তেলিয়ামুড়া, ২৩ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নাগরিক পরিষেবার উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্য সম্পাদনে রাজ্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি সহ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে গুচ্ছ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে রাজ্যে। আজ তেলিয়ামুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবন ও খোয়াই জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এই বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের মধ্যে যারা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত পরীক্ষায় প্রথম দশে স্থান করে নিয়েছিলেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এদিন সম্মাননা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য ভূমিদান করেছিলেন মুনিপদ জমাতিয়া। এদিনের অনুষ্ঠানে তাঁর পক্ষে প্রপৌত্র কার্তিক জমাতিয়াকে সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। খোয়াই জেলাভিত্তিক বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান মডেলগুলি পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের উদ্ভাবনী ভাবনায় প্রস্তুত বিজ্ঞান মডেল এবং তার কার্যকারিতা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী ও অতিথিদের অবহিত করেন। এই বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি টাকা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছে রাজ্য সরকার। যার ফলশ্রুতিতে রাজ্যের সর্বত্র এর সুফল প্রতিফলিত হচ্ছে। মিশন ১০০ বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের সহায়তায় ১০০টি সিবিএসই পরিচালিত বিদ্যালয় রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। এরফলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেমেয়েরা এর সুফল গ্রহণ করতে পারবে। এই বিদ্যালয়টি সহ মোট ২টি বিদ্যালয় এই তালিকায় রয়েছে। শুধু তাই নয় একলব্য বিদ্যালয়, এনসিইআরটি সিলেবাস সহ শিক্ষাক্ষেত্রে একাধিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার দ্বারা প্রস্তুত আগামী ২৫ বছরের রূপরেখা ভাবী প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ চয়নে অগ্রণী ভূমিকা নেবে। লক্ষ্যপ্রাপ্তির পথে অবিচলতা ও দৃঢ়তা সাফল্য অর্জনের পথকে মসৃণ করে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানীয়জল, হাইওয়ে সহ অন্যান্য সড়ক উন্নয়ন ও সর্বোপরি রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। বিগত সরকারের সময়ে অপরিকল্পিত উন্নয়ন রূপরেখায় অনেকাংশেই প্রকল্প বাস্তবায়নে এনেছিলো শ্লথতা। বর্তমান রাজ্য সরকার এই প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে উন্নয়নমূলক প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের কৃষকদের বিগত দিনে শুধুমাত্রই গরীব বলে আখ্যায়িত করা হতো। কিন্তু বর্তমানে সহায়কমূল্যে ধান ক্রয় সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে কৃষকদের আত্মসম্মান যেমন সুনিশ্চিত হয়েছে তেমনি আত্মনির্ভরতার সঠিক দিশাও খুঁজে পেয়েছেন তারা। এর ফলশ্রুতিতে রাজ্যের কৃষকদের গড় আয় বেড়েছে। সমস্ত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্য সুবিধাভোগীদের কাছে সমস্ত প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুরোনো দিনের কার্যপ্রণালীর সঙ্গে বর্তমান সরকারের কার্যপ্রণালীর তুলনা টানলেই প্রকল্প বাস্তবায়নে দ্রুততা এবং অগ্রগতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা সম্ভব। রেশনিং ব্যবস্থা ই-পিডিএস, ওয়ান কার্ড ওয়ান নেশন, স্বসহায়ক দল নির্ভর মহিলা স্বরোজগার সুনিশ্চিতকরণ, প্রথমবারের মতো ওপেন হার্ট সার্জারি সহ অন্যান্য ইতিবাচক সাফল্য রাজ্য সরকারের প্রতি জনআস্থাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক কল্যাণী রায় বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শিক্ষা সহ প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে। তেলিয়ামুড়ার সার্বিক বিকাশে প্রতিটি দাবির প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে রাজ্য সরকার। যার ফলশ্রুতিতে মোটরস্ট্যান্ড, বিভিন্ন রাস্তা, পানীয়জল সহ মহকুমার বিভিন্ন উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিদ্যালয়ের জন্য ভূমিদান করার জন্য মুনিপদ জমাতিয়া ও তার পরিবারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক অতুল দেববর্মা, বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি জয়দেব দেববর্মা, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা চাঁদনী চন্দ্রন প্রমুখ।