Chief Minister : ২৫ বছরে নতুন ও বৈবভশালী ত্রিপুরা গড়ে তুলতে লক্ষ্য-২০৪৭ কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

পানিসাগর, ১১ ফেব্রুয়ারি : ত্রিপুরার পূর্ণরাজ্য দিবসের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে আগামী ২৫ বছরের জন্য ‘লক্ষ্য-২০৪৭’ শীর্ষক এক কর্ম পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই কর্ম পরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে এক নতুন ত্রিপুরা ও বৈভবশালী ত্রিপুরা গড়ে তোলা। আজ পানিসাগর মহকুমা শাসকের কার্যালয় ও মহকুমা হাসপাতালের নবনির্মিত ভবনের দ্বারোদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। নবনির্মত দুটি ভবনের দ্বারোদঘাটন উপলক্ষে পানিসাগরের বিবেকানন্দ ময়দানে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আরও বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ২০১৮তে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পানিসাগর মহকুমা শাসকের কার্যালয় এবং মহকুমা হাসপাতাল নির্মাণের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার গৃহ নির্মাণের জন্য গত ১৪ নভেম্বর প্রথম কিস্তির ৪৮ হাজার টাকা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় দলমত নির্বিশেষে গৃহ বিতরণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে অটল জলধারা মিশন ও জলজীবন মিশনের মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যের ৪২ শতাংশ বাড়িতে বিনামূল্যে জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ এলাকার রাস্তার উন্নয়নে রাজ্য সরকার পেভার ব্লকের মাধ্যমে রাস্তা নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে। উত্তর ত্রিপুরা জেলার গ্রামীণ এলাকায় পেভার ব্লক রাস্তা নির্মাণের জন্য ৪১.৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পেভার ব্লক রাস্তা নির্মাণের জন্য ২২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পেভার ব্লকের মাধ্যমে নির্মিত রাস্তা ১০ বছর পর্যন্ত কোন মেরামতি করা ছাড়া অক্ষত থাকতে পারে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার এম এস পি’র মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে ১৯টাকা ৪০ পয়সা দরে ধান ক্রয় করছেন। যেখানে আগে কৃষকরা প্রতি কেজি ধান বিক্রি করে ১১ থেকে ১২ টাকা করে পেতেন। এই ধান ক্রয় করে মিলিং এর মাধ্যমে চাল তৈরী করে রেশনের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সরকারি নায্যমূল্যের মাধ্যমে চাল, চিনি, ডাল, তেল ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সামগ্রী মানুষের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশের ৮০ কোটি মানুষের জন্য বিনামূল্যে মার্চ পর্যন্ত চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য কৃষি প্রধান রাজ্য। ২০১৭-১৮ সালে কৃষকদের মাসিক গড় আয় যেখানে ছিল ৫,৬৮০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে ১১ হাজার ৯৩ টাকা হয়েছে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনায় ত্রিপুরা রাজ্যের ২ লক্ষ ৪৪ হাজার কৃষক বছরে ৬০০০ টাকা করে পাচ্ছেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঠিক দিশায় দেশে কোভিডের টিকা তৈরী ও টিকাকরণ করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্মীরা, আশাকর্মীরা টিকাকরণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মিশন ১০০-বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে রাজ্য সরকার ১০০টি বিদ্যালয়কে সিবিএসই-তে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক বিনয়ভূষণ দাস বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার বক্তব্য গঠিত হওয়ার পর পানিসাগর এলাকার উন্নয়নে এবং মানুষের কাছে বিভিন্ন পরিষেবাগুলিকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত রাখেন উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক নাগেশ কুমার বি। তিনি জানান, পানিসাগর মহকুমা শাসকের কার্যালয় আর ডি ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। এজন্য ব্যয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা। পানিসাগর মহকুমা হাসপাতালের নির্মাণের কাজ পূর্ত দপ্তরের মাধ্যমে করা হয়েছে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের রাজস্ব দপ্তরের প্রধান সচিব পুনিত আগরওয়াল, মহকুমা শাসক রজত পন্থ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি ভবতোষ দাস।