হাইলাকান্দি (অসম), ১৫ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : পুরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অন্তিম দিনে রীতিমতো ঝড় বয়েছে হাইলাকান্দিতে। আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি মোট ৩৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে সর্বাধিক ১৮ জনই নির্দল। ১৫ জন গেরুয়া দলের। দুজন কংগ্রেস, এবং একজন অসম গণ পরিষদ (অগপ)-এর। তবে বিরোধী দল কংগ্রেস শহরের ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র দুটি ওয়ার্ডে সরাসরি দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ‘বিগ ব্রাদার’ বিজেপি-কে রীতিমতো ঘুমে রেখে, কোনও ধরনের আলোচনা না করে অসম গণ পরিষদ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জেলা বিজেপি সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য এবং তাঁর দলকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে।
মঙ্গলবার পুরসভা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ওয়ার্ডের দল ও নির্দলীয় প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ফলে সমর্থকদের ভিড় থাকবে একেবারে স্বাভাবিকভাবেই। তা ভেবে সকাল থেকেই হাইলাকান্দি পুরসভা কার্যালয়ে মোতায়েন করা হয় পুলিশ বাহিনী। অবশ্য কোভিড বিধি মেনে দল ও নির্দলীয় প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিন ১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাধনারানি নাথ। তিনি গত পুরসভায় মহিলা সংরক্ষিত ওই ওয়ার্ডের নির্দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এবার তাঁর ভাইপো পার্থকুমার নাথ এই ওয়ার্ডেই নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সোমবার। আর আজ মঙ্গলবার পিসি সাধনারানি নাথও নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। ২ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পৃথ্বীরাজ শুক্লবৈদ্য। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে এই ওয়ার্ডে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন যুব কংগ্রেস নেতা প্রিতম দাস। ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ঝুমা পাল।
এদিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বাধিক চারজন নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা যথাক্রমে সন্দীপ দাস, রঞ্জন দেব, দেবানন্দ দাস ও মধুজা দে। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মুন্না দেব নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দলীয় মিনা চৌধুরী, কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মিতালী গোস্বামী (ভট্টাচার্য)। মিতালি গোস্বামী (ভট্টাচার্য) কংগ্রেসের শহর ব্লক কমিটির সভাপতি শুভঙ্কর ভট্টাচার্যের সহধর্মিণী।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উমা চৌধুরী। তাঁর স্বামী তপন চৌধুরী গত পুরবোর্ডে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন। এবার ওই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় তপন চৌধুরী চেয়েছিলেন স্ত্রী উমা চৌধুরীকে এই ওয়ার্ডে বিজেপি-র টিকিট পাইয়ে দিতে। এ নিয়ে তিনি বেশ দৌড়ঝাঁপও করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি এই ওয়ার্ডে তপন চৌধুরীর সহধর্মিণী উমা চৌধুরীকে টিকিট দেয়নি। ফলে বিজেপি থেকে পদত্যাগ করে উমা চৌধুরী ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে আসরে অবতীর্ণ হয়েছেন।
অন্যদিকে, সবাইকে চমকে দিয়ে অসম গণ পরিষদ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছে। বিজেপি এবার পুরসভা নির্বাচনে ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি অগপ-র জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এই ওয়ার্ডে কার্যত যুঁতসই প্রার্থী খুঁজে পায়নি আফতাব উদ্দিন লস্কর-জহরলাল চক্রবর্তীর দল অগপ। ফলে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দাঁড় না করিয়ে তাঁরা ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে অগপ-র প্রার্থী হয়েছেন আফিয়া বেগম লস্কর। তবে অগপ-র বরিষ্ঠ নেতা জওহরলাল চক্রবর্তী মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁরা প্রার্থী দিলেও বিজেপি-র সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই হবে।
এই ওয়ার্ডে মিত্রদল অগপ প্রার্থী দেওয়ায় রীতিমতো স্তম্ভিত বিজেপি। দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক স্বপন পাল জানিয়েছেন, আসলে পুরভোটে রাজ্যস্তরে বিজেপি ও অগপ-র মধ্যে সম্ভবত কোনও মিত্রতা হয়নি। তাই হয়তো অগপ প্রার্থী দিয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক স্বপনবাবুর এহেন মন্তব্যকে অস্বীকার করে জেলা বিজেপি সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য রাতে জানিয়েছেন, তাঁরা এ ব্যাপারে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠারেঠুরে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, অগপ-র ভূমিকায় তাঁরা কিছুটা অসন্তুষ্ট। তবে আগামীকাল বুধবার এনিয়ে অগপ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রাজু চক্রবর্তী। তিনি বিজেপি টিকিটের প্ৰবল দাবিদার ছিলেন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডে শদিকুল আলম চৌধুরী, মাসুদ আহমেদ চৌধুরী ও সেলিম উদ্দিন লস্কর, এই তিনজন নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে লাভি নাথ ও দীপঙ্কর শর্মা, এই দুজন নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আজ। লাভি নাথ এই ওয়ার্ডেরই প্রাক্তন পুর সদস্যা। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিশ্বজিৎ দে এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সৌমিত্র দেবনাথ। মঙ্গলবার বিজেপি দলের ১৫ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে গেরুয়া দল কোনও প্রার্থী দেয়নি।
এদিকে, গত সোমবার দল-নির্দল মিলে মোট ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। দু’দিনে মোট ৪৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন হাইলাকান্দির ১৬টি ওয়ার্ডের জন্য।