নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ আগস্ট ।। চাপের রাজনীতির পাল্টা হিসেবে কৌশলী এবং সাহসী চাল দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার। কারণ, তিন জনকে মন্ত্রিসভায় ঠাই দিয়ে বিদ্রোহী শিবিরেই আঘাত করলেন তিনি। আগামীকাল তাই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে নতুন তিন মুখ শপথ নিতে চলেছেন। তাতে অবশেষে জল্পনার অবসান হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের সাকুল্যে দেড় বছর বাকি থাকতেই কপাল খুলল রামপ্রসাদ পাল, সুশান্ত চৌধুরী এবং ভগবান দাসের। আগামীকাল দুপুর সাড়ে তিনটায় ওই তিনজন নতুন মন্ত্রী শপথ নেবেন। তবুও একজন মন্ত্রীর আসন খালি রয়ে যাচ্ছে।
ত্রিপুরায় বিধানসভা যতই এগিয়ে আসছে বিজেপিতে চাপ ও অস্বস্তি ততটাই বাড়ছে। একদিকে তৃণমূলের আস্ফালন, অন্যদিকে বিদ্রোহী শিবিরের কৌশলী চাল, উভয়ের গ্যাড়াকলে সাংগঠনিক মন্থনে ছুটে এসেছেন চার জন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে বিদ্রোহীদের রাগ মোচন, শক্ত হাতেই ব্যবস্থা করবে তাঁরা। বিজেপি রাজ্য প্রভারী সাংসদ বিনোদ সোনকর আজ সাফ জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই চমক দেখবে ত্রিপুরাবাসী। অপেক্ষা শুধুই কয়েক মুহুর্তের।
আজ বিজেপি সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সাইকিয়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক সম্পাদক সংগঠন অজয় জাম্বুয়াল, রাজ্য প্রভারী বিনোদ সোনকর এবং ত্রিপুরা ও অসমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সংগঠন ফনিন্দ্র নাথ শর্মা রাজ্যে এসেছেন। তাঁরা টানা ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে থাকবেন। এদিন বিমান বন্দরে দিলীপ বাবু বলেন, সংগঠনের নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিতে তিনি এসেছেন। কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। শীঘ্রই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।
এদিন বিজেপি রাজ্য প্রভারী বিনোদ সোনকর বলেন, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ খুব শীঘ্রই হবে। কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। সমস্ত কিছুই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। শুধুই ঘোষণার বাকি আছে। তিনি আজ সাফ জানিয়েছেন, ত্রিপুরা প্রদেশ সভাপতি বদলের খবর সম্পুর্ন গুজব। রাজ্যে সভাপতি বদল হচ্ছে না এবং প্রদেশ সভাপতি ডা: মানিক সাহা পদত্যাগ করছেন না।
এদিকে, আজ রাজ্যে এসেই চার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিজেপি প্রদেশ পদাধিকারী, মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিধায়কদের সাথে বৈঠক করেছেন। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ এদিন বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন। কিন্ত অল্প সময় থেকেই তিনি বেরিয়ে যান। তাতে, দলে অন্তর্কোন্দল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনেই প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। অবশ্য, বিদ্রোহী শিবিরের অন্য বিধায়করা এদিন বৈঠক সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত ছিলেন।
আজ বৈঠক শেষে দিলীপ সাইকিয়া বলেন, বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আজ আলোচনা হয়েছে। তাতে, আগামীদিনে কাজকর্মের রূপরেখা স্থির করা হয়েছে। সাথে তিনি দাবি করেন, সকলেই একজোট হয়ে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধিতে কাজ করব। তবে সুদীপ বর্মনকে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, অনুমতি নিয়েই তিনি বৈঠক ছেড়ে গিয়েছেন। তাছাড়া তিনি বিজেপির ছাতার তলেই রয়েছেন। এদিন বৈঠক শেষে বিনোদ সোনকর জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভায় সম্প্রসারণ শীঘ্রই ঘোষণা হবে। কিন্ত, কাদের মন্ত্রিসভায় নেওয়া হবে তা স্পষ্ট বলেননি তিনি।
অবশ্য, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ নিয়ে কৌশলী এবং সাহসী চাল দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। কারণ, দলের একনিষ্ঠ কর্মী বিধায়কদের মন্ত্রিসভায় সুযোগ দেওয়ার বদলে বিদ্রোহী শিবিরে ফাটল ধরানোকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে রামপ্রসাদ পাল এবং সুশান্ত চৌধুরীর মন্ত্রিসভায় ঠাই দিয়ে বিদ্রোহী শিবিরে সামান্য হলেও ফাটল ধরাতে পারবেন তিনি, এমনটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

