BRAKING NEWS

Congress : রাজ্যসভা নির্বাচনে পৃথ্বীরাজ শাঠে বিজেপির এজেন্ট হয়ে কাজ করেছেন, বিস্ফোরক কংগ্ৰেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক সিদ্দেক

করিমগঞ্জ (অসম), ৭ এপ্রিল (হি.স.) : রাজ্যসভা নির্বাচনে পৃথ্বীরাজ শাঠে কংগ্রেসের নয়, বিজেপি-র এজেন্ট হয়ে কাজ করেছেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁকে নির্বাচনি এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হলেও, মূলত মহারাষ্ট্র থেকে বিজেপির হয়ে কাজ করবেন বলে ম্যানেজ হয়ে এসেছেন। নিজের গৃহ জেলা করিমগঞ্জে এসে এমন‌ই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সদ্য কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ।


তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগ খণ্ডন করতে খুব শীঘ্রই আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিদ্দেক। শোকজ ছাড়া তাঁকে কীভাবে সরাসরি দল থেকে সাসপেন্ড করা হল? এ নিয়ে‌ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি। ‘গত বিধানসভা নির্বাচনে দলীয় টিকিট প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় নেতা জীতেন্দ্র সিং এবং এই শাঠে আমার কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু দাবি মতো টাকা দেইনি বলে তাঁদের সঙ্গে সে সময় মনোমালিন্য হয়েছিলো। আর এর‌ই প্রতিশোধ নিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমাকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার বিকেলে করিমগঞ্জ আবর্ত ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে একের পর এক কামান দেগেছেন সিদ্দেক।


সিদ্দেক বলেন, রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসি বিধায়কদের ভোট পর্ব শেষ হ‌ওয়ার পর দলের কো-এজেন্ট নুরুল হুদা সংবাদ মাধ্যমের সামনে এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, দলের প্রত্যেক বিধায়কের ভোট প্রার্থী রিপুন বরার পক্ষে পড়েছে। রাইজর দল এবং সিপিএমের বিধায়ক‌ও কংগ্রেস প্রার্থী রিপুন বরার পক্ষে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। আজমলের (এআইইউডিএফ-প্রধান) দলের বিধায়কদের ভোট কংগ্রেস প্রার্থীর পক্ষে পড়লে রিপুন বরার জয় নিশ্চিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী ভোট প্রদানের পর ব্যালট পেপার দলীয় এজেন্টকে দেখাতে হয়। আমিও সে মোতাবেক দলের মনোনীত এজেন্ট এবং কো-এজেন্টকে ব্যালট পেপার দেখিয়েছি। তখন তো কোনও এজেন্ট‌ই আমার ভোট নষ্ট হয়েছে বলে মন্তব্য করেননি।


বলেন, ‘ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি পার্শ্ববর্তী কক্ষে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বহুক্ষণ উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সে সময়‌ও তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ তুলেননি। সংবাদ মাধ্যমের সামনেও কো-এজেন্ট নুরুল হুদা স্বীকার করেছেন, দলের প্রত্যেক বিধায়ক বিরোধী ঐক্যের সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী রিপুন বরাকে ভোট দিয়েছেন। তা-হলে পরবর্তীতে এমন কী ঘটনা ঘটল যে, আমি সংখ্যায় এক লেখার পরিবর্তে ইংরেজি বর্ণমালায় ওয়ান লিখেছি বলে পৃথ্বীরাজ শাঠে অভিযোগ তুললেন! আসলে সবকিছু‌ই পূর্ব পরিকল্পিত ছিল।’


সিদ্দেক আহমেদের আর‌ও অভিযোগ, ‘নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য টিকিট প্রদান থেকে মন্ত্রিত্ব লাভের ক্ষেত্রে কংগ্রেস দলে বিরাট অর্থের লেনদেন সংগঠিত হয়। নির্বাচনে দলীয় টিকিট প্রদানে দুই থেকে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন দিল্লি দিশপুরের দলীয় শীর্ষ নেতারা। এমন-কি মন্ত্রিত্বের জন্য‌ও বিরাট অর্থের দাবি করা হয়ে থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রায় আটটি ভোট কীভাবে বিজেপির পক্ষে চলে যায়,’ পাল্টা সে প্রশ্ন তুলেন সিদ্দেক আহমেদ। তিনি বলেন, এজেন্ট, কো-এজেন্ট দুজনেই বিজেপির সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার মাধ্যমে গোটা ঘটনা সংগঠিত করেছেন এবং নিজেদের আড়াল করতে তাঁকে টার্গেট করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিধায়ক সিদ্দেক।


পৃথ্বীরাজ শাঠের সঙ্গে তাঁর পুরনো বিবাদ এবং টিকিট প্রদানের জন্য তাঁর কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু অনেকে টাকা দিলেও তিনি সে পথে না হেঁটে পাল্টা দিল্লিতে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলীয় টিকিট লাভে সক্ষম হয়েছিলেন বলে জানান সিদ্দেক আহমেদ। তিনি বলেন, শুধু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নয়, ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন হলে মন্ত্রিত্ব প্রদানের নামে অগ্রিম টাকা নেওয়া হয় বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন সিদ্দেক।


নিজের সত্যতা প্রমাণে তিনি লাই-ডিটেক্টরের সামনে বসতেও প্রস্তুত বলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিধায়ক আহমেদ। গোটা ঘটনা নিয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন বলেও জানান সিদ্দেক। এছাড়া কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি ভূপেনকুমার বরার বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে তিনি বলেন, যেদিন থেকে তিনি প্রদেশ কংগ্রেসের দায়িত্ব নিয়েছেন, সেদিন থেকেই কংগ্রেসের পতনের সূচনা হয়। দলের এই সংকটের সময় সকলকে একজোট রাখতে সম্পূর্ণরূপে ব্যার্থ ভূপেন বরা। তাঁর অপরিপক্ব রাজনীতির কারণেই আজ রাজ্যে দলের অস্তিত্ব সংকটের মুখে।


প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি তথা উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের বিরুদ্ধেও কামান দেগে সিদ্দেক আহমেদ বলেন, কম বয়সে দলের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে মাথা ঘুরে গিয়েছে কমলাক্ষের। কার্যনির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি বরাক উপত্যকায় দলের অন্দরমহলে লবিজমের রাজনীতিকে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছেন। তাঁর প্ররোচনাতেই বরাকের কংগ্রেস রাজনীতি হিন্দু-মুসলমানে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দলের ভিতরে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করতে কমলাক্ষ কোনও কসুর বাকি রাখছেন না বলেও অভিযোগ তুলেছেন সিদ্দেক আহমদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *