BRAKING NEWS

ত্রিপুরা থেকে সুস্থ হয়ে বাংলাদেশে ফিরলেন ৬ জন, কংশ মামাও মারতে পারেননি ভাগ্নেকে, সর্বস্ব দিয়ে সুস্থ করে তুলেন ত্রিপুরার দম্পতি

আগরতলা, ১৮ নভেম্বর (হি. স.) : বাংলাদেশেও কংশ মামার উপস্থিতি খোজে পাওয়া গেছে। ভাগ্নের একটি কান ও একটি হাত কেটে মৃত ভেবে ভারতের জমিতে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক শাহজাহান মিয়ার মামা। তাঁকে উদ্ধার করেন টিএসআর জওয়ান দিলীপ দাস। শুধু তাই নয়, শাহজাহানের চিকিত্সার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে উঠার পর চিকিত্সকরা বুঝতে পারেন ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তাকে নরসিংগড় স্থিত মডার্ন সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে চিকিত্সার জন্য পাঠানো হয়েছিল। সুস্থ হয়ে উঠার পর তাঁকে আজ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পড়শী দেশের অবুঝ একটি ছেলেকে নির্ঘাত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনে পরিবারের কাছে পৌছে দেওয়ার আনন্দের সাথে আবেগও ধরে রাখতে পারেননি ওই টিএসআর জওয়ান ও তাঁর স্ত্রী প্রাক্তন সিআরপিএফ জওয়ান জ্যোত্স্না দেব। শাহজাহানকে উদ্ধার থেকে শুরু করে সুস্থ হয়ে উঠা পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তাঁদেরকে মায়ার বাধনে জড়িয়ে ফেলেছিল। তাই, সমস্ত ঘটনা বলার সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারছিলেন না জ্যোত্স্না দেব। মনুষ্যত্ব হয়তো আজ এভাবেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। আজ শাহজাহান সহ ত্রিপুরায় আশ্রিত ৬ জন বাংলাদেশী নাগরিক দেশে ফিরে গেছেন। তাঁরা সকলেই এপাড়ে ভুলবসত এসেছেন। কারণ, সকলেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ত্রিপুরায় চিকিত্সায় তাঁরা সুস্থ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আল্পনা খাতুন দশ বছর পর দেশে ফিরে যাচ্ছেন।


বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন বলেন, আগরতলাস্থিত মডার্ণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকা ছয় জন বাংলাদেশী নাগরিককে আজ সকালে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ওই বাংলাদেশী নাগরিকগণ মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় বিগত কয়েক বছরের বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্তভাবে ত্রিপুরার আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক আটক হয় এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় মডার্ণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁদের পরিস্থিতির উন্নতি এবং হাসপাতাল কর্তৃক প্রত্যাবাসনে উপযুক্ত ঘোষণার পর বাংলাদেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁদের নাগরিকত্ব যাচাই এবং ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁদেরকে আগরতলা-আখাউড়া চেকপোষ্টের মাধ্যমে নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।


উক্ত প্রত্যাবাসনকালে অন্যান্যদের মধ্যে জিরো পয়েন্টে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, প্রথম সচিব মোঃ রেজাউল হক চৌধুরী, প্রথম সচিব এস. এম. আসাদুজ্জামান এবং আগরতলা আইসিপি’র অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। বাংলাদেশ অংশে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার, আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রসুল আহমেদ নিজামী, আখাউড়া চেকপোষ্টের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মোঃ আব্দুল হামিদ সহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ। এছাড়া ছিলেন মডার্ণ সাইক্রিয়াটিক হাসপাতালের চিকিত্সক ডা: মনিকা দেব্বর্মা।
আজ বাংলাদেশে শাহজাহান ছাড়াও ফিরে গেছেন জিয়ারুল ইসলাম, মোসা: হানিফা আক্তার, আল্পনা খাতুন, রীনা আক্তার এবং মানিক মিয়া। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর পরিবারের সাথে মিলিত হওয়ার এই মুহুর্তে তৈরী হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। পরিবারের সদস্যরা তাদের হারিয়ে যাওয়া আপনজনকে পুনরায় ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তাঁরা এই সফল প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন সহ সকলকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *