নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ নভেম্বর৷৷ রাজ্যের সর্বত্রই নেশা সামগ্রীর রমরমা বাণিজ্য চলছে৷ বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেশার বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযানে নামে পুলিশ৷ কিন্তু, পৌণে চার বছরেই নেশা বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স যেন ফিকে হয়ে এসেছে৷ নানা জায়গায় নেশা সামগ্রী বিকিকিনি চলছে খোল্লামখুল্লা৷ পুলিশের কাছে খবর থাকলেও অভিযানের কোন উদ্যোগ নেই৷ তাই পুলিশের উপর আস্থা হাড়িয়ে বাড়ির ছেলেমেয়ের রক্ষার তাগিতে মাঠে নামছেন অভিভাবকরা৷ সাথে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থা৷
স্থানীয়দের তৎপরতায় আটক হলো ড্রাগস বিক্রেতা৷ ঘটনার এয়ারপোর্ট থানাধীন পটুনগর এলাকায়৷ অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ড্রাগস৷ অন্যদিকে রড চুরির সাথে জড়িত অভিযুক্ত নিজে স্বীকার করেছে রড চুরির ঘটনা৷দীর্ঘদিন যাবৎ পটুনগর এলাকায় ড্রাগসের নেশা জর্জরিত যুবসমাজ৷ এই ড্রাগসের নেশাকে কেন্দ্র করে যেমনি দিশেহারা অভিভাবক এমনি দুশ্চিন্তা এলাকার সচেতন মানুষেরা৷ অন্যদিকে ড্রাগস গ্রহণকারীরা পয়সার যোগান করতে বিভিন্ন মন্দিরের ঘন্টা,দান সামগ্রী, দান বাক্স নিয়মিত চুরি করছে বলে অভিযোগ৷ পটুনগর এলাকার পল্লী উন্নয়ন সংঘ ক্লাবের সদস্যরা বেশ কয়েকদিন যাবৎ এই ড্রাগস বিক্রেতাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলেন৷
বৃহস্পতিবার রাতেও বেশকিছু মন্দিরে ঘটে চুরির ঘটনা৷ স্থানীয়দের তৎপরতায় শুক্রবার আটক করা হয় ড্রাগস গ্রহণকারী ঝণ্টু দেবনাথ ও রজত মুখার্জি নামে দুই যুবককে৷ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানায় পটুনগর এলাকার রজত চৌহান তাদের কাছে ড্রাগস গুলো বিক্রি করে৷ পরবর্তী সময়ে রজতকেও আটক করে স্থানীয় জনতা৷ তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু ড্রাগসের কৌটা৷
এছাড়া এলাকায় চুরির ঘটনার সাথে জড়িত তাপস দেবনাথ নামে অপর অভিযুক্তকে আটক করে এলাকার মানুষ৷ এলাকার বিভিন্ন চুরি সময় ও স্থানীয় এক বাড়ি থেকে রড চুরির ঘটনা স্বীকার করে তাপস৷ সে জানায় তার অপর সহযোগী প্রসেনজিৎ দেবনাথের সাথে মিলে এই চুরির ঘটনাগুলো সংঘটিত করে৷ অবৈধ কাজের সাথে জড়িত দুই দলের অভিযুক্তদের আটক করে এয়ারপোর্ট থানায় খবর দেয় স্থানীয়রা৷ ঘটনাস্থলে আসে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ৷ কিন্তু অভিযুক্তদের নেওয়ার সময় স্থানীয়রা পুলিশকর্মীদের সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা আসার জন্য ১০ মিনিট অপেক্ষা করার অনুরোধ করেন৷ এতেই গোসা হয়ে পুলিশ বাবুরা অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে ফেলে চলে যান বলে স্থানীয়দের অভিযোগ৷
স্থানীয়রা জানায় সংবাদমাধ্যমের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলতেই রেগে যায় পুলিশ বাবুরা৷ বললেন সংবাদমাধ্যমের কি প্রয়োজন৷ শেষে এলাকাবাসীরা অভিযুক্তদের আদালতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে যায় এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ৷ প্রশ্ণ উঠছে সংবাদমাধ্যম ঘটনাস্থলে এলে এমন কি ক্ষতি হয়ে যেতে পুলিশ বাবুর? যদিও পরবর্তী সময়ে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ পুনরায় এসে নিয়ে যায় অভিযুক্তদের৷ এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে৷ স্থানীয়দের দাবি এই নেশা কারবারিদের এবং চুরির ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করোক পুলিশ৷
নেশার আখড়া স্থলে সমবেত হয়ে গ্রামবাসীরা ধাওয়া করলো৷ গ্রামবাসীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেল নেশাখোর যুবকরা৷ ঘটনা চড়িলাম পুরান বাজার গবাদি পশুর বাজার সংলগ্ণ রাঙ্গাপানিয়া নদীর উপর ব্রিজের নিচে৷ এই ব্রিজ উত্তর চড়িলাম এবং দক্ষিণ চড়িলাম গ্রাম পঞ্চায়েতকে যুক্ত করেছে৷ ব্রিজের নিচে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল নেশার আড্ডা৷ বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতি যুবকরা এই ব্রিজের নিচে বসে নেশার ট্যাবলেট থেকে শুরু করে ফেনসিডিল ,ড্রাগস, কোরেক্স সহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করত৷ নিরব স্থান৷ চতুর্দিকে জঙ্গল৷ একেবারে গুহার মত ব্রিজের নিচের স্থানটি৷ সব সময় নির্জন থাকে৷ যার ফলে নেশাখোর যুবকরা এই স্থানটিকে তাদের আড্ডাস্থল হিসেবে বেছে নেয়৷ এলাকাবাসী এতদিন জানলেও ভয়ে মুখ খুলেনি৷
সবচেয়ে বেশি পাহাড়ি এলাকার উপজাতি যুবকরা এই স্থানে এসে নির্জনে বসে ট্যাবলেট সেবন করে এবং ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে শরীরের ড্রাগস পুশ করে৷ উপজাতি যুবকরা বিশালগড় মহকুমার বিভিন্ন স্থান থেকে এসমস্ত নেশার ট্যাবলেট এবং সিরিঞ্জ সংগ্রহ করে পার্বত্য এলাকায় যাওয়ার পথে রাঙ্গাপানিয়া ব্রিজের নিচে বসে সিরিজ দিয়ে ড্রাগ পুশ করে৷ তারপরেই ব্রিজের নিচে শুয়ে থাকে৷ নেশা কেটে গেলে তারপর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷ অনেক সময় নেশা খেয়ে রাঙ্গাপানি নদীতেও পড়ে থাকে৷ অভিভাবকরা দিশেহারা এই নেশার জ্বালায়৷ প্রতিষ্ঠা এবং দিশাহীন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কিভাবে নেশার ট্যাবলেট থেকে ফিরিয়ে আনবে৷ যতই চেষ্টা করছে অবিভাবকরা ততই উপজাতি যুবকরা নেশার সাগরে ডুব দিচ্ছে৷
পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান করে৷ তারপর আবার বন্ধ হয়ে যায়৷ দুই যুবক তখন শরীরে ড্রাগ পুশ করছিল তখন এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে তাদের ধাওয়া করে৷ একজন পালিয়ে যায়৷ আরেকজন যুবককে ধরে ফেলে গ্রামবাসী৷ সেই যুবক বলেছে সেই সমস্ত নেশাজাতীয় দ্রব্য গুলো বিশালগড় কোন এক ব্যক্তি থেকে সংগ্রহ করে আনে৷ সকাল দুপুর ,রাত এই ব্রিজের নিচে উপজাতি যুবকরা নেশার আসর বসাতো৷ শেষপর্যন্ত আজ গ্রামবাসী তাদের ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যায়৷ গ্রামবাসীরা জানিয়েছে দিন দিন পার্বত্য এলাকার যুবকরা এবং সমতলের ও কিছু যুবক নেশার সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে৷ এলাকাবাসী বলেছে এই নেশাজাতীয় দ্রব্য গুলো আসছে কোথা থেকে সেগুলি পুলিশের ভালোভাবে তদন্ত করা উচিত৷ না হলে এমন একদিন আসবে শুধু উপজাতি এলাকা নয় সমতল এলাকার সমস্ত যুবক ও নেশার সমুদ্রে তলিয়ে যাবে৷ দিন দিন নেশার করালগ্রাসে শহর থেকে গ্রাম গ্রাম থেকে পাহাড় ডুবে যাচ্ছে৷ কিন্তু পুলিশ নীরব দর্শক বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ৷