নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যার নিরসনে নগর সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি যত্নবান হতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ১৪ মার্চ : নাগরিকদের আস্থার প্রতি যথার্থ সম্মান দেখাতে হবে। নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যার নিরসনে নগর সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। গৃহীত পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করাই হোক প্রতিটি নগর সংস্থার অন্যতম লক্ষ্য। আজ নগরউন্নয়ন দপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত বিভিন্ন নগর সংস্থার নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে একদিবসীয় ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এই অনুষ্ঠানে ১৯৭২ থেকে ২০২১ পর্যন্ত নগর উন্নয়ন দপ্তরের সাফল্য পঞ্জীর আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর ২০টি নগর সংস্থার দু’জন করে স্বসহায়ক দলের মহিলা স্বচ্ছতাবন্ধুদের সম্বর্ধনা জানানো হয়। আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আগরতলা পুর নিগম, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েতগুলির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নাগরিক পরিষেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও দ্রুততাই রাজ্য সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। প্রতিটি ক্ষেত্রের বিকাশেই গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে রাজ্য সরকার। ত্রিপুরাকে একটি সমৃদ্ধশালী রাজ্য হিসাবে গড়ে তুলতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে নগর সংস্থাগুলিরও বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন সহায়তা অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সঠিক সময়ের মধ্যে পৌঁছে দিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করা প্রয়োজন। এর অন্যতম শর্ত কার্যপ্রণালী সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন। নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে কিভাবে নির্ধারিত সময়ে মধ্যে জনগণের কল্যাণে গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনা সফলভাবে রূপায়িত করা যায় তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতানুগতি নাগরিক পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি প্রথমেই অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করা প্রয়োজন। নিজ কর্ম নিপুণতা ও নাগরিক জীবনের সাথে জড়িত নাগরিক সমস্যা দূর করতে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন। সমস্ত সংকীর্ণতার উর্দ্ধে থেকে পরিষেবার সম ও সফল বন্টনে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনকল্যাণে গুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে। এই প্রকল্পগুলি সম্পর্কে যথার্থ ধারণা ও কার্যপ্রণালী সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। তার পাশাপাশি নগর এলাকায় পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, আলোর ব্যবস্থা সহ অন্যান্য নাগরিক পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে নবনির্বাচিত সদস্যদের সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়মিত পরিদর্শন করতে হবে৷ সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বড়মাত্রায় রাজ্যের গরিব অংশের মানুষকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও খোঁজ খবর নেন।

এর থেকে প্রমাণিত প্রতিটি প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী কতটা আন্তরিক। আত্মসন্তুষ্টি মুক্ত থেকে জনকল্যাণে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিগণ নির্বাচিত হন। কিন্তু যারা নাগরিক সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে নিরন্তর জনকল্যাণে কাজ করে যান তারা মানুষের মনে স্মরণীয় হয়ে থাকেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নগর উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, নগর পরিষেবার উন্নয়ন শুধুমাত্রই সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একক প্রচেষ্টায় সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তারজন্য প্রয়োজন সর্বাঙ্গীন সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। নগর পরিষেবার উন্নয়নে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার। সেই লক্ষ্য প্রাপ্তির পথে আরও গতি সঞ্চার করতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে নগর সংস্থাগুলিরও। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর বন্টন সহ কেন্দ্র রাজ্য বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল সুবিধাভোগীদের পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের সুফল কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় তারজন্য সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এর সম্পর্কে যথার্থ ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন। মানুষের প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে বর্তমান সরকারের সময়ে নগর উন্নয়নে অগ্রগতি এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। পরিষেবা গ্রহণের জন্য সাধারণ মানুষ প্রতিষ্ঠানের কাছে আসার বদলে বিভিন্ন পরিষেবা তার আগেই মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান রাখেন তিনি। এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, আগরতলা পুর নিগমের কমিশনার শৈলেশ কুমার যাদব প্রমুখ। এছাড়াও সমস্ত নগর সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।