমূল্য কমপক্ষে ১৮ কোটি টাকা হবে বলে করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার পদ্মনাভ বরুয়া জানিয়েছেন। মাদক পাচারের অভিযোগে আটক করা হয়েছে অসম গণ পরিষদের করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি হেলাল আহমদ খানের ভাই হুসেন আহমদ খান এবং তাঁর তিন সাঁকরেদ জাকির হুসেন, নুরুল ইসলাম ও সাহিদ আহমদ নামের চার মাদক কারবারিকে। এদের মধ্যে জাকির হুসেন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁর পায়ে গুলি করে আটক করেছে। পুলিশের গুলিতে জখম জাকির বর্তমানে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।


পুলিশ সুপার পদ্মনাভ বরুয়া জানান, মিজোরাম থেকে বহু কোটি টাকা মূল্যের হেরোইন করিমগঞ্জ জেলায় আসছে বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। গোপন ওই খবরের ভিত্তিতে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পার্থপ্রতিম দাস বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রামকৃষ্ণনগর থানাধীন ইশানছড়া এলাকায় ওৎ পেতে বসে থাকেন। সঙ্গে ছিলেন রামকৃষ্ণনগর থানার ওসি দীপজ্যোতি মালাকারও। দিনভর অপেক্ষার পর গভীর রাতে পুলিশ বৃহৎ সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরাম থেকে আগত একটি টাটা সুমোয় তালাশি চালিয়ে ধরা পরে বিপুল পরিমাণের হেরোইনগুলি। গাড়ির সামনের ফেন্ডার (চাকার মাডগার্ডের ওপরের অংশ) সহ বিভিন্ন গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা ছিল ১৭৫টি সাবান কেসের মধ্যে হেরোইন ভরা অসংখ্য কন্টেনার। এগুলি থেকে ২ কেজি ২৭৫ গ্রাম ওজনের হেরোইন উদ্ধার করেন পুলিশের অভিযানকারীরা।


হেরোইনের সঙ্গে সুমোর চার যুব-আরোহীকে তৎক্ষণাৎ আটক করে পুলিশ তাঁদের কব্জায় নিয়ে নেয়। ইত্যবসরে জাকির হুসেন নামের ড্রাগস পাচারকারী পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে জাকিরকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। গুলিটি জাকিরের বা পায়ের কাফে বিদ্ধ হলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ জাকির বর্তমানে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ধৃতদের জেরা চলছে।


রাজ্যে দ্বিতীয় মেয়াদের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেই ড্রাগসের বিরুদ্ধে ‘অল আউট অপারেশন’-এর ডাক দিয়েছিলেন হিমন্তবিশ্ব শর্মা। হিমন্তবিশ্ব ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত বহু কোটি টাকার মাদকদ্রব্য বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি বহু ড্রাগস কারবারিকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে পুলিশের এনকাউন্টারে বেশ কয়েকজন আহত এবং মৃত্যুবরণও করেছে। তবু পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ড্রাগস কারবারের সাম্রাজ্য কায়েম রেখেছে অপরাধ জগতের কতিপয়। কিন্তু বসে নেই পুলিশ প্রশাসন‌ও।


এদিকে সরকারের শরিক দল অগপর করিমগঞ্জ জেলা সভাপতি হেলাল আহমদ খানের ছোট ভাই হুসেন আহমদ খান ড্রাগস কারবারে সঙ্গে জড়িত থাকার খবরে জেলা জুড়ে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা তো কয়েক কদম এগিয়ে বলেন, সরকারের মিত্রজোটের অ্যাডভান্টেজ নিয়ে এক শ্রেণির ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক ব্যক্তি আড়ালে ড্রাগস কারবারের সঙ্গে জড়িত। ড্রাগসমুক্ত অসম গড়তে মুখ্যমন্ত্রী সংকল্প নিয়েছেন। কিন্তু শস্যের মধ্যেই যদি ভূত লুকিয়ে থাকে তা-হলে এই ভূত তাড়ানো কি সম্ভব? প্রয়োজনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গাড়িগুলিও পুলিশি তালাশির আওতায় আনা হোক, সচেতন মহলের দাবি।


এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অসম-নাগাল্যান্ডের সীমান্তবর্তী বোকাজানে ৩২ কোটি টাকার ড্ৰাগস সহ নেশা কারবারের সঙ্গে জড়িত ইসমাইল আলিকে গ্ৰেফতার করিছিল পুলিশ। এর পর যথাক্রমে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মণিপুরে ৯০ কোটি টাকার ব্রাউন সুগার সহ রাজ্য পুলিশের হেড কনস্টেবল মুজিবুর রহমান এবং তার সাঁকরেদ মহম্মদ ফিরোজ, ওই সালের ১৮ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জ জেলার রাতাবাড়ি থানাধীন ভেটারবন্দে প্ৰায় ২৩ কোটি টাকার ২ লক্ষ ৩০ হাজারটি নেশাজাতীয় ইয়াবা ট্যাবলেট সহ চার মাদক কারবারি, ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর কারবি আংলং পুলিশ ১২ কোটি টাকার হেরোইন সহ দুই মাদক পাচারকারী বিমল তাসা এবং সাদ্দাম হুসেনকে জালে তুলেছিল পুলিশ। এছাড়া চলতি ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি অসমের অন্যতম পাহাড়ি জেলা কারবি আংলঙে উদ্ধার হয়েছিল প্রায় ১১ কোটি টাকার হেরোইন। এছাড়া প্রায় প্রতি সপ্তাহে বহু লক্ষ থেকে বহু কোটি টাকার মাদক দ্রব্য উদ্ধার করছে অসম পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *